ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান:
শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীর উত্তম বাংলাদেশের এক ক্ষণজন্মা মহান ব্যক্তিত্ব। জাতির অন্যতম শ্রেষ্ঠ সন্তান জিয়াউর রহমান একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধের সূচনায় জাতির চরম সঙ্কটময় মুহূর্তে কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে তার রাজনৈতিক দৃশ্যপটে আগমন। এরপর রণাঙ্গনে যুদ্ধ পরিচালনা ও যুদ্ধ প্রশাসনের নীতিনির্ধারণে অসামান্য অবদান রেখে আপামর জনমানসে স্থান করে নেন এক মহানায়কের আসনে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের পর অভ্যুত্থান ও পাল্টা অভ্যুত্থানের ফলে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে সৃষ্ট অনিশ্চিত পরিস্থিতিতে ৭ নভেম্বর সিপাহি-জনতার এক অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রক্ষমতায় সমাসীন হন এবং ১৯৮১ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেশ পরিচালনা করেন। দেশের ইতিহাসে তার শাসনামল (১৯৭৫-১৯৮১) এক উল্লেখযোগ্য অধ্যায়। স্বল্প সময়ের শাসনামলে নানা সঙ্কটে বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে উন্নতি ও সমৃদ্ধির এক বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে অধিষ্ঠিত করে জিয়া ইতিহাসে নিজের অক্ষয় স্থান নিশ্চিত করেন। রাষ্ট্রপতি হিসেবে বহুদলীয় ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা, অর্থনীতির পুনরুজ্জীবন, সময়োপযোগী গতিশীল পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণের মাধ্যমে বিশ^রাজনীতিতে বাংলাদেশের স্বতন্ত্র অবস্থান ও গতিপথ নির্ধারণ এসব বহুমাত্রিক সাফল্যের কথা সুবিদিত এবং বহুল চর্চিতও। তবে আলোচ্য নিবন্ধের বিষয়বস্তু একটু ব্যতিক্রম। শহীদ জিয়া ছিলেন মাটি ও মানুষের নেতা। এ দেশের গরিব মেহনতি মানুষের জীবনমান উন্নয়ন ছিল তার অন্যতম জীবন সাধনা।
বাংলাদেশ একটি কৃষিপ্রধান দেশ। কৃষিই বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি ও উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি বললে অত্যুক্তি হয় না। এখনো এ দেশের মানুষের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা ও বিনোদনের অধিকাংশ উপাদান আসে কৃষি থেকে। আমাদের খাদ্যের একমাত্র উৎসও কৃষি। এ কৃষিকাজের সাথে এ দেশের বেশির ভাগ মানুষের জীবন-জীবিকা নির্ভরশীল। তবে এ কৃষি ও এর রূপকার কৃষক সব সময় এ দেশের রাষ্ট্র পরিচালকদের যথাযথ মনোযোগ পেয়েছেন বা পাচ্ছেন এমনটি নিশ্চিত করে বলার অবকাশ নেই। জিয়াউর রহমান যখন ক্ষমতাসীন হন তখনো এ কৃষি খাত ও কৃষকদের অবস্থা মোটেই ভালো ছিল না। এ অবস্থায় একজন মানবদরদি ও জনকল্যাণকামী রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে জিয়াউর রহমান নানা ধরনের পদক্ষেপ নেন।
১৯৭৯ সালের ২ এপ্রিল বাংলাদেশের দ্বিতীয় জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে উদ্বোধনী ভাষণে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কৃষিখাতের উন্নতির ওপর যথাযথ গুরুত্বারোপের কথা বলেন। বিপুল সম্ভাবনা সত্ত্বেও কৃষি ক্ষেত্রে অনগ্রসরতাকে বাংলাদেশের দারিদ্র্যের একটি প্রধান কারণ বলে তিনি আখ্যায়িত করেন। সে সময় খাদ্য ঘাটতি বাংলাদেশের অন্যতম একটি গুরুতর সমস্যা ছিল। ঘাটতি পূরণে প্রতি বছর শত শত কোটি টাকার খাদ্য আমদানি করতে হতো। ফলে জাতীয় অর্থনীতি প্রবল চাপের মধ্যে ছিল। কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে খাদ্য ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব বলে জিয়াউর রহমান বিশ্বাস