বাঁ থেকে : নিহত তুলা মিয়া, তোফাজ্জল হোসেন ও ফয়সাল : সংগৃহীত –
রাজধানীর মগবাজার দিলু রোডে বিয়ের আসরে কনের বাবাকে কুপিয়ে হত্যা করেছে এক যুবক। এ সময় যুবকের ছুরিকাঘাতে আহত হয়েছেন কনের মা। এ ঘটনায় স্থানীয় লোকজন সজীব আহমেদ রকি নামে ওই যুবককে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে এ ঘটনা ঘটে। কনের বাবার নাম তুলা মিয়া (৫৫)। ছুরিকাঘাতে আহত মায়ের নাম ফিরোজা বেগম। তিনি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। এ দিকে নারায়ণগঞ্জে দু’জনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, অভিযুক্ত সজীবের বাবার নাম আব্দুল বারেক। বাড়ি কুমিল্লার দাউদকান্দি থানার পাঁচগাছিয়া গ্রামে। তিনি দিলু রোডের বাটার গলির এক মেসে থাকতেন। কাজ করতেন গ্যারেজে। হাতিরঝিল থানার ওসি আবদুর রশিদ জানান, বিয়ের আসরে কনের বাবা-মাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপায় সজীব। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে স্থানীয় ইনসাফ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান বাবা তুলা মিয়া। পরে মাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেয়া হয়। ঘাতক সজীবকে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছেন স্থানীয়রা। স্থানীয় সূত্র জানায়, প্রিয়াংকা হাউজিংয়ের পাশে চার-পাঁচটা টিনশেড বাড়ি রয়েছে। তার একটিতে সপরিবারে থাকতেন তুলা মিয়া। তিনি এসব বাড়িঘর দেখাশোনা করতেন। ওই বাড়ির বাসিন্দারা জানান, যে মেয়েটির বিয়ে হওয়ার কথা ছিল, সে ফিরোজার আগের ঘরের সন্তান। প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, বেলা পৌনে ১টায় প্রিয়াংকা কমিউনিটি সেন্টারের দোতলায় কনেকে সাজানো হচ্ছিল। সে সময় সজীব আসে। ভেতরে ঢুকেই সে রান্নাঘরে তুলা মিয়াকে দেখতে পায়। তুলা মিয়া তখন সজীবকে বলেন, তুমি এখানে কেন? কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে তুলা মিয়াকে সজীব তার সাথে থাকা ছুরি বের করে আঘাত করে। তার চিৎকারে স্ত্রী ফিরোজা বেগম এগিয়ে আসেন। তখন সজীব ফিরোজাকেও ছুরিকাঘাত করে। এরই মধ্যে লোকজন এগিয়ে আসে। তারা সজীবকে গণপিটুনি দেয়। পরে পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয় তাকে। পারভীন সুলতানা নামে এক মহিলা জানান, ঘটনার সময় কনেকে তিনি কমিউনিটি সেন্টারের দ্বিতীয় তলায় মেকআপ করাচ্ছিলেন। চিৎকার শুনে তিনি ভেতর থেকে দরজা লাগিয়ে দেন। তিনি বলেন, সজীব ঝামেলা করতে পারে এ কথা কনের মা ফিরোজা তাকে আগেই বলেছিলেন। পরে যখন তিনি দরজা খোলেন, তখন দেখতে পান আহত তুলা মিয়া ও ফিরোজাকে হাসপাতালে নেয়া হচ্ছে।
ওসি মো: আবদুর রশিদ বলেন, এটা হতে পারে একপক্ষীয় ভালোবাসা। সজীব মেয়েটিকে বিয়ে করতে চাইতো। তবে মেয়ের পরিবারের মত ছিল না। মেয়েটির বিয়ে হচ্ছে খবর পেয়ে সজীব এসে হামলা চালায়। সজীব পুলিশকে জানায়, ওই কনের সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। বিয়ে বন্ধ করতেই সে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। সজীবকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এ ঘটনায় হাতিরঝিল থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানান তিনি।
নারায়ণগঞ্জে দু’জনকে পিটিয়ে হত্যা
নারায়ণগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, নারায়ণগঞ্জ শহরের পৃথক স্থানে দু’জনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। গতকাল দুপুরে চাষাঢ়া এলাকায় কোকাকোলার বোতল দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয় ভ্যানচালক তোফাজ্জল হোসেনকে। বুধবার রাতে খানপুর এলাকায় বোনের প্রেমিক ফয়সালকে হত্যা করে ভাই ও তার সহযোগীরা। পুলিশ ফয়সাল হত্যার ঘটনায় পাঁচজন এবং তোফাজ্জল হোসেন হত্যায় একজনকে গ্রেফতার করেছে।
জানা গেছে, গতকাল দুপুরে চাষাঢ়া বালুুরমাঠ এলাকায় তুচ্ছ ঘটনায় কোকাকোলার বোতল দিয়ে পিটিয়ে তোফাজ্জল হোসেন (৫৫) নামে এক ভ্যানচালককে হত্যা করা হয়েছে। বেলা ১২টায় চাষাঢ়া বালুরমাঠ এলাকার মেসার্স রাজা স্টিল হাউজ নামে রডের দোকানে ওই ঘটনা ঘটে। নিহত তোফাজ্জল হোসেন শহরের খানপুর বৌবাজার এলাকার মরহুম সোলেমান চৌকিদারের ছেলে। তিনি দ্য জামাল অ্যান্ড কোম্পানির পিকআপ ভ্যানচালক।
