-বরেন্দ্র নিউজ ডেস্ক :
ফেসবুকের কল্যাণে ফ্যামেলি বুকে সংযুক্ত হলেন নিখোঁজের ৭৮ বছর পর সিলেটের হাবিবুর রহমান। যেন অন্য রকম এক সিনেমা গল্প। ঠিক তেমনই এক গল্পে ব্যবসায়ী হাবিবের জীবনে জোয়ার ভাটা শেষে নোঙ্গর ঠাঁই পেয়েছে আপন ঠিকানায়। ৪৭ বছর আগে হারিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। এককালের রড সিমেন্ট সিমেন্ট ব্যবসায় জড়িত ছিলেন যুবক হাবিবুর রহমান। এখন ৭৮ বছরের বৃদ্ধ তিনি। পরিবারকে কাছে পাওয়ার আসা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলেন। র্দীঘ প্রতীক্ষা, অশেষ গল্প আশা নিরাশার দোলাচাল ছিন্ন করে অবশেষে সন্তানরাও ফিরে পেয়েছে তাদের বাবাকে। বিয়ানীবাজার মাথিউরা ইউনিয়নের বেজগ্রামের বাসিন্দা ছিলেন হাবিবুর রহমান। এখন তার পরিবার বসবাস করেন বিয়ানীবাজারের পৌর এলাকার কসবা গ্রামে।
পরিবার সূত্র ও প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, ১৯৭২ সালের প্রথম দিকে বাড়ি থেকে ব্যবসায়িক কাজে চট্রগ্রামের পথের্ ওয়না হন হাবিবুর রহমান। কিন্তু এরপর আর বাড়ি ফেরা হয়নি তার। অনেক খোঁজার পর সন্ধান না পেয়ে হতাশায় কেটেছেন প্রায় অর্ধশত বছর তার পরিবার পরিজনের। হাবিবুর রহমানের ৪ ছেলের মধ্যে ২ জন থাকেন লন্ডনে। ছেলেরা বাবাকে ফিরে পাবার আশায় বিভিন্নভাবে খোঁজতে ছিলেন। অবশেষে ফেসবুকে এক ভিডিও ভাইরালের মাধ্যমে শুক্রবার বিকেলে হাবিবুর রহমানকে ফিরে পেয়ে আবেগ-আপ্লুত সন্তানরা। প্রায় ২৫ বছর থেকে মৌলভীবাজারের শাহাবুদ্দিন মাজার এলাকায় বসবাস করতেন হাবিবুর রহমান । মানষিকভাবে ভারসাম্যহীন ছিলেন তিনি। আর ১২ বছর থেকে মৌলভীবাজারের শাহাবুদ্দিন মাজারের পাশের রায়েশ্রী গ্রামের রাজিয়া বেগম নামের (৫০) এক মহিলা বৃদ্ধ হাবিবুর রহমানকে দেখাশোনা করতেন। রাজিয়া জানান, তিনি ওই লোকের খেদমত করতেন সবসময়। ২২ দিন আগে বৃদ্ধ হাবিবুর রহমানের হাত ভেঙ্গে যায়। প্রথমে তাকে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে যান রাজিয়া বেগম। পরে সেখান থেকে সিলেট এম এ জি ওসমানী হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। ১২ বছর থেকে যে মানুষের খেদমত করে আসছেন রাজিয়া, তার এই বয়সে হাসপাতালে কিভাবে ফেলে যাবেন, কিংবা একা একা কিভাবে দেখাশুনা করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না। পাশের বেডের রোগীর স্বজনদের সাথে গল্প করছিলেন রাজিয়া, এই বৃদ্ধের বিগত দিনের জীবন নিয়ে। তাদের বাড়ীও ছিল বিয়ানীবাজার উপজেলায়। ওই ব্যক্তি হাবিবুর রহমানের একটি ভিডিও ফেসবুকে আপলোড করেন। ওই ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হতে থাকে। ভিডিওতে দেয়া হাবিবুর রহমানের ছবি এবং জীবনের অনেক গল্পের মিল দেখে আমেরিকা থেকে বিয়ানীবাজারের এক ব্যক্তি ওই ভিডিও হাবিবুর রহমানের পরিবারের কাছে পাঠান বৃহস্পতিবার রাতে। হাবিবুর রহমানের ছবি এবং ভিডিওর মিল দেখে তার ছেলেরা শুক্রবার দিনে চলে আসেন সিলেট ওসমানী হাসপাতালে। তার ২ ছেলে শাহাব উদ্দিন ও জালাল উদ্দিন কথাবার্তা বলে চিনতে পারেন তাদের হারানো বাবাকে। এরপর হাবিবুর রহমান নিজেও তার বাড়ীর ঠিকানা প্রকাশ করেন। মুর্হূতেই হারানো অতীত বর্তমানে সংযুক্ত ঘটে। বাবাকে পেয়ে আবেগঘন এক পরিবেশের সৃষ্টি হয় গোটা হাসপাতাল জোড়ে। তারা ওসমানী হাসপাতাল থেকে বাবাকে নিয়ে আসেন নগরীর আল-হারামাইন হাসপাতালে। ভর্তি করানো হয় ৬১২ নাম্বার কক্ষে। সাথে নিয়ে আসা হয় বাবাকে খেদমত করা রাজিয়া বেগমকেও। তাকেও হাবিবুর রহমানের সন্তানরা চিকিৎসা করাচ্ছেন। বাবার সাথে শ্রদ্ধাসহকারে সেবা দরজা খোলে দিয়েছেন রাজিয়া বেগমেরও তারা। পরিবারের অন্যদের মতো দাদাকে ফিরে পেয়ে নাতী কেফায়েত হোসেন অত্যন্ত খুশি। শুধু দাদার গল্প বুনেছিলেন মনে, এখন দাদা তাদের মাঝে স্বশরিরে। হাবিবুর রহমানের গোটা পরিবার রাজিয়া বেগমের প্রতি অপরিসীম কৃতজ্ঞ। পাশাপাশি তাদের কৃতজ্ঞতা ফেসবুকে হাবিবুর রহমানের ভিডিও আপলোডকারী ব্যক্তির উপরও। ।
Leave a Reply