করতেন। কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে এ দেশের প্রতি ইঞ্চি আবাদি ভূমিকে চাষের আওতায় এনে তাতে বছরে তিনটি ফসল উৎপাদনের ব্যাপারে তিনি কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করেন। কৃষক ও গ্রামের মানুষের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ও জাগরণ সৃষ্টির জন্য প্রেসিডেন্ট জিয়া গ্রামে গিয়ে মাইলের পর মাইল হেঁটেছেন। কৃষির উন্নয়ন ও উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য করণীয় বিষয়ে কৃষকদের পরামর্শ দিয়েছেন। বাড়ির চার দিকে পতিত জায়গায় ফল ও সবজি চাষ করার জন্য সবাইকে অনুরোধ করেছেন। রাস্তার দুই পাশে ফলের গাছ লাগানোর জন্য তিনি গ্রামবাসীদের উদ্বুদ্ধ করেছেন। রাষ্ট্রপতির নির্দেশে কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে উৎপাদিত উচ্চ ফলনশীল ধান এবং মৌসুম উপযোগী নতুন নতুন শস্যবীজ কৃষকদের মাঝে বিতরণ করা হয়। কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য কৃষির যান্ত্রিকীকরণ এবং জমিতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহারে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হয়। কৃষিতে সব থেকে বেশি ভর্তুকি এবং সুলভ মূল্যে কৃষি যন্ত্রপাতির ব্যবস্থাসহ সার ও কীটনাশকের মূল্য কৃষকের নাগালের মধ্যে রাখা হয়। সারের চাহিদা পূরণের জন্য আশুগঞ্জে জিয়া সারকারখানা প্রতিষ্ঠা করা হয়। কৃষি যন্ত্রপাতি মেরামত ও সংরক্ষণে কৃষকদের সহযোগিতা করার জন্য ছয় হাজার বেকার যুবককে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এমনকি তারা যেন নিজ এলাকায় ছোটখাটো প্রকৌশল শিল্পপ্রতিষ্ঠা করতে পারে সে জন্য প্রয়োজনীয় ঋণ এবং যন্ত্রপাতি সংগ্রহের সহায়তা দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
১৯ দফা কর্মসূচি ছিল শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের একটি কালজয়ী অবদান। রাষ্ট্রনীতিবিদরা এ ১৯ দফা কর্মসূচিকে একটি যুগোত্তীর্ণ ‘ভিশন’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। জিয়াউর রহমান এ কর্মসূচি নিয়ে সারা দেশে ব্যাপক গণসংযোগ করেন। চার সপ্তাহের জনসংযোগ কর্মসূচিতে তিনি ৭০টি জনসভায় ১৯ দফা কর্মসূচির যৌক্তিকতা সম্পর্কে তার বক্তব্যে তুলে ধরেন। ১৯ দফা কর্মসূচির ৫ নম্বর দফায় ‘সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কৃষি উন্নয়নের মাধ্যমে গ্রামীণ তথা জাতীয় অর্থনীতি জোরদার করা’ এবং ৬ নম্বর দফায় ‘দেশকে খাদ্যে স্বয়ংস¤পূর্ণ করা এবং কেউ যেন ভুখা না থাকে’, তার ব্যবস্থা করার কথা বলা হয়।
কৃষি উৎপাদনে সেচের গুরুত্ব অপরিসীম। সেচের জন্য এ দেশের কৃষকরা প্রধানত বৃষ্টির পানির ওপরই নির্ভরশীল ছিলেন। ১৯৭১ সালে আবাদি জমির মাত্র ১৫ শতাংশ সেচের আওতায় ছিল। সেচের জন্য বৃষ্টির পানির ওপর নির্ভরশীলতা কমানোর তাগিদ থেকে কৃষি খাতে উন্নতির লক্ষ্যে জিয়া সরকার ব্যাপকভিত্তিক ‘খাল খনন কর্মসূচি’ বাস্তবায়নের মাধ্যমে খরা মৌসুমে কৃষকদের জন্য পর্যাপ্ত সেচ সুবিধা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেন। খাল খনন কর্মসূচিকে জিয়াউর রহমান একটি ‘বিপ্লব’ হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। ১৯৭৯ সালের ১ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতি স্বয়ং উলশী-যদুনাথপুরের বেতনা নদীতে স্বেচ্ছাশ্রমভিত্তিক খাল খনন কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। এরপর প্রথম বছরেই ৫০ লাখ একর কৃষি জমিতে সেচ সুবিধা প্রদানযোগ্য ১০৩টি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। ১৯৮০ সালে আরও ২৫০টি নতুন প্রকল্প চালু হলে ১৮০ লাখ একর কৃষিজমি সেচের আওতায় আসে। ১৯৮১ সালের মে মাস পর্যন্ত জিয়া সরকারের খাল খনন কর্মসূচি চালু ছিল। প্রাপ্ত পরিসংখ্যান মতে, সরকার দেড় বছরের মধ্যেই দেড় হাজারেরও অধিক খাল খনন ও পুনঃখনন করে। সেই সাথে বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষকদের সেচ সুবিধার জন্য গভীর নলকূপ স্থাপনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এভাবে তিনি বাংলার খরাকবলিত কৃষকের ভূমিতে পানির প্রবাহ ঘটিয়ে বাংলায় ‘সবুজ বিপ্লবের’ জন্ম দিয়েছিলেন।
