সাত বছরের শিশু কন্যা সামিয়া আফরিন সায়মা। ওরা দুই ভাই, দুই বোন। সবার ছোট্ট সায়মা। বড় আদরের মেয়েটি। প্রতিদিন বড় বোন ভার্সিটি থেকে এসে শেষ বিকেলে ছোট্ট সায়মাকে পড়তে বাসায়। শুক্রবারও বড় বোনের কাছে পড়তে বসে শিশুটি। পড়া শেষ করে খেলতে যায়। এর পর থেকে আর খোঁজ মিলছে না। অনেক খোঁজাখুঁজির পরে পাওয়া গেলো সায়মাকে কিন্তু জীবিত নয়, মৃত। খালি ফ্ল্যাটের ভেতরে গলায় রশি দিয়ে মুখ বাঁধা রক্তাক্ত অবস্থায় মেয়ের লাশ পড়ে থাকতে দেখে হাউমাউ করে চিৎকার করেন স্বজনরা। বিকৃত মানসিতকার পাষণ্ড শিশুটিকে বাঁচতে দিলো না। খবর পেয়ে রাতে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়। গত শুক্রবার রাতের রাজধানীর ওয়ারী বনগ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, ধর্ষণের পর গলায় রশি পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয় সাত বছরের শিশু কন্যা সামিয়া আফরিন সায়মাকে। গতকাল দুপুরে নিহতের ময়নাতদন্ত শেষে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সোহেল মাহমুদ এই তথ্য জানান। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ওই ভবনের মালিক, দায়োয়ান, দারোয়ানের ছেলেসহ পাঁচজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ। শিশু সামিয়ার ওপর এই পৈশাচিক বর্বরতার ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দার ঝড় উঠেছে। সামিয়াসহ সম্প্রতি বেশ কিছু নৃশংস ঘটনায় সামাজিক অপরাধের চরম অবনতি বলে মনে করছেন অপরাধ বিশ্লেষকরা।
সোহেল মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, প্রাথমিকভাবে তার শরীরে ধর্ষণের আলামত মিলেছে। ধর্ষণের পর তার গলায় রশি পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ময়নাতদন্তে তার যৌনাঙ্গে ক্ষত চিহ্ন, মুখে রক্ত ও আঘাতের চিহ্ন, ঠোঁটে কামড়ের দাগ দেখা গেছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
এর আগে গত শুক্রবার রাতে ওয়ারীর বনগ্রামে বহুতল একটি ভবনের ৯ তলার ফাঁকা ফ্ল্যাটে সাত বছর বয়সী শিশুটির লাশ পাওয়া যায়। ওই ভবনের ষষ্ঠ তলায় শিশুটি পরিবারের সাথে থাকত। শিশুটির বাবা আব্দুস সালাম নবাবপুরের একজন ব্যবসায়ী।
এ ঘটনায় গতকাল শনিবার দুপুরের দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে শিশু সামিয়ার লাশ নিতে যান তার বাবা। এ সময় তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। এই শোকবিহ্বল দৃশ্য দেখে অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়েন। মর্গের সামনে তার বাবা আব্দুস সালাম বলেন, বাবা হয়ে মেয়ের লাশ কাটাছেঁড়া করতে দেখতে হচ্ছে। বাবা হয়ে নিজের কাঁধে শিশু কন্যার লাশ ওঠাতে হবে কখনোই ভাবিনি। তিনি বলেন, এ হত্যাকাণ্ড কোনো বাবাই সহ্য করতে পারবে না। হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে সব অভিভাবক ও গণমাধ্যমের ভূমিকা দরকার। আর কোনো শিশুর যেন এমন ঘটনার শিকার হতে না হয়।
সামিয়ার বাবা জানান, তার দুই মেয়ে দুই ছেলে। বড় ছেলে দেশের বাইরে থাকে। বড় মেয়ে ইউনিভার্সিটি থেকে বাড়িতে আসার পর সায়মাকে পড়তে বসায়। গতকালও (শুক্রবার) আসরের পর পড়াশুনা শেষ করে মাগরিবের নামাজের সময় খেলতে গিয়ে নিখোঁজ হয় সায়মা।
ওয়ারী থানার ওসি আজিজুর রহমান বলেন, শুক্রবার সন্ধ্যায় ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় শিশুটি তার মাকে বলেছিল, ওপরের ফ্ল্যাটের খেলতে যাচ্ছি। সে প্রতিদিন বিকেলে নিচে ও ভবনের ওপরের ফ্ল্যাটে অন্য শিশুদের সাথে খেলতে যেত। কিন্তু এদিন গিয়ে আর ফিরে আসেনি। অনেক খোঁজাখুঁজির পরে নবম তলায় খালি ফ্ল্যাটের ভেতরে গলায় রশি দিয়ে মুখ বাঁধা রক্তাক্ত অবস্থায় মেয়েকে দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেয় পরিবার। শিশুটির মুখে রক্ত ও গলায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশ। লাশ উদ্ধারের পর ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয় ঢাকা মেডিক্যালে। এই ঘটনায় শনিবার সকালে মামলা করেছেন শিশুটির বাবা। এরপর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বাড়ির নিরাপত্তা প্রহরীসহ ছয়জনকে আটক করে পুলিশ।
ওয়ারী জোনের সহকারী কমিশনার মোহাম্মাদ সামসুজ্জামান জানান, আটকদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটনে তদন্ত চলছে।
Leave a Reply