শিশুদের সাথে বড়দের কেমন আচরণ করা উচিত – সংগৃহীত
‘গড়তে শিশুর ভবিষ্যৎ স্কুল হবে নিরাপ’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে শুরু হওয়া বিশ্ব শিশু দিবস ও শিশু অধিকার সপ্তাহ ২০১৮ এর দ্বিতীয় দিনে সোমবার ৮ অক্টোবর বাংলাদেশ শিশু একাডেমীর মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়েছে শিশুদের নিয়ে সেশন ‘আমার কথা শোন’। সোমবারের বিষয় ছিল মাদককে না বলি।
শিশু প্রতিনিধি উম্মে মোবাসশিরার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের অতিরিক্ত সচিব জনাব মাহমুদা শারমীন বেনু ও বিশেষ অতিথি হিসাবে ছিলেন ইউনিসেফ বাংলাদেশের চাইল্ড প্রটেকশন স্পেশালিষ্ট জনাব শাবনাজ জেহেরীন। আলোচনা পর্বটিতে মডারেটর হিসাবে ছিলেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রনালয়ের নারী নির্যাতন প্রতিরোধকল্পে মাল্টি সেক্টারাল কর্মসূচির প্রকল্প পরিচালক ড. আবুল হোসেন।
আলোচনা পর্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ শিশুএকাডেমীর পরিচালক জনাব আনজীর লিটন।
শিশু সভাপতি তার বক্তব্যে সকল শিশুকে পড়ালেখার পাশাপাশি সৃজনশীল কর্মকান্ডে অংশ নিতে ও মাদকসহ সকল খারাপকাজ থেকে নিজেদের বিরত থাকার আহব্বান জানান।
অনুষ্ঠানে অতিথি বক্তা হিসাবে বক্তব্য রাখেন শিশু বক্তা তানভীর আহমেদ। তিনি বলেন, ‘সকল শিশুর সমান অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। পথ শিশুরা যদি শিক্ষা লাভের সুযোগ পায়, বিনোদনের সুযোগ পায়, সৃজনশীল কাজের প্রশিক্ষণ পায় তাহলে তারা শুধু মাদক থেকেই দূরে থাকবেনা বরং সুনাগরিক হিসাবেও গড়ে উঠবে।’
প্রধান অতিথি মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের অতিরিক্ত সচিব জনাব মাহমুদা শারমীন বেনু বলেন, শিশুদের মনস্তাত্ত্বিক বিকাশে মা-বাবা এবং শিক্ষকদের ভূমিকা অনেক। শিশুদের সামনে ধূমপান ও মাদকদ্রব্য গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে পাশাপাশি টিভিতে শিশুদের নিয়ে সিরিয়াল না দেখে তাদের মনস্তাত্ত্বিক বিকাশে সাহায্য করে এমন অনুষ্ঠান দেখা উচিত।
বিশেষ অতিথি ইউনিসেফ বাংলাদেশের চাইল্ড প্রটেকশন স্পেশালিষ্ট জনাব শাবনাজ জেহেরীন বলেন, ছোটদের অনেক কথা বলার আছে। তাদের কথা শুনতে হবে। তাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে, খারাপ ভাল সম্পর্কে ধারণা দিতে হবে তবেই তারা সকল খারাপ থেকে নিজেদের বিরত রাখতে পারবে।
উন্মুক্ত আলোচনায় বিভিন্ন স্কুলের শিশু, শিক্ষক ও অভিভাবকেরা অংশ গ্রহণ করে তাদের মত প্রকাশ করেন। এসময়ে মাদক নিয়ে শিশুদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন অতিথিরা। মাদকের ক্ষতিকার দিক ও মাদক থেকে বিরত থাকতে করণীয় বিষয় নিয়ে শিশুদের সচেতন করেন বক্তারা।
