অনলাইন ডেস্ক: ১৯৯২ সনের ৬ ডিসেম্বর। ৪০ কেজি ওজনের কুঠার হাতে প্রচণ্ড আক্রোশে ক্ষিপ্ত এক যুবক শরিক হয়েছে ৫ লক্ষ উন্মাতাল মানুষের মিছিলে, বাবরি মসজিদ ভাঙার নারকীয় তাণ্ডবে। নাম তার বলবীর সিং। প্রথম কোপ দেবার জন্য কুঠার ওপরে তোলার সাথে সাথেই তার বুক ধড়ফড় করা শুরু হলো। বহু কষ্টে প্রথম কোপ দেবার পর, দ্বিতীয়বার কোপ দেবার আর সাহস হচ্ছিল না। অনেক কষ্টে দ্বিতীয় কোপ দেবার পর ৩য় কোপ দেবার জন্য যখন কুঠার ওপরে তুলেছে, এবার সে আর কোনোভাবেই কুঠার নামাতে পারছে না। এখন সে চোখের সামনে শুধু মৃত্যু দেখতে পাচ্ছে। কুঠারটা কোনোভাবে তার মাথায় পড়লে মৃত্যু অবধারিত, যে উঁচুতে উঠে সে বাবরি মসজিদ ভাঙছিল সেখান থেকে নিচে পড়ে গেলেও মৃত্যু সুনিশ্চিত, তার হৃদপিণ্ড যেভাবে কাঁপছে যে কোনো সময় হার্ট অ্যাটাকে সে মারা যেতে পারে। এমতাবস্থায় তার সহযোগীরা তাকে নিচে নামিয়ে আনে।
বলবীর বাড়ি ফিরে আসে। কিন্তু অবস্থা এরকম হয় যে, সে কিছুতেই শান্তি পাচ্ছিল না। এর পর থেকে প্রায় ছয়টা মাস তার কেটেছে কখনো গাছের নিচে, কখনো রাস্তায় রাস্তায়। জীবনটা বিতৃষ্ণ হয়ে ওঠে। কোনোভাবেই স্বাভাবিক হতে পারছিল না। অবশেষ ৬ মাসের মাথায় ভারতের বিখ্যাত দাঈ মাওলানা কালিম সিদ্দিকির হাতে ইসলাম গ্রহণ করে বলবীর সিং। তার নতুন নাম হয় মুহাম্মাদ আমির।
কথা এখানেই শেষ নয়, বরং শুরু। যে হাত একদিন মসজিদ ভাঙতে উদ্যত হয়েছিল, সেই হাতে আজ গড়ে উঠছে, আবাদ হচ্ছে মসজিদের পর মসজিদ। দেশভাগের পর মুসলিমদের যে মসজিদগুলোকে গোয়ালঘরে রূপান্তরিত করেছিল উগ্র হিন্দুরা, মুহাম্মাদ আমির সেগুলোকে আবার মসজিদ হিসেবে আবাদ করে চলেছেন। প্রচণ্ড অনুতপ্ত এই মানুষটি এই পর্যন্ত প্রায় ৯০টি মসজিদ তৈরি করেছেন। শুধু তাই নয় নিজে ইসলাম সম্পর্কে গভীর জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি মুহাম্মাদ আমির হিন্দুদের মাঝে দাওয়াতি কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন উদ্দমের সঙ্গে। এখন পর্যন্ত প্রায় ১০,০০০ মানুষ তার মাধ্যমে ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় গ্রহণ করেছে।
সুত্রঃ দৈনিক অধিকার
Leave a Reply