দৈনিক দেড় হাজারের বেশি মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছে। অথচ সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দেয়া হলেও হাজারো মানুষ দৈনিকই আসছে হাসপাতালে জ্বর নিয়ে। সকলেই ডেঙ্গু আক্রান্ত নয়। হাসপাতালে আসার পর পরীক্ষা করলেই তা বুঝা যায় কিন্তু জ্বর হলেই মানুষ আসছে। ঢাকার বড় বড় হাসপাতালে গেলেই বুঝা যায় মানুষ কী রকম আতঙ্কিত। এমনকি ডেঙ্গু হলেই আত্মীয়-স্বজন রক্ত দাতাও সংগ্রহ করে রাখছেন যেন প্রয়োজনে রক্ত দিতে দেরি না হয়। গতকাল শনিবার দুপুরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এমনই একজন অভিভাবককে পাওয়া যায়। তার ছেলে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে তিনি তাকে এ হাসপাতালে নিয়ে আসেন। উঠতি বয়সের এই ছেলেটির দুই চোখ রক্ত জমে গেছে। রক্ত বমিও করেছে এর আগে। রক্ত এসেছে পায়খানার সাথে। পত্রিকায় পড়ে, টেলিভিশনে দেখে এবং স্থানীয় চিকিৎসকের সাথে কথা বলে তিনি বুঝতে পেরেছেন যে ছেলেকে রক্ত দিতে হতে পারে। সে জন্য তিনি সাথে করে বি পজিটিভ গ্রুপের দুইজনকে নিয়ে এসেছেন। যদি রক্ত লাগে সাথে সাথে যেন দেয়া যায়।
গতকাল দুপুরের দিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেঙ্গু সেল পরিদর্শন করেছেন। পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের জানান, সরকার ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসার জন্য সব প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। চিকিৎসক, নার্সরা কাজ করে যাচ্ছেন। ডেঙ্গু মোকাবেলায় মশা নিধনে দুই সিটি করপোরেশনও জোরালোভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ডেঙ্গু পরীক্ষার কিটস, স্যালাইনের ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং আমদানিরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডেঙ্গু মোকাবেলার সার্বিক বিষয়টি নজরদারিতে রেখেছেন। ডেঙ্গু মোকাবেলায় মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জনগণকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
গতকাল দুপুর পর্যন্ত ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেই ৫৪ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে। মিটফোর্ডে ১৪৩ জন, শিশু হাসপাতালে ১৯ জন, হলিফ্যামিলি হাসপাতালে ৪১, শহীদ সোহরাওয়ার্দীতে ৬২ জন, বারডেমে ২২ জন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৪ জন, পুলিশ হাসপাতালে ৫৬ জন, মুগদা হাসপাতালে ১০০ জন, বিজিবি হাসপাতালে ২ জন, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ৩৪, কুর্মিটোলা হাসপাতালে ৪৮ জন অন্যান্য বেসরকারি হাসপাতালে ৩৬০ জন। অবশিষ্ট ৬৮০ জন রাজধানী ঢাকার বাইরের ৮ বিভাগের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। উপরে উল্লিখিত সকলেই ডেঙ্গু সাধারণ জ্বরে আক্রান্ত। এর বাইরে তিন জন রয়েছে ডেঙ্গু হেমোরেজিকে আক্রান্ত।
বেসরকারি হাসপাতালের ৩৮৭ জনের মধ্যে বাংলাদেশ মেডিক্যাল করেজ হাসপাতালে ২৪, ইবনে সিনা হাসপাতালে ১০, স্কয়ার হাসপাতালে ১০, শমরিতায় ৮, ল্যাবএইডে ৬, সেন্ট্রাল হাসপতালে ১৮, গ্রিণ লাইফে ৩৩, ইসলামী ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতালে ২৪ জন ভর্তি হয়েছে।
এ দিকে রাজধানীর বাইরেও ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা কম নয়। গতকাল রাজধানীতে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৯৬৫ জন এবং রাজধানীর বাইরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৬৮০ জন। সরকারি হিসেবে সর্বমোট মৃত্যু হয়েছে ১৮ জনের। তবে বেসরকারি হিসেবে ৫০ জনের বেশি মারা গেছে। ঢাকার বাইরে প্রায প্রতিটি জেলা থেকেই ডেঙ্গু আক্রান্তের খবর পাওয়া যাচ্ছে। শহুরে মহা নামে যার এতোদিন পরিচিতি ছিল সেই মশা এখন গ্রামেও ছড়িয়ে পড়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুসারে রাজধানী ঢাকার বাইরে ঢাকার বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে ২১৫ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১২৯, ময়মনসিংহ বিভাগে ৫২, খুলনা বিভাগে ৬৩, রাজশাহী বিভাগে ৬৯ জন, রংপুর বিভাগে ৫৪ জন, বরিশাল বিভাগে ৬৭ জন এবং সিলেট বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে ৩১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে।
সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু চিকিৎসা সরকার ফ্রি করে দিয়েছে। কোনো পরীক্ষাতেই এখন আর কোনো অর্থ লাগে না। এমনকি স্বায়ত্তশাসিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসা ফ্রি করে দেয়া হয়েছে। এমনকি ব্যয় বহুল আইসিইউ ও এইচডিইউ এর রোগীরা ফ্রি চিকিৎসা পাচ্ছেন।
এ দিকে বাংলাদেশ ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর জানিয়েছে, গতকাল শনিবার রাত পর্যন্ত মোট এক লাখ ৮০ হাজার ডেঙ্গু শনাক্তকরণ কিট আনা হয়েছে। এ ছাড়া আরো দুই ডেঙ্গু শনাক্তরণ কিট আসবে কয়েক দিনের মধ্যে। দেশের ভেতর আগামী ৬ আগস্ট থেকে দৈনিক ৩৫ হাজার কিট উৎপাদন করবে ওএমসি হেলথ কেয়ার লিমিটেড। ওএমসি সর্বসাকুল্যে ২০ লাখ কিট উৎপাদন করবে।
Leave a Reply