শুধু সেচ সুবিধা বৃদ্ধি নয়, কৃষি খাতের উন্নতির জন্য জিয়া সরকার কৃষকদের কৃষিঋণ দেয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। ১৯৭৭ সালে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে কৃষকদের মধ্যে স্বল্পমেয়াদি ১০০ কোটি টাকার বিশেষ ঋণ বিতরণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। একজন কৃষক নির্ধারিত ঋণ পরিশোধ করে বছরে তিনটি ফসলের জন্য ঋণ নিতে পারতেন। ঋণ নেয়ার জন্য জমি ব্যাংকে দেয়ার প্রয়োজন হতো না।
রাষ্ট্রপতি জিয়া বর্গাচাষিদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার ব্যবস্থা করেন। অন্যান্য ব্যবস্থার সাথে খাস জমি বন্দোবস্ত প্রদানে তাদের অগ্রাধিকার দেয়া হয়। জমি বন্ধক দিতে হতো না বলে বর্গাচাষিরাও কৃষিঋণ নিতে পারতেন। কৃষি উৎপাদনে সমবায় পদ্ধতির প্রচলনের ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়। জিয়া সরকারের গৃহীত এসব কৃষিবান্ধব কর্মসূচির ফলে বাংলাদেশে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পায় এবং পরপর দুই বছর বাংলাদেশে খাদ্যশস্যের রেকর্ড পরিমাণ উৎপাদন হয়। ১৯৭৪ সালের অনুরূপ দুর্ভিক্ষ যেন না হয় সে জন্য জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে খাদ্যশস্য মজুদের ব্যবস্থা করা হয়। সরকারিভাবে ন্যায্যমূল্যে চাষিদের কাছ থেকে ধান-চাল ক্রয়ের ব্যবস্থা সম্প্রসারণ ও জোরদার করা হয়। সোনালি আঁশ নামে খ্যাত পাটচাষ সম্প্রসারণের ব্যবস্থা করা হয়। কৃষক যেন পাটের ন্যায্যমূল্য পান সে জন্য মূল্য নির্ধারণসহ নানা কার্যকর ব্যবস্থা করা হয়। বহুমুখী পাটজাত পণ্য উৎপাদন ও রফতানি বৃদ্ধির জন্য পাটকলগুলোতে উৎপাদন বৃদ্ধির সহায়ক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়। জিয়ার আমলে এ দেশে রেশম ও রাবার উৎপাদন সম্প্রসারণ করা হয়।
স্বাধীন বাংলাদেশে মুজিব সরকারের আমলে গৃহীত প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার মেয়াদ ১৯৭৮ সালে শেষ হয়। এ অবস্থায় রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নতুন একটি পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা গ্রহণের আগে একটি দ্বিবার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। এ দ্বিবার্ষিক পরিকল্পনার প্রধান লক্ষ্য ছিল উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জন। এ লক্ষ্য অর্জনে কৃষির উন্নয়নে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছিল। কৃষি খাতের জন্য পরিকল্পিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে ছিল উচ্চফলনশীল জাতের কৃষিপণ্য আবাদের মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন কমপক্ষে দ্বিগুণ বৃদ্ধি, বর্ধিত হারে বনায়ন এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করা ইত্যাদি। আমাদের খাদ্য তালিকায় আমিষের সরবরাহের একটি অন্যতম উৎস হলো মাছ। জিয়াউর রহমান হাজা-মজা পুকুর ও জলাশয় সংস্কার করে এতে পরিকল্পিত উপায়ে মাছ চাষের ব্যবস্থা করেন। দ্বিবার্ষিক পরিকল্পনায় খননকৃত খালে মাছচাষ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছিল। আমিষ চাহিদা পূরণে হাঁস-মুরগির উৎপাদন বৃদ্ধির ব্যবস্থা করা হয়। এজন্য উন্নত জাতের হাঁস-মুরগির খামার প্রতিষ্ঠা করা হয়। কৃষি চাষাবাদ, মাংস্য ও দুগ্ধ উৎপাদনের লক্ষ্যে গবাদিপশু পালনে কৃষকদের বিশেষভাবে উদ্বুদ্ধ করা হয়। সরকারিভাবে উন্নতমানের গবাদি পশুর প্রজনন, পশুখামার প্রতিষ্ঠা, পশুখাদ্য উৎপাদনের কারখানা স্থাপন এবং পশু চিকিৎসা সম্প্রসারণের ব্যবস্থা করা হয়।
