সাইফুর রহমান শামীম, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি ।।অভাবের তাড়নায় দুই নবজাতককে বিক্রি করা সেই দম্পতি পেল উপজেলা প্রশাসনের সহায়তা।
‘কোলের সন্তানকে বিক্রি করেও চলছে না মর্জিনার সংসার’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়।
খবরটি বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচিত হলে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের দৃষ্টিগোচর হয়।
সোমবার (১ মার্চ) বিকেলে উলিপুর উপজেলা পরিষদে খলিল-মর্জিনা দম্পতির হাতে নগদ ১০ হাজার টাকা তুলে দেন ইউএনও নুর এ জান্নাত রুমি। এছাড়া ২০ কেজি চাউল, দুই লিটার সয়াবিন তেল, দুই কেজি মশুর ডাল, এক কেজি লবনসহ নতুন কাপড়ও দেয়া হয়।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম হোসেন মন্টু, বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের ইউপি প্যানেল চেয়ারম্যান মন্জুরুল হোসেন।
গোলাম হোসেন মন্টু বলেন, ‘দম্পতিকে জিজ্ঞেস করে জানা যায়, ওরা অভাবের কারণে বাচ্চা দুটিকে দত্তক দিয়েছে। ওরা আসলেই অভাবী। আমরা উপজেলা প্রশাসন থেকে সহযোগিতা করেছি। ভবিষ্যতেও পরিবারটির পাশে দাঁড়ানোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
উপজেলা প্রশাসনের সহায়তা পেয়ে মর্জিনা বেগম বলেন, ‘টাকা, চাউল সবার জন্য নতুন কাপড় পেয়ে আমরা খুব খুশি।’
উল্লেখ্য, কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বুড়াবুড়ী ইউনিয়নের শিমুলতলা গ্রাম। এ এলাকার ফকির মোহাম্মদ গুচ্ছ গ্রামে বসবাস করেন শারীরিক প্রতিবন্ধী মর্জিনা বেগম (৩৫)। মানসিক ভারসাম্যহীন স্বামী ও সাত সন্তানকে নিয়ে থাকেন তিনি। প্রতিনিয়ত টানাপোড়েনে চলে তার সংসার। দু’বেলা খাবার যোগাতে হিমশিম খেতে হয় মর্জিনাকে। বাপের বাড়ি ও প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় খেয়ে-না-খেয়ে দিন কাটে তাদের।
মর্জিনার সাত সন্তানের মধ্যে রয়েছে তিন ছেলে ও চার মেয়ে। অভাবের কারণে কোনো সন্তানকেই এখনও স্কুলে ভর্তি করতে পারেননি তারা। এমনকি অপুষ্টিতে ভুগে এক সন্তান মারাও গেছে। জীবিত থাকা সকল সন্তানই অপুষ্টিতে ভুগছে বলে জানা গেছে।
সন্তানদের ভরণ-পোষণ দিতে বেগ পোহাতে হয় মর্জিনা বেগমকে। ছোট সন্তানদের বিভিন্ন জায়গায় কাজে পাঠালেও ফিরে এসেছে তারা। অবশেষে নিজের দুই কন্যা সন্তানকে বিক্রি করে দিতে পিছপা হননি তিনি।
জানা যায়, বিক্রি করা ওই কন্যা সন্তানরা তাদের পঞ্চম ও ষষ্ঠ সন্তান। বর্তমানে ওই দুজনের বয়স যথাক্রমে দুই মাস ও দুই বছর। জন্মের পরই তাদেরকে মোট ২৩ হাজার টাকায় বিক্রি করেছে কুড়িগ্রাম সদরের যাত্রাপুর ও খলিলগঞ্জ এলাকায়।
Leave a Reply