প্রিয়জনের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে ঢাকা ছাড়ছে ঘরমুখো মানুষ। বাসে যাত্রীর চাপ কম হলেও ঘরমুখো মানুষের ভিড় ট্রেনে। গতকাল শুক্রবার ঈদযাত্রার প্রথমদিন ট্রেনে সিডিউল বিপর্যয়ে যাত্রীদের ভোগান্তি পৌঁছে চরমে। তবে, গাবতলী বাস টার্মিনালে তেমন ভিড় ছিল না। এখনও স্বাভাবিক দিনের মতোই যাত্রী হচ্ছে। আসনও খালি যাচ্ছে। তবে এবার সড়ক পথে যাত্রা হতে পারে কিছুটা স্বস্তিদায়ক।
কমলাপুরে দেখা গেছে, নির্ধারিত সময়ের চেয়ে কয়েকটি ট্রেন দেরিতে ছাড়লেও যাত্রীদের তেমন ছিল না ভিড়।
গত ২২ মে যারা দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কেটেছেন তারা গতকাল ট্রেনযোগে ঢাকা ছেড়েছেন। ভোগান্তির ধারাবাহিকতায় ঈদ যাত্রার প্রথম দিনে কমলাপুরে প্রতিটি মানুষ কাঙ্ক্ষিত ট্রেনের অপেক্ষায় দীর্ঘক্ষণ থেকেছে। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে কাঙ্ক্ষিত ট্রেনের দেখা মিলেনি।
কমলাপুর স্টেশন থেকে সকাল ৯টায় রংপুর এক্সপ্রেস ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও তা দুপুর ১২টা পর্যন্ত স্টেশনে এসে পৌঁছায়নি। স্টেশনে ট্রেনের তথ্যের ডিসপ্লেতে ট্রেনটি ছাড়ার সম্ভব্য সময় দেয়া হয়েছে বেলা ২টা ১০ মিনিট। কিন্তু সে সময়েও ট্রেনটি ছাড়তে পারবে কি-না তা নিয়ে সংশ্লিষ্টরা সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।
এছাড়া কমলাপুর থেকে রাজশাহীগামী ধূমকেতু এক্সপ্রেস ভোর ৬টায় ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলে তা দুই ঘণ্টা দেরিতে ছাড়ে। চট্টগ্রামগামী সোনার বাংলা এক্সপ্রেস সকাল ৭টা ৪৫ মিনিটে ছাড়ার নির্ধারিত সময় থাকলে ছেড়েছে সকাল সোয়া ৮টায়। সিলেটগামী পারাবত এক্সপ্রেস সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে ছাড়ার সময় থাকলেও ছেড়ে যায় সাড়ে ৭টায়। সকাল ৮টার চিলাহাটিগামী নীলসাগর এক্সপ্রেস আড়াই ঘণ্টা দেরি করে সকাল সাড়ে ১০টায় ছেড়ে গেছে।
এদিকে নির্দিষ্ট সময়ে ট্রেন ছাড়তে না পারায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন যাত্রীরা। সকাল ৯টায় কমলাপুর ছাড়বে রংপুর এক্সপ্রেস। তাই নির্ধারিত সময়ের আগেই বৃদ্ধা মা, স্ত্রী আর দুই সন্তনকে নিয়ে স্টেশনে হজির হন শিহাবুল ইসলাম নামের এক বেসরকারি চাকরিজীবী। গত ২২ মে সাহরী খেয়ে ভোর ৫টায় কমলাপুরে রংপুর এক্সপ্রেসের টিকিটের জন্য টিকিটের লাইনে দাঁড়িয়েছেলন তিনি। টিকিট পেতে তাকে অপেক্ষা করতে হয়েছিল প্রায় ৮ ঘণ্টা। যদিও এসি টিকিট প্রত্যাশা ছিল, কিন্তু তা না পেয়ে সাধারণ টিকিট নেন তিনি। এত ভোগান্তি সহ্য করে টিকিট কাটার পর যাত্রার দিন (৩১ মে) যখন ৫ ঘণ্টা বিলম্বে ছাড়ার বিষয়টি জানতে পারেন তখন নিজের ওপর ক্ষোভ ঝাড়েন তিনি।
ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আজকের এ টিকিটের জন্য পুরো ৮ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেছি। ট্রেনের টিকিটটা খুবই জরুরি ছিল তাই শত ভোগান্তি উপেক্ষা করে টিকিট কেটেছি। কিন্তু গতকাল এসে দেখলাম ট্রেন ৫ ঘণ্টা বা তারচেয়েও বেশি বিলম্বে ছাড়বে, তখন এতটাই শক খেয়েছি যা বলার মতো না। রোজা রেখে বৃদ্ধা মা, স্ত্রী, ছোট ছোট সন্তান নিয়ে এত দীর্ঘ সময় কীভাবে অপেক্ষা করবো? আমাদের মতো হাজার হাজার মানুষ স্টেশনে এমন ভোগান্তি পোহাচ্ছে।
একই ট্রেনের যাত্রী সাব্বির আহমেদ বলেন, ঈদ আসলেই এমন ভোগান্তি পোহাতে হয়। এ সমস্যা সমাধানে কার্যকর কোনো সমাধান এখনও নেয়া হলো না। টিকিটের ভোগান্তি দূর করতে এবার অ্যাপ চালু হলো, কিন্তু দুর্ভাগ্য সাধারণ মানুষ ঠিকমতো এটার সুবিধা নিতে পারল না। একবার ১২/১৪ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কাটবো, আবার ঈদ যাত্রার দিনে ৫/৭ ঘণ্টা ট্রেন বিলম্ব থাকবে- বিষয়গুলো একজন সাধারণ যাত্রীর পক্ষে কী প্রতিবার সহ্য করা সম্ভব? ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয়ের মাধ্যেমে এবার ঈদযাত্রা শুরু হলো। এরমধ্যে রংপুর এক্সপ্রেস আবার ৫/৭ ঘণ্টা দেরিতে ছাড়বে। এসব ভোগান্তি আর কত দিন সহ্য করতে হবে?
চিলাহাটিগামী নীলসাগর এক্সপ্রেস সকাল ৮টায় কমলাপুর থেকে ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও আড়াই ঘণ্টা দেরিতে সকাল সাড়ে ১০টায় ছেড়েছে। এ ট্রেনের যাত্রী সানজিদা তাসলিম বলেন, পরের দিকে যাত্রীর চাপ বাড়তে পারে এমন আশঙ্কায় প্রথম দিনের টিকিট কেটেছি। কিন্তু ভোগান্তি যেন পিছু ছাড়ল না। সকাল ৮টার ট্রেন সাড়ে ১০টায় ছাড়ল। ঈদ আসলেই ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয়সহ নানা ভোগান্তি প্রতিবারই পোহাতে হয়।
বিলম্বের বিষয়ে কমলাপুর স্টেশনের ম্যানেজার আমিনুল হক বলেন, যে ট্রেনগুলো দেরিতে কমলাপুরে পৌঁছেছে, সে ট্রেনগুলো ছাড়তেই কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। তবে চেষ্টা করছি ট্রেনের সিডিউল ঠিক রাখার।
এদিকে সকালে ঈদযাত্রা উপলক্ষে যাত্রীদের খোঁজ নিতে কমলাপুর স্টেশনে আসেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। এ সময় তিনি ট্রেন, প্লাটফর্ম ঘুরে যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলেন।