উল্লেখ্য বাংলাদেশ শিশু একাডেমীতে ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া বিশ্ব শিশুদিবস ও শিশু অধিকার সপ্তাহ ২০১৮ চলবে ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত। এখানে প্রতিদিনই খেলনা মেলা,সায়োস্কোপ,আর্ট ক্যাম্পসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান হচ্ছে ।
আরো পড়ুন : সঠিকভাবে শিশুর বেড়ে ওঠা
ডা: রুমানা নুশরাত চৌধুরী ২৮ আগস্ট ২০১৮, ১৫:৩৯
আমাদের দেশে পিতামাতারা সচরাচর শিশুর বেড়ে ওঠা নিয়ে চিন্তিত থাকেন। অনেকেই ভাবেন শুধুমাত্র ভালো খাওয়া-দাওয়া করলেই শিশুর বৃদ্ধি ঘটে। আসলে বাস্তবে তা নয়। শিশুর বৃদ্ধির জন্য বৈজ্ঞানিকভাবে স্বীকৃত কিছু নিয়মকানুন আছে। তাছাড়াও চিকিৎসকগণ শিশুদের সঠিক বৃদ্ধি না ঘটার কারণসমূহ সঠিকভাবে চিহিত করে তা থেকে উত্তরণের উপায় বলে দিতে পারেন। শিশুর বেড়ে ওঠার জন্য কিছু উপদেশ-
– জন্মের পর থেকে ২ বছর বয়স পর্যন্ত প্রতি মাসে শিশুর ওজন নিতে হবে। যদি পর পর ২ মাস শিশুর ওজন না বাড়ে তবে বুঝতে হবে তার কোনো সমস্য আছে। এজন্য স্বাস্থ্যকর্মী বা ডাক্তারের নিকট যেতে হবে।
– ৬ মাস বয়স পর্যন্ত শুধুমাত্র বুকের দুধই শিশুর জন্য সেরা খাবার। এই সময়ে তার অন্য কোনো খাবারের দরকার নেই।
– ৬ মাস বয়স পূর্ণ হলে শিশুকে মায়ের দুধের পাশাপাশি অন্যান্য খাবার দিতে হবে।
– ২ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুকে ঘনঘন খাওয়ানো প্রয়োজন।
– ১ থেকে ২ বছর বয়স পর্যন্ত বুকের দুধের পাশাপাশি শিশুকে পরিবারের স্বাভাবিক খাবারের সাথে চিনি/গুড় মেশানো উচিত।
– শিশু পুষ্টির জন্য প্রচুর ভিটামিন ‘এ’ প্রয়োজন। যেসব খাবারের ভিটামিন ‘এ’ আছে সেগুলি হলো: মায়ের দুধ, গাঢ় সবুজ হলো: মায়ের দুধ, গাঢ় সবুজ ও রঙিন শাকসব্জি ও ফলমুল।
– অসুস্থ অবস্থায় শিশুকে বুকের দুধসহ স্বাভাবিক খাবার খাওয়ানো অব্যাহত রাখতে হবে। অসুখ সেরে যাবার পর অন্তত ২ সপ্তাহ শিশুকে প্রতিদিন অতিরিক্ত ১ বার খেতে দেওয়া প্রয়োজন।
– শিশুকে সুস্থ, সবল ও বুদ্ধিমান মানুষে হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। এজন্য লক্ষ্য রাখা দরকার, জন্মের পর তেকে যেন শিশুর শরীর ঠিকমত বাড়ে, তার মানসিক বিকাশ যথাযথ হয় এবং সে হাসিখুশি থাকে।
শিশুর বেড়ে ওঠা
জন্মের পর থেকে ২ বছর বয়স পর্যন্ত প্রতি মাসে শিশুর ওজন নিতে হবে। প্রতিমাসে শিশুর ওজন নিতে হবে। যদি পরপর ২ মাস শিশুর ওজন না বাড়ে তবে বুঝতে হবে তার কোনো সমস্যা আছে। এজন্য স্বাস্থ্যকর্মী বা ডাক্তারের নিকট যেতে হবে।
প্রতি মাসে নিয়মিতভাবে শিশুর ওজন বাড়লে বুঝতে হবে যে শিশুর শরীর ঠিকমত বাড়ছে, তার মানসিক বিকাশ যথাযথ হচ্ছে এবং তার মনও সুস্থ্য আছে। এক্ষেত্রে জেনে রাখতে হেব যে অন্য শিশুর ওজনের তুলনায় নয়, নিজের ওজনের তুলনায় শিশুর ওজন বাড়া প্রয়োজন।