১৯৮০ সালের জুলাই মাসে জিয়া সরকার দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রবর্তন করেন। এ পরিকল্পনারও প্রধান লক্ষ্য ছিল কৃষিখাতের উন্নয়নের মাধ্যমে গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়ন ও বিকাশ। এ লক্ষ্যে কৃষি পদ্ধতির দ্রুত রূপান্তরের জন্য আধুনিক প্রযুক্তির সংযোজনের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। পুষ্টি চাহিদা পূরণে মাছ চাষ বৃদ্ধি এবং কাঠ উৎপাদন ও পরিবেশ রক্ষার জন্য বনায়ন বৃদ্ধির ওপর বিশেষ জোর দেয়া হয়। স্বনির্ভর বা আত্মনির্ভরশীল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জীবনের অন্যতম ব্রত ছিল। ভিক্ষুকের হাতকে কর্মীর হাতে পরিণত করার উদ্দেশ্য সামনে রেখে একটি জাতীয় আন্দোলন হিসেবে ১৯৭৫ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর স্বনির্ভর বাংলাদেশ কর্মসূচির সূচনা করেন। গ্রাম, ইউনিয়ন, থানা, মহকুমা, জেলা ও জাতীয় পর্যায়ে স্বনির্ভর সমিতি গঠন করা হয়। স্বনির্ভর সমিতির তত্ত্বাবধানে গ্রামে বৃক্ষরোপণ, মাছ ও হাঁস-মুরগি পালনের খামার তৈরি হয়। জিয়ার স্বনির্ভর বাংলাদেশ কর্মসূচির আরেকটি সাহসী পদক্ষেপ ছিল ‘গ্রাম সরকার’ ব্যবস্থা। গ্রাম সরকারের ক্ষমতা ও কর্মকাণ্ডের পরিধির মধ্যে অন্যতম ছিল খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে সরকারি নীতি কর্মসূচি বাস্তবায়নে কৃষকদের সহায়তা ও সরকারের সব উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের তদারকি। বস্তুত রাষ্ট্রপতি জিয়ার এসব কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে কৃষি উৎপাদনে বিপ্লব ঘটে। গ্রামীণ অর্থনীতিতে প্রাণচাঞ্চল্যের সৃষ্টি হওয়ায় কৃষক ও গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনমানের উন্নতি ঘটে। জিয়াউর রহমান বিশ্বাস করতেন, গ্রামবাংলার উন্নতির ওপরই নির্ভর করে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ। এ জন্যই তিনি তার স্বল্পকালীন শাসনামলে গ্রামীণ কৃষি ও কৃষক সমাজে উন্নতির লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন। এ দেশের কৃষক সমাজ তাকে গ্রহণ করেছিলেন তাদের বন্ধু ও একান্ত স্বজন হিসেবে। বাংলাদেশের একজন জনপ্রিয় গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ও কৃষি সাংবাদিক শাইখ সিরাজ ১৯৯৫ সালে বিটিভিতে প্রচারিত ‘মাটি ও মানুষ’ অনুষ্ঠানে কৃষি ক্ষেত্রে অনন্য অবদানের জন্য শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে ‘কৃষকপিতা’ উপাধি দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন।
জিয়াউর রহমান সত্যিকার অর্থেই একজন কৃষকবন্ধু ছিলেন। কৃষকদের স্বার্থ রক্ষা এবং তাদের উন্নয়নের জন্যই তিনি জাতীয়তাবাদী কৃষক দলও গঠন করেছিলেন। কৃষি ও কৃষকের উন্নতির জন্য গৃহীত বহুমুখী কার্যক্রমের জন্য তিনি এ দেশের মানুষের মনের মণিকোঠায় অমর হয়ে আছেন, থাকবেন। ৩০ মে জিয়ার শাহাদৎবার্ষিকী। এ মহান রাষ্ট্রনায়কের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা।
লেখক : অধ্যাপক, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, ঢা.বি.
e-mail : s_rahman_khan@yahoo.com
নয়া দিগন্ত
Leave a Reply