ত্যাগ বা বিসর্জনের ঈদ হলো ঈদুল আজহা তথা কোরবানির ঈদ। ঈদুল আজহার পশু কোরবানির মধ্যে শেখার অনেক কিছু রয়েছে। পশু কোরবানির মধ্যে স্রষ্টার ভালোবাসায় নিজের ভোগ-বিলাস, লোভ-লালসাকে বিসর্জন দেয়ার উত্তম শিক্ষা রয়েছে। আপন নফসের আমিত্ব, অহঙ্কার ও বড়াইকে বিসর্জন দেয়ার হাকিকত হলো কোরবানি। নিজের আমিত্বকে কোরবানি করার অর্থই হলো, নিজের ভেতরে লুকিয়ে থাকা হিংসা, বিদ্বেষ, কাম, ক্রোধ, লোভকে বর্জন করা। কোনো কিছু বিসর্জনের যে আনন্দ, এর মধ্যে চিরস্থায়ী সুখ ও সাফল্যে থাকে। যে বা যারা নিজের নফসের কোরবানি করতে পেরেছেন, তারা পরিশুদ্ধ হয়েছেন এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভে সক্ষম হয়েছেন। নিজের আমিত্বকে যতক্ষণ পর্যন্ত না কোরবানি করা যাবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আত্মা পরিশুদ্ধ হবে না। আল্লাহর দিদার লাভ করাও সম্ভব হবে না।
নফসের তাড়নায় মানুষ নানাবিধ অশ্লীল কাজে লিপ্ত হয়ে থাকে। এসব মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকাই হলো নিজের আমিত্বের কোরবানি। কুরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহর কাছে এর গোশত কিংবা রক্ত পৌঁছায় না; বরং তাঁর দরবারে তোমাদের তাকওয়া পৌঁছায়।’ (সূরা হাজ্জ : ৩৭)। শুধু পশু জবাইয়ের মহোৎসবের নাম কোরবানি নয়। কোরবানির হুকুম পালনের উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা। কোরবানির পশুর গোশত সমান তিন ভাগে ভাগ করার মধ্যে অনেক বড় ধরনের নৈতিক শিক্ষা রয়েছে। ধনীর সম্পদের ওপর যেমন গরিব মানুষের হক রয়েছে। তেমনি কোরবানির পশুর গোশতেও গরিব, দুঃখী ও দুস্থ মানুষের হক রয়েছে। কুরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘আর কোরবানির উটকে আমি তোমাদের আল্লাহর অন্যতম নিদর্শন বানিয়েছি; তোমাদের জন্য তাতে রয়েছে কল্যাণ। সুতরাং সারিবদ্ধভাবে দণ্ডায়মান অবস্থায় সেগুলোর ওপর আল্লাহর নাম উচ্চারণ করো, যখন কাত হয়ে পড়ে যায় তখন তা থেকে খাও। যে অভাবী, মানুষের কাছে হাত পাতে না এবং যে অভাবী চেয়ে বেড়ায়-তাদের খেতে দাও।’ (সূরা হাজ্জ : ৩৬)। কোরবানির পশুর গোশত পাড়া প্রতিবেশী ও আত্মীয়স্বজনের মাঝে বিলি বণ্টনের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা ও সহানুভূতির শিক্ষা রয়েছে। গরিব দুস্থ মানুষের সেবা করা ও মেহমানদারিতা হজরত রাসূল সা:-এর সুন্নত। কোরবানির পশুর গোশত দিয়ে আত্মীয়স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীদের আপ্যায়ন করার মাধ্যমে সামাজিক ভ্রাতৃত্ববোধ তথা পারস্পরিক মমত্ববোধ তৈরি হয়। নিজেদের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি বৃদ্ধি পায়। একটি পশু কয়েকজন মিলে কোরবানি দেয়ার মধ্যে সামাজিকভাবে আত্মবিসর্জনের শিক্ষা রয়েছে। একটি পশু কয়েকজনে মিলে কোরবানি করতে হলে, সবার মন চিন্তা ও বিবেচনা এক হতে হয়। এখানে ইসলামের উদারতার বিরাট শিক্ষা রয়েছে।
কোরবানির উদ্দেশ্য শুধু গোশত খাওয়া নয়। কোরবানি হলো আত্মবিসর্জন। সুতরাং সমাজের চলমান অশান্তি, অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলা দূর করার ক্ষেত্রে কোরবানির শিক্ষাকে কাজে লাগাতে হবে। কোরবানির শিক্ষা ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে কাজে লাগাতে পারলে সমাজের দৃশ্যপট পাল্টে যাবে। আমাদের দুনিয়া ও আখিরাতের জিন্দেগি কল্যাণকর হবে।
লেখক : প্রবন্ধকার
Leave a Reply