– ২ বছর বয়স পর্যন্ত প্রতি মাসে শিশুর ওজন নেয়া প্রয়োজন। পর পর ২ মাস শিশুর ওজন না বাড়লে মা-বাবাকে স্বাস্থ্যকর্মী বা ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে হবে। অসুখ বিসুখ, কম বা অনুপযুক্ত খাবার অথবা প্রয়োজনীয় সেবা যত্নের অভাবে শিশুর সঠিকভাবে বেড়ে না ওঠার সম্ভাব্য কারণগুলিও এ ব্যাপারে মা-বাবার অবশ্য করণীয় বিষয়গুলি বর্ণনা করা হয়েছে।
– জীবনের প্রথম ৬ মাস শিশুকে শুধুমাত্র বুকের দুধ খাওয়ালে সে রোগব্যধিতে খুব কম ভোগে। প্রথম ৬ মাস শুধুমাত্র বুকের দুধ খেলে শিশুর শরীরও ঠিকমত বাড়ে।
– ১ বছর বয়সের মধ্যেই শিশুকে সব কয়টি টিকা দেয়া জরুরী। টিকা রোগব্যধি থেকে শিশুকে রক্ষা করে এবং তাকে সঠিকভাবে বেড়ে ওঠায় সাহায্য করে।
– শিশুকে বাড়তি খাবার দেয়া শুরু করলে তার রোগব্যধির ঝুঁকি বেড়ে যায়। এই সময় থেকে প্রতি মাসে শিশুর ওজন বাড়ছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখা বিশেষ জরুরি। ২ বছরের কম বয়সী শিশুকে যথেষ্ট পরিমাণে উপযুক্ত খাবার দেয়ার পরও যদি তার ওজন না বাড়ে তবে নিচে বর্ণিত ১১টি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হবে:
– শিশু কি যথেষ্ট ঘনঘন খাবার খাচ্ছে?
– শিশুর খাবারে কি যথেষ্ট পরিমাণে বলকারক উপাদান আছে? (না থাকলে শিশুর খাবারে তেল অথবা চিনি/গুড় মেশাতে হবে)
– শিশু কি ঘনঘন অসুস্থ্য হয়? (স্বাস্থ্যকর্মীর পরামর্শ প্রয়োজন।
– অসুখ হলে কি শিশু খেতে চায় না? (অসুস্থ অবস্থায় শিশুকে বিশেষভাবে চেষ্টা করে খাওয়াত হবে এবং অসুখ সেরে গেলে আগের স্বাস্থ্য ফিরে পেতে তাকে অতিরিক্ত খাবার দিতে হবে)
– শিশু কি প্রয়োজনমত ভিটামিন ‘এ’ পাচ্ছে? (প্রতিদিন শিশুকে গাঢ় সবুজ ও রঙিন শাকশব্জি এবং ফলমুল খাওয়াতে হবে)
– শিশুকে কি বোতলে খাবার খাওয়ানো হয়? (বোতলে খাওয়ানো বন্ধ করুন) বাটি ও চামচ ব্যবহার করুন)
– শিশুকে কি নিরাপদ পানি দেয়া হয়?
– শিশুর মল কি পায়খানায় ফেলা হয়, কিংবা মাটিতে পুঁতে রাখা হয়? (তা না হলে শিশু প্রায়ই অসুস্থ্য হবে)
– শিশুর কি কৃমি আছে? (মল পরীক্ষা সাপেক্ষে প্রয়োজনে স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে কৃমিনাশক ওষুধ এনে শিশুকে খাওয়াতে হবে)
– শিশুকে কি প্রায়ই একা একা রাখা হয়? (শিশুকে অধিক সেবাযত্ন দেয়া, উৎফুল্ল রাখা ও যথেষ্ট মনোযোগ দেয়া প্রয়োজন)
– শিশুকে কি টিকা দেয়া হয়েছে? (১) বছর বয়সের মধ্যে সবগুলি টিকা দিতে হবে)
৬ মাস বয়স পর্যন্ত শুধুমাত্র বুকের দুধই শিশুর জন্য সেরা খাবার। এই সময়ে তার অন্য কোনো খাবার দরকার নেই।