প্রত্যক্ষদর্শী জামাল অ্যান্ড কোম্পানির বিক্রয়কর্মী মো: সৌরভ জানান, কোকাকোলা, স্প্রাইটসহ বিভিন্ন পানীয় চাষাঢ়া বালুরমাঠ এলাকায় পৌঁছে দিতে গেলে রড বিক্রেতা শাহজাহান মিয়া একটি কোক চায়। ওই সময় গাড়ি থেকে চালক তোফাজ্জল হোসেন একটি কোকের বোতল শাহজাহানকে ছুড়ে দেয়। শাহজাহান মিয়া সেটি ধরতে না পারায় বোতলটি পাশের দোকানদার সুমন মিয়ার শরীরে গিয়ে লাগে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সুমন তোফাজ্জল হোসেনকে কোকের বোতল দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে ৩০০ শয্যা হাসপাতালে নিলে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) গোলাম মোস্তফা জানান, কোকের বোতল শরীরে লাগার মতো তুচ্ছ ঘটনায় তোফাজ্জল হোসেনকে কোকের বোতল দিয়ে মারধর করে সুমন। ধারণা করা যাচ্ছে, কোকের বোতল দিয়ে মারধরের কারণে তোফাজ্জল হোসেন মারা যায়। তবে ময়নাতদন্তের পর মৃত্যুর সঠিক কারণ বলা যাবে। ঘটনার পর সুমন পালিয়ে গেছে। তাকে গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত চলছে। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শাহজাহানকে আটক করা হয়েছে।
এ দিকে শহরের খানপুরে বুধবার রাত ৯টায় প্রেমিকার ডাকে তার বাসায় এসে প্রেমিক ফয়সাল হোসেন (১৮) প্রাণ যায়। এ হত্যার অভিযোগে পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় রাতেই সদর থানায় নিহতের বাবা বাদি হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। গ্রেফতারকৃতরা হলোÑ প্রেমিকার বড় ভাই মো: আসিফ (২০), সাকিব (১৫), মিলন (১৮), সানজিল (১৭) ও সায়েম (১৮)। নিহত ফয়সাল হোসেন চৌধুরী বাড়ির এনায়েতনগরের নুরুজ্জামান হোসেনের ছেলে। নিহত ফয়সাল টিভি ফ্রিজের মেকানিক। মামলা ও পরিবার সূত্রে জানা যায়, বরফকল এলাকায় সামিরা নামে এক মেয়ের সাথে ফয়সালের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সামিরার একটি নষ্ট ফোন ফয়সালকে মেরামত করতে দিয়েছিল সামিরার ভাই। সেই ফোনটি ফেরত দেয়ার জন্য সামিরার বড় ভাই আসিফ ফয়সালকে বাসায় ডাকে।
ফোন দিয়ে বের হওয়ার সময় আসিফ তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে তর্কাতর্কি শুরু হলে আসিফ তাদের বন্ধুদের ডেকে এনে লাঠিসোটা নিয়ে ফয়সালকে মারধর করে। এতে গুরুতর আহত হয় ফয়সাল। পরে তাকে খানপুর ৩০০ শয্যা হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
পরিবারের অভিযোগ, এ ঘটনার আগে থেকেই আসিফ তার বোনের সাথে সম্পর্ক নিয়ে ফয়সালকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে আসছিল। নিহতের বড় ভাই সজিব হোসেন জানান, বুধবার বিকেল ৩টা নাগাদ প্রেমিকা সামিয়াকে দিয়ে ফয়সালকে বাড়িতে ডেকে নেন সামিয়ার বড় ভাই আসিফ। এ সময় ফয়সালকে আসিফ তার বোনের মোবাইল ফোনটি ফেরত দিতে বলে। এ ফোনটি দেয়ার জন্যই ফয়সাল বিকেলে বের হয়েছিল। পরে রাতে জানতে পারি ওকে ওরা মেরে ফেলেছে। সদর মডেল থানার ওসি আসাদুজ্জামান জানান, ফয়সালের সাথে সামিরা নামে একটি মেয়ের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। মেয়ের ঘরে তাকে দেখতে পেয়ে মেয়ের ভাই তার বন্ধুদের ডেকে আনে এবং ফয়সালকে মারধর করে। এতে ফয়সালের মৃত্যু ঘটে। এ ঘটনায় মেয়ের ভাই ও তার বন্ধুসহ পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে।
ছেলের ইটের আঘাতে বাবার মৃত্যু
খুলনা ব্যুরো জানায়, খুলনায় ছেলের ইটের আঘাতে বাবা ওবায়দুর রহমান (৬৫) নিহত হয়েছেন। বাবার ধারালো দায়ের কোপে মারাত্মক জখম হয় ছেলে নাহিদ (১৪)। বুধবার রাতে নগরীর খালিশপুর থানার রমজানের মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আহত ওবায়দুর রহমান গতকাল ভোরে বাড়িতে মারা যান। খুলনা মহানগর পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) সোনালী সেন জানান, বুধবার রাতে ওবায়দুর রহমানের সাথে তার ছেলে নাহিদের বাগি¦তণ্ডা হয়। একপর্যায়ে ওবায়দুর রহমান দা দিয়ে নাহিদকে কোপায়। এ সময় নাহিদও ইট দিয়ে তার বাবার মাথায় আঘাত করে। নাহিদের মাথায় সাতটি সেলাই লেগেছে। চিকিৎসা নিয়ে দু’জনই বুধবার রাতে বাড়ি ফিরে যায়। এরপর বৃহস্পতিবার ভোরে ওবায়দুর রহমান মারা যান।
Leave a Reply