বরেন্দ্র নিউজ ডেক্স:ভরা আদালত। শুনানি চলছে। কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে হত্যা মামলার আসামি। অপরাধী সাব্যস্ত করার শক্ত কোনো প্রমাণও নেই। তা সত্ত্বেও ওপরের নির্দেশ, শাস্তি দিতেই হবে অভিযুক্তদের।
শেষ পর্যন্ত ওপরওয়ালার চাপ উপেক্ষা করেই আসামিদের বেকসুর খালাস দিলেন বিচারক। এখানেই শেষ নয়। ন্যায়বিচারে বাধা দেয়ার প্রতিবাদ জানালেন সঙ্গে সঙ্গেই। এজলাসে বসেই পকেট থেকে পিস্তলটি বের করলেন।
নিজের বুকেই চালালেন গুলি। এর আগে প্রতিবাদী বক্তব্য দিয়ে সেটা সামাজিক মাধ্যমে পোস্টও করেন। দক্ষিণ থাইল্যান্ডের ইয়ালা আদালত ভবনের তৃতীয় তলায় শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৩টায় ঘটে ঘটনাটি।
দ্রুত বিচারককে হাসপাতালে নেয়া হয়। অপারেশনের পর বর্তমানে তিনি শঙ্কামুক্ত। ন্যায়বিচারে এমন নজিরবিহীন প্রতিবাদের জন্য এখন প্রশংসায় ভাসছেন বিচারক কানাকর্ন পিয়ানচানা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তো বটেই, থাইদের মুখে মুখেও এখন একটাই কথা- ‘একেই বলে বিচারক। এরই নাম বিচার’।
থাইল্যান্ডের বিচার বিভাগ ও এর বিচারিক প্রক্রিয়া নিয়ে ঢের অভিযোগ রয়েছে। দেশটির সচেতন মহল ও সুশীল সমাজ বলছে, আদালত এখন ধনী ও প্রভাবশালী ছাড়াও আর কাউকে চেনে না।
রায় বেশিরভাগই পয়সাওয়ালা ও প্রভাবশালীদের পক্ষেই যায়। অন্যদিকে ছোট্ট অপরাধে সাধারণ মানুষকে দেয়া হয় গুরুতর সাজা। তারপরও বিচার ব্যবস্থা নিয়ে এ যাবৎ কোনো বিচারকই প্রতিবাদ করেননি।
নিজের বুকে গুলি চালানোর আগে বিচারক খানাকর্নের লেখা বিবৃতিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ২৫ পৃষ্ঠার ও বিবৃতি থেকে জানা যায়, তিনি যে মামলার শুনানি করছিলেন তা জাতীয় নিরাপত্তা এবং গোপন সংগঠন, ষড়যন্ত্র ও অস্ত্রবিষয়ক।
থানাকর্নের দাবি, মামলায় রায় নিয়ে জ্যেষ্ঠ বিচারকদের মধ্যে মতানৈক্য দেখা দেয়। প্রমাণের অভাবে পাঁচ অভিযুক্তকে খালাস দিতে চেয়েছিলেন খানাকর্ন। তবে জ্যেষ্ঠ বিচারকেরা তাকে তিন অভিযুক্তকে মৃত্যুদণ্ড ও বাকি দু’জনকে কারাদণ্ড দিতে চাপ দেয় বলে ওই বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে।
লেখা হয়েছে, ‘এই মুহূর্তে অন্যান্য অধস্তন বিচারকদের সঙ্গেও একই আচরণ করা হচ্ছে যেমনটি আমার সঙ্গে হয়েছে। আমি (যদি) আমার শপথ না রাখতে পারি, তাহলে সম্মান ছাড়া বাঁচার চেয়ে আমি মরে যাব।’
শুক্রবার রাতের পর ফেসবুকে আর ওই বিবৃতিটি পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে ব্যাংকক পোস্ট। তবে বিবৃতিটি সামনে আসার পর থাইল্যান্ডের বিচার ব্যবস্থা নিয়ে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে। অভিযোগ ওঠে, জ্যেষ্ঠ বিচারকেরা রাজনৈতিক উদ্দেশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে রায় পাল্টে দিচ্ছে।
থাই বিচার বিভাগের এক মুখপাত্র ব্যাংকক পোস্টের কাছে দাবি করেছেন, খানাকর্ন দৃৃশ্যত নিজেকে গুলি করেছেন কারণ তার ব্যক্তিগত সমস্যা ছিল আর তিনি চাপে ছিলেন।
তবে দেশটির রাজনৈতিক দল ফিউচার ফরোয়ার্ড পার্টির সাধারণ সম্পাদক পিয়াবুতর সায়েংকানোক্কুল বলেছেন, সেপ্টেম্বরের শুরু থেকেই আদালত ব্যবস্থার সংকটকে প্রকাশ্যে আনার চেষ্টায় ছিলেন খানাকর্ন।
Leave a Reply