বরেন্দ্র নিউজ ডেস্ক :
এই সময়ের আলোচিত ও জনপ্রিয় ধর্মীয় বক্তা মিজানুর রহমান আজহারীর কয়েকটি ছবি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগামাধ্যমে বেশ আলোচনা হচ্ছে। ছবিতে দেখা যাচ্ছে তরুণ এই বক্তা একটি বিলাসবহুল গাড়ির ড্রাইভিং সিটে বসা। আরেকটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে তিনি গাড়িটির সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। এই ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে দিয়ে কেউ কেউ দাবি করছেন, গাড়িটির মালিক আজহারী। আজহারী কী করে কয়েক কোটি টাকা দামের এই বিলাসবহুল গাড়ি কিনলেন সেটি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।
তবে যুগান্তরের তথ্যানুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, যে গাড়িটি নিয়ে এত কথা হচ্ছে সেটির মালিক মিজানুর রহমান আজহারী নন। সিঙ্গাপুর সফরে গিয়ে গাড়িটি তিনি কিছু সময়ের জন্য চালিয়েছিলেন মাত্র। মূলত আজহারীর সমালোচকরাই তার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করতে ফেসবুকে এই ছবি ছড়িয়ে তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছেন।
বেন্টনি স্টাইল স্পার (SJZ888IR) মডেলের এই গাড়িটির মালিক বাংলাদেশের এক ব্যবসায়ী। তার নাম সাহিদুজ্জামান টরিক। তিনি সিঙ্গাপুর-বাংলাদেশ বিজনেস চেম্বার ও সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক সভাপতি। তার বাড়ি চুয়াডাঙ্গা জেলায়।
মিজানুর রহমান আজহারী গত বছরের আগস্টের প্রথম সপ্তাহে সিঙ্গাপুরে একটি তাফসীরুল কোরআন মাহফিলে বয়ান করতে গিয়েছিলেন। সেখানকার বাংলাদেশ কনিউনিটি আয়োজিত ওই মাহফিলটি সিঙ্গাপুর সরকারের অনুমতি নিয়ে সেখানে খাদিজা মসজিদে করা হয়েছিল। সেখানে তিনি সুরাতুল মুমিনুলের ওপর তাফসীর পেশ করেন।
তখন কমিনিউটির নেতা হিসেবে মিজানুর রহমান আজহারীকে আতিথেয়তা দেন সাহিদুজ্জামান টরিক। এই সময়ে আজহারীকে নিজের গাড়িতে করে সিঙ্গাপুরের কয়েকটি দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখা টরিক। তখন আজহারী কিছু সময়ের জন্য এই গাড়িটি চালান।
এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে যোগাযোগ করা হয় সাহিদুজ্জামান টারিকের সঙ্গে। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, যে গাড়ি নিয়ে এত কথা হচ্ছে সেটির মালিক মিজানুর রহমান আজহারী নন। গাড়িটির মালিক আমি। তিনি (আজহারী) সিঙ্গাপুরে মাহফিল করতে আসলে আমার গাড়িতে চড়েন। তখন কিছু সময় তিনি গাড়িটি ড্রাইভ করেন। এর বেশি কিছু নয়।
এদিকে যারা আজহারীর গাড়ি নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছেন তাদের ভাষ্য হচ্ছে, কম করে হলেও ৫ কোটি টাকা দামের এই গাড়ির মালিক আজহারী। তিনি মালয়েশিয়া গিয়ে এই গাড়ি চালান। ইসলামের একজন দাঈ হয়ে মালয়েশিয়ায় কি করে এত দামি গাড়ি কেনেন আজহারী এমন প্রশ্ন তুলেন তারা।
তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এর প্রতিবাদ জানিয়েছেন আজহারীর সুহৃদরা। এক ব্যক্তি ফেসবুকে লিখেছেন, গাড়ির নেমপ্লেট দেখলেই বোঝা যায় এটা মালয়েশিয়ার কোনো গাড়ি নয়। এখানে SJZ888IR লেখা। আর এমন নেমপ্লেট সিঙ্গাপুরের গাড়িগুলোর হয়ে থাকে।
মাছরাঙ্গা টেলিভিশনের সাংবাদিক ও চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফাইজার রহমান ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে অপপ্রচারের প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘আমি মাইকে ওয়াজের বিরোধী। ভালো বক্তা হিসেবে অল্পসময়ে খ্যাতি পাওয়া মিজানুর রহমান আজহারীর মালয়েশিয়া ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্তে অনেকের মত আমিও খুশি। গত দুদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিজানের দামি গাড়ি নিয়ে যে খবরটি ছড়াচ্ছে তা দেখে দু লাইন না লিখে থাকতে পারলাম না। ছবিটি সত্যি। তবে, ছবিতে যে গাড়িটি দেখা যাচ্ছে সেটি মিজানুর রহমান আজাহারির নয়। কারণ এই গাড়ির মালিককে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি। ছবি দেয়া হলো , যাদের প্রয়োজন নম্বর মিলিয়ে নিন। বেন্টলি এই গাড়ীটির মালিক সিঙ্গাপুর প্রবাসী বাংলাদেশী ব্যবসায়ী সাহিদুজ্জামান টরিক। আমাদের চুয়াডাঙ্গার সন্তান। গুজব ছড়ানোর আগে একবার ভাবুন। গুজবে লবনের কেজি ২শ টাকা বানিয়েছেন……… সচেতন হোন। নিরাপদে থাকুন —’
। মিজানুর রহমান আজহারী আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক। চলতি সময়ে তার তাফসির সাড়া ফেলেছে তরুণদের মাঝে।
সময়ের এই আলোচিত বক্তা এ বছরের মার্চ পর্যন্ত সব তাফসির কর্মসূচি স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছেন। এ সময়ে গবেষণার কাজে তিনি মালয়েশিয়ায় চলে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন।
কিছুদিন আগে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক বার্তায় নিজের কর্মসূচি স্থগিত করার পেছনে পারিপার্শ্বিক কারণের কথা জানিয়েছেন এ মুফাসসির।
এ বছর বেশিরভাগ প্রোগ্রামই পারিবারিক ও সামাজিক সংকট নিয়ে কথা বলার কথা জানিয়ে তিনি জানান, পাশাপাশি কয়েকটি সুরার তাফসিরও করেছি। আশা করি, আলোচনাগুলো থেকে আপনারা উপকৃত হবেন।
আজহারী বলেন, আমি একজন নগণ্য মানুষ। মহাগ্রন্থ আল কোরআনের ছাত্র। কোরআনের ছাত্র হয়েই বেঁচে থাকতে চাই এবং নিরলস কাজ করে যেতে চাই। তাই সুপ্রিয় শ্রোতাদের বলব– প্লিজ আমাকে নিয়ে অতিরিক্ত মাতামাতি করবেন না।
আজহারী বলেন, আমি একজন নগণ্য মানুষ। মহাগ্রন্থ আল কোরআনের ছাত্র। কোরআনের ছাত্র হয়েই বেঁচে থাকতে চাই এবং নিরলস কাজ করে যেতে চাই। তাই সুপ্রিয় শ্রোতাদের বলব– প্লিজ আমাকে নিয়ে অতিরিক্ত মাতামাতি করবেন না।
সত্য একদিন উন্মোচিত হবেই হবে বলে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, দেশের সাধারণ জনতার যে ভালোবাসা পেয়েছি, জানি না সিজদায় পড়ে কতটুকু অশ্রু ঝরালে এবং কোন ভাষায় শোকরগোজার হলে এর যথাযথ শুকরিয়া আদায় হবে। মালিকের দরবারে আলিশানে লাখো কোটি শুকর ও সুজুদ। ওয়ালহামদু লিল্লাহি ‘আলান্নি’আম।
Leave a Reply