নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢেঁকি ধান ভানা বা শস্য কোটার জন্য ব্যবহৃত যন্ত্রবিশেষ। প্রাচীন কাল থেকে ভারত উপমহাদেশে ঢেঁকি ব্যবহার হয়ে আসছে। যেন বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে গ্রাম- গঞ্জের এক সময়ের ঐতিহ্য কাঁঠের তৈরী এই ঢেকি।গ্রাম-বাংলার ঘরে ঘরে এক সময় ঢেঁকিতে ধান ভানার দৃশ্য চোখে পড়তো।
এই ঢেঁকিকে নিয়ে জনপ্রিয় গান ও প্রবাদ বাক্যও রচিত হয়েছিল। যেমন- ‘ও ধান ভানিরে ঢেঁকিতে পাড় দিয়া / ঢেঁকি নাচে আমি নাচি হেলিয়া-দুলিয়া, ও ধান ভানিরে…. ’ -গানটি এক সময় খুবই জনপ্রিয় ছিল। আর এখনও তো অনেকেই বলে থাকেন, ‘ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে’।
এক সময় গ্রামে গ্রামে নতুন ফসল তোলার পর এবং পৌষ সংক্রান্তিতে ঢেঁকির শব্দে মুখরিত হয়ে উঠতে গ্রামের অধিকাংশ বাড়ি। গ্রামের সম্ভ্রান্ত বাড়িগুলোতে ঢেঁকিঘর হিসেবে আলাদা ঘর থাকত। গৃহস্থ বাড়ির মহিলারা ঢেঁকির মাধ্যমে চাল তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় কাটাতেন।
গরিব মহিলারা ঢেঁকিতে শ্রম দিয়ে আয়-রোজগারের পথ বেছে নিতেন। বলা যায়, এক সময় ঢেঁকিতে কাজ করাই ছিল দরিদ্র মহিলাদের আয়ের প্রধান উৎস। হাতের কাছে বিভিন্ন যন্ত্র আর প্রযুক্তি সহজলভ্য হওয়ায় ঢেঁকির মত ঐতিহ্যবাহী অনেক কিছুই এখন হারিয়ে যাচ্ছে। এক সময় হয়তো সেসবের দেখা মিলবে কেবল জাদুঘরে।
শুধু ধান ভানা নয় মানুষ অনেক প্রয়োজনেই ঢেঁকির ব্যবহার করেছে। যেমন: ধনিয়া, হলুদ, মরিচ, ডাল তৈরী ভাপা পিঠার আটা তৈরীসহ আরো নানা কাজে ব্যবহার করা হতো ঢেকিঁ। আর এর ঢেঁকিতে কাজ করতো বেসির ভাগ মহিলারা। শুধু মহিলারা নই মাহিলাদের সাথে দুই একজন পুরষকেও দেখা যেতো এ কাজে সহযোগীতা করতে। বউ-শাশুরি, মা মেয়ে ভাবি ননদ মিলে কতই না আনন্দ করে ঢেঁকিতে কাজ করেছে। তাই তো গ্রামের মহিলারা বলে আগেকার সময়গুলোতে আমরা অনেক পরিশ্রম করেছি ডাইবেটিস অসুখে ভুগতে হয়নি।
এখন শহর-বাজার হতে শুরু করে গ্রামে গঞ্জে ধান ভানার মেসিন লক্ষ করা যায় । তাই এই ধান ভানার মেসিন আসাতে গ্রামের মা বোনদের আর হার ভাঙ্গা পরিশ্রম করতে হয়না । আজকাল শহর হতে শুরু করে গ্রামে গঞ্জে বারছে কল-কারখানা, সহজ হয়ে উঠছে মানুষের জীবন।
[সোহেল রানা]
Leave a Reply