শহীদ জিয়া স্মৃতি পরিষদের নাগরিক সংলাপে বক্তব্য রাখছেন মাহমুদুর রহমান মান্না : সংগৃহীত
একাদশ জাতীয় সংসদকে ‘নেত্রী বন্দনা’র সংসদ আখ্যা দিয়ে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, দেশে গণতন্ত্র ফেরাতে আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই। গতকাল শনিবার দুপুরে এক নাগরিক সংলাপে তিনি এ কথা বলেন।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের দ্বিতীয় তলায় জহুর চৌধুরী মিলনায়তনে শহীদ জিয়া স্মৃতি পরিষদের উদ্যোগে একটি শক্তিশালী ঐক্যবদ্ধ গণতান্ত্রিক জাতিরাষ্ট্র গড়ার লক্ষ্যে ‘জাতীয় রাজনীতি : গণতন্ত্রের মুক্তি কোন পথে’ শীর্ষক এই নাগরিক সংলাপে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি জাহাঙ্গীর চৌধুরী। ইশতিয়াক আহমেদ বাবুলের পরিচালনায় এতে এলডিপি নেতা ইসমাইল হোসেন বেঙ্গল, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ বক্তব্য রাখেন।
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আমাদের সংসদ মানে একেবারে প্রধানমন্ত্রী অর্থমন্ত্রী একাকার। সংসদের মধ্যে একেকজন সদস্য দাঁড়িয়ে কেবল নেত্রীর বন্দনা করেন। উনি নিজে কথা বলবার সময়ে হাসেন, যাকে প্রশংসা করে বলেন উনিও মিটিমিটি করে হাসেন। উনি আরেক মন্ত্রীর বক্তব্য পড়েন, সেই বক্তব্যের মধ্যে তার কথা লেখা আছে, প্রশংসার কথা লেখা আছে। উনি বলতে বলতে বলেন, এটা আমার কথা না, উনার কথা। আমি পড়ে শোনাচ্ছি। কিন্তু নিজের গান। এরকম সার্কাস, এরকম কেরিক্যাচার দেখেছেন?
এ রকম সংসদে শপথ নেয়া বিএনপি ও গণফোরামের নির্বাচিত সদস্যদের প্রতি ইঙ্গিত করে মান্না বলেন, এর পরও যদি কেউ মনে করেন, আমাদের সেই জায়গায় গিয়ে লড়াই করতে না পারলে বোধহয় আমাদের এ লড়াই কখনো জিতবে না। আমি তাদেরকে বলি, রাজপথের লড়াইয়ের কথা বাদ দিয়ে যারা সংসদের কথা ভাবেন, তারা মূলত কোনো লড়াই করতে পারবেন না।
মান্না বলেন, আমাদের রাজপথ ছাড়া অন্য কোথাও লড়াই করার জায়গা আছে? সংসদে লড়াই করে জিততে পারবেন? একজন সংসদ সদস্যকে দুই মিনিট কথা বলবার সময় দেয়া হয়, এক মিনিট পরে মাইক বন্ধ করে দেয়া হয়। আবার কখনো কথাই বলতে দেয়নি। তারপর স্পিকার বলেছেন, আপনি যে কথা বলেছেন যেটা সংসদীয় পদ্ধতির নয়Ñ এটা এক্সপাঞ্জ করে দিলাম। এর চেয়ে দুঃখজনক কী হতে পারে? স্পিকার আগেই বলেন, মাননীয় সংসদ সদস্য আপনি যেসব বলবেন তার মধ্যে অসংসদীয় কোনো কথাবার্তা থাকলে কিন্তু বাদ দিয়ে দেবো। কী রকম করে উনি জানেন যে সংসদ সদস্য কী বলবেন? উনি কী আগেই কিছু বাদ দেয়ার ক্ষমতা রাখেন?
গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে আন্দোলনের বিকল্প নেই জানিয়ে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক উপস্থিত নেতাদের উদ্দেশে বলেন, আজ থেকে কত দিন পর আপনাদের দল রাজপথের লড়াইয়ে আসতে পারবে বলে আপনারা মনে করেন? কেউ মাথা নাড়ান, কেউ মাথা দোলান, কেউ কোনো কথা বলতে পারেন না। আমি জানি, এ কথার জবাব আমি যাদের উদ্দেশ্যে বলব, যারা নেতৃত্বে সিদ্ধান্ত নেবেনÑ তারা নিজেরাও ঠিক মতো বলতে পারবেন না।
অতএব এ পরিস্থিতিতে আমাদের মতো মানুষ, আমাদের মতো ছোট ছোট দলগুলোর কাজ কী? আমি বলবÑ আপনারা যে যে দলই করেন, নিজের দল গোছান। আমরা লড়াইটা গণতন্ত্রের জন্য করি, স্বৈরাচারের বিরুদ্ধেই করি। তারপর যখন উপযুক্ত সময় আসবে তখন প্রতিবাদের জন্য রাজপথে নামব। নিশ্চয়ই রাজপথে গণতন্ত্রের শক্তি লাগবে। আজ হোক, কাল হোক, এ বছর হোক, সামনের বছর হোক, বড় জোর দুই বছর এর মধ্যে আপনাকে নামতে হবে। সে রকম প্রস্তুতি নিন, সামনের দিকে যান। আমি না পারলে আপনি করবেন, আপনি না পারলে আমি করবÑ আমি-আপনি কেউ যদি না পারি, তৃতীয় কেউ করবে। কেউ না কেউ গণতন্ত্রের সংগ্রাম করবেই। গণতন্ত্র মুক্তি পেলে গণতন্ত্রের মা বেগম খালেদা জিয়াও মুক্তি পাবেন বলে মন্তব্য করে সবাইকে সংগঠিত হওয়ার আহ্বান জানান মান্না।
Leave a Reply