– জন্মের পর প্রথম ৬ মাস ঠিকমত অর্থাৎ ভালো স্বাস্থ্য নিয়ে বেড়ে ওঠার জন্য শিশুর শুধুমাত্র বুকের দুধ দরকার। এই মাসগুলিতে শিশু নানা রকম রোগব্যাধির ঝুঁকির মধ্যে থাকে। বুকের বুধ শিশুকে ডায়রিয়া ও অন্যান্য সাধারণ রোগব্যধি থেকে রক্ষা করে।
– ৬ মাসের কম বয়সের শিশুর ওজন ঠিকমত না বাড়লে তাকে আরও ঘনঘন বুকের দুধ খাওয়ানো প্রয়োজন।
– শিশুর জন্য বুকের দুধের চেয়ে আর কোনো ভাল খাবার নেই। অন্ততপক্ষে ২ বছর এবং সম্ভব হলে তার চেয়ে বেশিদিন শিশুকে বুকের দুধ ধাওয়াতে হবে।
৬ মাস বয়স পূর্ণ হলে শিশুকে মায়ের দুধের পাশাপাশি অন্যান্য খাবার দিতে হবে
– খিচুড়ি বা জাউয়ের সাথে দিনে অন্তত ১ বার খোসা ছড়ানো, সিদ্ধ করা এবং গলানো তরিতরকারি মিশিয়ে শিশুকে খাওয়াতে হবে।
– অন্যান্য খাবার দেয়ার আগে শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। এর ফলে মায়ের বুকে অনেক দিন দুধ থাকবে।
– শিশুকে ‘মিশ্র’ অর্থাৎ বিভিন্ন ধরণের খাবার খাওয়ানো উচিত। শিমুকে যত রকমারী খাবার দেয়া যায় তত ভাল।
২ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুকে ঘনঘন খাওয়ানো প্রয়োজন
শিশুদের পাকস্থলী বড়দের তুলনায় ছোট। এ কারণে, বড়রা একবারে যথোটুকু খাবার খেতে পারে শিশুরা ততোটুকু খেতে পারে না। অথচ ঠিকমত বেড়ে ওঠার জন্য শিমুদের বলকারকক খাবারের চাহিদা বড়দের তুলনায় বেশি। তাই, কিভাবে শিমুকে প্রচুর পরিমাণে বলকারক খাবার খাওয়ানো যায় সে উপায় জানা দরকার। এর উত্তর হলো:
– শিশুকে ঘনঘন খাওয়াতে হবে: ২৪ ঘণ্টায় ৫ থেকে ৬ বার।
– শিশুর নরম খাবারে গলানো তরিতরকারি, ছোটমাছ, ডিম, ডাল, তেল/চিনি/ গুড় মেশাতে হবে এবং তাকে মৌসুমি ফলও খাওয়াতে হবে।
– তৈরি করার পর শিশুর খাবার ঘন্টার পর ঘন্টা ফেলে রাখা যাবে না। বেশিক্ষণ রেখে দিলে খাবারে রোগজীবানু জন্মাতে পারে এবং শিশু অসুস্থ হতে পারে। আবার, দিনে ৫-৬ বার খাবার রান্না করাও সাধারণত সম্ভব হয় না। এজন্য শিশুকে শুকনো বা হালকা খাবার যেমন ফল, রুটি, মোয়া, নাড়–, বিস্কুট, বাদাম, কলা অথবা হাতের কাছে যেসব পুষ্টিকর নিরাপদ খাবার পাওয়া যায় সেগুলি খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে দিতে হবে। পাশাপাশি শিশুকে মায়ের দুধও খাওয়াতে হবে।
১ থেকে ২ বছর বয়স পর্যন্ত বুকের দুধের পাশাপাশি শিশুকে পরিবারের স্বাভাবিক খাবার খাওয়াতে হবে। শিশুর স্বাভাবিক খাবারের সাথে চিনি/গুড় মেশানো উচিত।
শিশু বাড়তি শক্তির প্রয়োজন মেটাতে পরিবারের স্বাভাবিক খাবার সমৃদ্ধ করা প্রয়োজন। খাবারে গলানো তরিতরকারি ও সামান্য পরিমাণে ঘি, সয়াবিন তেল, নারিকেল তেল, বাদাম, তেল অথবা বাদামের গুঁড়া মেশানো যেতে পারে।
লেখিকা : সহকারী অধ্যাপিকা, জেড এইচ শিকদার মেডিক্যাল কলেজ, ঢাকা।
Leave a Reply