সাইফুর রহমান শামীম , কুড়িগ্রাম
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টির কারণে কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র ও দুধকুমার নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় সাময়িক বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এতে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়েছে বলে জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন। বন্যা পরিস্থিতির অবনতির ফলে গত তিনদিন ধরে ঘরের ভিতর মাচা ও চৌকি উঁচু করে আশ্রয় নিয়েছে বানভাসি মানুষ। চৌকিতে রান্না-বান্না, চৌকিতেই রাত কাটছে তাদের। বাড়ির চারপাশে থৈথৈ পানিতে অসহায় দিন কাটছে নারী, শিশু ও প্রতিবন্ধী মানুষের।
উলিপুরের বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের বালাডোবা গ্রামের আসমত ও নুরবানু জানান, গত তিনদিন ধরে পানিবন্দী অবস্থায় আছি। ছেলে মেয়েকে উঁচু জায়গায় রেখে গরু-ছাগল পাহারা দিচ্ছি। এখনো কেউ খোঁজখবর নিতে আসেনি।
একই ইউনিয়নের ফকিরের চর গ্রামের রমিচন জানান, ঘরে পানি। রান্না করতে সমস্যা হচ্ছে। গরুকেও কিছু খাইতে দিতে পারছি না। বাচ্চারা কান্নাকাটি করছে।
একই গ্রামের ফরিদা জানান, চারটে ভাত ফুটাচ্ছি। তরকারি নাই। লবন দিয়া খাইতে হইবো। ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব সাইদুর রহমান জানান, আমার ইউনিয়নের ১০ টি গ্রামের প্রায় এক হাজার মানুষ পানিবন্দি রয়েছে।
যাত্রাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুল গফুর জানান, আমার ইউনিয়নে ১৫শ মানুষের বাড়িঘর তলিয়ে গেছে। এছাড়াও ৮ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে আছে।
বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের মেম্বার আব্দুল হামিদ শেখ জানান, আমার ওয়ার্ডে দেড়শ ঘরে পানি উঠেছে। এছাড়াও এই ইউনিয়নে প্রায় ৮শ’ পরিবার পানিবন্দী অবস্থায় আছে।
ফকিরের চরে একটি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ৮০টি পরিবার আশ্রয় নিলেও তারা বিশুদ্ধ পানি ও ল্যাটিন সমস্যায় ভুগছেন।
এ ব্যাপারে উলিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আতাউর রহমান জানান, আমি বিষয়টি জানলাম। এখনেই জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের মাধ্যমে লোকজনকে পাঠাচ্ছি সমাধানের লক্ষে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী
রাফসান জানি সাংবাদিকদের জানান, কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্রের নুনখাওয়া পয়েন্টে ১৮ এবং ব্রহ্মপুত্রের চিলমারী নৌবন্দর পয়েন্টে ১৯ এবং পাটেশ্বরী রেল সেতু পয়েন্টে দুধকুমার নদীর পানি ০১ সেন্টিমিটার বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরিফ জানান, বন্যা কবলিত কুড়িগ্রাম সদর, চিলমারী, উলিপুর ও নাগেশ্বরীতে খোঁজখবর নেয়ার পাশাপাশি ইতিমধ্যে দুর্গত এলাকায় এক হাজার ২শত পরিবারকে ১০ কেজি করে চাল সহ অন্যান্য বিতরণ করা হয়।
এর মধ্যে উলিপুর উপজেলার থেতরাই ইউনিয়নে ১০০ জনের মাঝে ১০ কেজি হারে চাল বিতরণ চলছে। চিলমারী উপজেলার রমনা, নয়ারহাট ও চিলমারী প্রত্যেকটি পয়েন্টে ১০ কেজি হারে মোট ৬ মেট্রিক টন চাল বিতরণ হয়, উপকারভোগীর সংখ্যা ৬শত। কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার বিকালে চরভগবতীপুর, খেয়ার আলগা, কালীর আলগা, পোরার চরে ১৫০ প্যাকেট ত্রাণ বিতরণ করা হয় (প্রতি প্যাকেটে থাকবে ১০কেজি চাল, ডাল ও তেল)। নাগেশ্বরী উপজেলার গরুভাসার চর, ফকিরগঞ্জ, নুনখাওয়ার চরকাপনা ও নুনখাওয়া পয়েন্টে ২০০শ পরিবারের মাঝে পরিবার প্রতি ১০ কেজি হারে চাল, ১ কেজি ডাল, ১লি:
তেল ও ১ কেজি লবণ বিতরণ হয়।
এছাড়া ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটায় ১৫০ জন পরিবারকে ১০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়।
Leave a Reply