মোঃমশিয়ার রহমান,নীলফামারী প্রতিনিধিঃ
আচ্ছা, আপনি কখনো ভোরের সূর্যদ্বয় দেখেছেন? দেখেছেন সন্ধ্যায় নীড়ে ফেড়া পাখির ঝাঁক? সমুদ্রের ঢেউ বা পাহাড়ের বিশালতা? নয়ানাভিরাম এসব দৃশ্যের বাইরে ও আমাদের চারপাশে রয়েছে অনেক সৌন্দর্য, যা প্রতি মূহুর্তে মুগ্ধ করে আমাদের। অথচ সৌন্দর্যের প্রাচুর্যে ভরা আমাদের পৃথিবীতে বঞ্চিত অনেক মানুষ আছেন, ভাগ্য যাদের চোখে দেখার ক্ষমতা দেয়নি বা দৃষ্টি হারিয়ে ফেলেছেন কোনো অসুখে বা দুর্ঘটনায়। দৃষ্টি প্রতিবন্ধি সে সব মানুষেরা বেঁচে থাকতো অন্যের অনুগ্রহে, পরনির্ভরশীল হয়ে। বলবো, ঠিক তেমনী এক ক্ষুদ্র পানের অন্ধ দোকানীর জীবন-কাহিনী।
প্রথমত সে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, দ্বিতীয়ত তার জন্ম দরিদ্র পরিবারে। কিন্তু এতো কিছুর পরও সে হতে পারে সফলতার দৃষ্টান্ত। বলছি অদম্য পরিশ্রমি অন্ধ নিত্য চন্দ্র রায়ের গল্প। যে কিনা সকল প্রতিবন্ধকতার চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে সফলতার পথে চলতে চান। ভাগ্যের নির্মমতায় নিত্যচন্দ্র আজ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। সীমাহাীন দুঃখ- কষ্ঠের মাঝে ও তাকে অন্যের সাহায্য নিয়ে চলতে হয় না। জীবিকা নির্বাহের জন্য থাকার ঘরের সাথেই শুরু করেন ক্ষুদ্র পানের দোকান। নিত্য রায়ের জন্ম নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলার চাঁদখানা ইউনিয়নের বগুলাগাড়ী গ্রামের নিজপাড়ায় এক হত দরিদ্র পরিবারে। অসুস্থ্য বাবা ধীরেন্দ্র নাথ রায় অন্যের বাড়ীতে কামলা খেটে যা পান তা দিয়ে কোন রকমে সংসার চালান।
তার মা জানান, সুস্থ্য সবল স্বাভাবিক সন্তানের মতোই ভাল চোখ নিয়ে জন্ম নেন নিত্য চন্দ্র। অন্যান্য বাচ্ছাদের
মতো ৬ বছর বয়সে কালিবাড়ী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গন্ডি পেরিয়ে তারাগঞ্জ হাই স্কুলে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশুনা করেন। আনুমানিক ১৪/১৫ বছর বয়সে ৮ম শ্রেণীতে অধ্যয়নকালীন সময়ে হঠাৎ গুটি বসন্তে তার দু’টি চোখের দৃষ্টি হারিয়ে যায়। অসহায় হতদরিদ্র পিতা-মাতা অন্ধ নিত্য চন্দ্রকে নিয়ে ধার দেনা করে প্রথমে গ্রাম্য ডাক্তার, পরে চক্ষু হাসপাতাল। চক্ষু হাসপাতালের চিকিৎসা নিত্য চন্দ্রের চোখের আর ও অবনতি ঘটায়। ফলে তার বাবা- মা এক সময় তার হাল ছেড়ে দেন। উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, পূর্বে মনে করা হতো, অন্ধত্ব একটি অভিশাপ। এর কারণ হিসেবে মহীয়সী নারী হেলেন কিলার চিহ্নিত করেছেন যে, খাদ্যগুণ ভিটামিন ‘এ’-এর অভাবে শিশুরা অন্ধ হয়ে থাকে। এ ছাড়া বিভিন্ন কারণ রয়েছে, বংশগত বা জেনেটিক কারণ, বয়স জনিত কারণ ইত্যাদি। খাদ্যগুণ গ্রহণের মাধ্যমে অন্ধত্ব কমানো সম্ভব হলে ও আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে যোগ হয়েছে অপর একটি সমস্যা যা নিরাময় যোগ্য নয়। হয়ত এমনটাই হয়েছে অন্ধ নিত্য রায়ের ক্ষেত্রে। নিত্যরায় দু-ভাই এক বোন। বোনের নাম জরা রানী (২০)। বোনের বিয়ে দিয়েছেন। সংসারে অসুস্থ্য বৃদ্ধ বাবা-মা ও ছোট ভাই পবিত্র চন্দ্র রায় (২৫)। জীবিকা নির্বাহের তাগিদে পবিত্র চন্দ্র তারাগঞ্জ বাজারে অন্যের দোকানে কাজ করে। অন্ধ নিত্য চন্দ্র রায় (৩৩) ছোট একটি পানের দোকান করেন। বর্তমানে ছোট ভাইয়ের ও তার দোকানের স্বল্প আয়ে কোন রকমে চিকিৎসার খরচ ও সংসার চলে। নিত্য রায় অন্ধ হলে ও তার একটি গুণবলী রয়েছে। তা’হলো ক্রেতারা পান খেয়ে দশ, বিশ, শত, হাজার টাকার নোট যাই দেয় নিত্যরায় হাতে নিয়েই বলে দিতে পারে কত টাকার নোট।
সমাজে প্রতিবন্ধী মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ, স্বাভাবিক ও সম্মানজনক জীবনযাপনের অধিকার রয়েছে। প্রতিবন্ধীদের মানবিক মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় অত্যন্ত বলিষ্ঠভাবে মানুষকে কর্তব্যপরায়ণ ও দায়িত্ব সচেতন হওয়াার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। একজন প্রতিবন্ধী সমাজে সুস্থ-সুন্দরভাবে বিকশিত হয়, যদি দেশের অবকাঠামো ভালো হয়। ইসলাম মানুষকে হতদরিদ্র অসহায়ের প্রতি সহানুভূতি ও সাহায্য-সহযোগিতার শিক্ষা দেয়।
Leave a Reply