পরে স্টেশনে এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেন, আজ (শুক্রবার) সারাদিন কমলাপুর স্টেশন থেকে ৫২টি ট্রেন ছেড়ে যাওয়ার কথা রয়েছে। বেলা ১১টা পর্যন্ত মোট ১৮টি ট্রেন ছেড়ে গেছে। এর মধ্যে দেরি হয়েছে চারটির, এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি দেরি হচ্ছে রংপুর এক্সপ্রেসের।
ট্রেনটির প্রথম দিনে প্রায় সোয়া সাত ঘণ্টা দেরি হতে পারে। এ জন্য আমরা খুবই দুঃখিত। তবে এটা সমাধানে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। রংপুর থেকে রংপুর এক্সপ্রেস নামে অন্য একটি ট্রেন যাত্রী নিয়ে ঢাকায় আসবে। ফলে আজকের এ বিলম্ব আগামীকাল থেকে আর হবে না।
জানতে চাইলে স্টেশনের ম্যানেজার মোহাম্মদ আমিনুল হক বলেন, যাত্রীদের চাপ বাড়ছে। সেই চাপ সামাল দিতে আমরা প্রস্তুত রয়েছি। আশা করি কোনও সমস্যা হবে না।
এদিকে, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে গাবতলী টার্মিনালেও দেখা গেছে এর বিপরীত চিত্র। নগরীর সবচেয়ে বড় এই টার্মিনালটিতে তেমন যাত্রী চোখে পড়েনি। অধিকাংশ কাউন্টারের লোকজন অলস সময় কাটাচ্ছেন। কেউ কেউ টিকিট বিক্রির জন্য নানা রকম কণ্ঠে যাত্রীদের ডাকাডাকি করছেন। যাত্রীরাও টিকিটের দাম কমাতে কাউন্টারে দর-কষাকষি করছেন। এক কাউন্টার থেকে অন্য কাউন্টারে ঘুরছেন পছন্দের টিকিট বা পরিবহনের জন্য।
জানতে চাইলে রাজধানী এক্সেপ্রেসের সহকারী ম্যানেজার রেজাউল মোল্লা রাজু বলেন, যাত্রীদের চাপ কম। যাত্রীর অভাবে গাড়িও বন্ধ রয়েছে। আগামী ৩ জুন থেকে গার্মেন্টস-কারখানা বন্ধ হলে চাপ বাড়বে। এখন যাত্রী নেই। তখন বাসের ছাদে, ট্রাকে এমনটিকে সবাই রওনা দেবে। এখন শুধু তারাই যাচ্ছেন, যারা অগ্রিম টিকিট নিয়েছেন।
একই অবস্থা দেখা গেছে,লঞ্চ টার্মিনালেও। এখানেও ঘরমুখর মানুষের ভিড় তেমন ছিলনা। নিয়মিত যাত্রীদের তুলনায় কিছুটা যাত্রী বেশি। কিন্তু এখনও ঈদের চাপ তেমন দেখা যায়নি। লঞ্চ মালিকরা বলছেন,আজ কালের মধ্যেই যাত্রীর সংখ্যা বেড়ে যাবে। ঈদের বিশেষ লঞ্চ আজ থেকে ছাড়া হবে। এ উপলক্ষে বিশেষ লঞ্চ প্রস্তুতও রয়েছে। আগাম টিকেটও বিক্রি হয়েছে।
জানতে চাইলে ইউনিক পরিহনের সহকারী মো. শামীম বলেন, স্বাভাবিকের চেয়ে যাত্রী একটু বেশি। তবে এখনও আসন খালি যাচ্ছে। যে বাস ভর্তি হতে ৩০ মিনিট লাগার কথা, সেই বাসে সময় লাগে দুই থেকে তিন ঘণ্টা। ডাকাডাকি করেও যাত্রী নেই।
ঝিলাইদহ-চুয়াড়াঙ্গাগামী পরিবহন রয়েল এক্সপ্রেসেসের একজন কর্মী সকাল ১১টার গাড়ির জন্য যাত্রীদের ডাকাডাকি করছেন। তিনি বলেন, যাত্রী থাকলে ডাকাডাকি করতাম না। খাড়ি খালি। যাত্রী কম। এখনও যাত্রীদের চাপ বাড়েনি বলেও তিনি জানান।
Leave a Reply