বরেন্দ্র নিউজ আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেছেন, ইরানের পরমাণু কর্মসূচির ওপর মার্কিন হামলা হলে যুক্তরাষ্ট্রকে দশ বারের বেশি ধ্বংস করা হবে।
জুমার নামাজের খুতবায় তিনি এ হুশিয়ারি দেন। এদিকে, ইরাক থেকে মার্কিন সেনাদের সরিয়ে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে দেশটির সশস্ত্র স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন পপুলার মোবিলাইজেশন ইউনিট (হাশদ আশ-শাবি)। ইউনিটের রাজনৈতিক শাখার সদস্য মাহমুদ আর রুবাই হুশিয়ার করে বলেন, ইরাক থেকে অবিলম্বে মার্কিন সেনাদের না সরালে তাদের ওপর হামলা করা হবে।
৮ জানুয়ারি ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় আহত ১১ মার্কিন সেনা মস্তিষ্কের সমস্যায় ভুগছেন বলে জানা গেছে। জার্মানিতে তাদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। যদিও যুক্তরাষ্ট্র দাবি করেছিল ওই হামলায় কোনো মার্কিন সেনা আহত হয়নি। খবর বিবিসি, রাশিয়া টুডে, নিউইয়র্ক পোস্ট, এএফপি, সিএনএন, আলজাজিরা ও রয়টার্সের।
ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি ৮ বছর পর শুক্রবার জুমার নামাজ পড়িয়েছেন। দখলদার ইসরাইলকে ক্যান্সারের টিউমার বলে আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, দেশটির বিরোধিতাকারীদের সহায়তা দেয়া হবে। এছাড়া ইরানের পরমাণু কর্মসূচির ওপর যে কোনো মার্কিন হামলার বিরুদ্ধে হুশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রকে দশ বারের বেশি ধ্বংস করা হবে।
খুতবায় খামেনি বলেন, ড্রোন হামলা চালিয়ে কাসেম সোলেমানিকে হত্যা মার্কিন প্রশাসনের জন্য লজ্জার। এটা তাদের সন্ত্রাসী চরিত্র। এর আগে এ হত্যাকাণ্ডের কঠিন প্রতিশোধ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি। ৮ জানুয়ারি ইরাকে মার্কিন ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। ওই হামলার প্রশংসা করে খামেনি বলেন, উদ্ধত শক্তির মুখে থাপ্পড় দেয়ার শক্তি ইরানের রয়েছে। এতে বোঝা যাচ্ছে, আল্লাহ আমাদের সহায়।
জুমার নামাজ পড়তে আসা মুসল্লিদের হাতে সোলেমানি ও ইরাকি কমান্ডার আবু মাহদি আল মোহানদেসের ছবি শোভা পাচ্ছিল। এ সময় অনেকেই আমেরিকা ও ইসরাইলের পতাকায় আগুন দেন।
তেহরানের মোসাল্লা মসজিদে জুমার নামাজের ইমামতি করেন ৮০ বছর বয়সী খামেনি। তবে এর সঙ্গে বর্তমান পরিস্থিতির কোনো সম্পর্ক রয়েছে কিনা, সে সম্পর্কে কোনো আভাস পাওয়া যায়নি। এর আগে ২০১২ সালে ইসলামী বিপ্লবের ৩৩তম বার্ষিকীতে জুমায় ইমামতি করেছিলেন তিনি। তখন আরব বসন্তের প্রভাবে পুরো মধ্যপ্রাচ্য উত্তাল ছিল।
দ্য ওয়াশিংটন ইন্সটিটিউট ফর নিয়ার ইস্ট পলিসির মাহদি খালাজি বলেন, জুমার নামাজের খামেনির ইমামতি এক ধরনের প্রতীকী তাৎপর্য বহন করে। ইরানের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ যখন কোনো গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিতে চান তখনই এ সময়টা বরাদ্দ রাখা হয়। তিনি বলেন, জুমার ইমামতি সাধারণত খুতবা দেয়ার ভালো দক্ষতাসম্পন্ন ধর্মীয় নেতাদের দায়িত্ব।
১৯৮৯ সালে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হন তিনি। ইরানে তার কথার ওপরে কারও কোনো কথা বলার সুযোগ নেই। তিনিই দেশটির গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেন। সোলেমানির জানাজায় তাকে কাঁদতে দেখা গিয়েছিল। খামেনির পরপরই ইরানের দ্বিতীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তি মনে করা হতো জেনারেল কাসেম সোলেমানিকে। তিনি ছিলেন খামেনির বিশ্বস্ত সঙ্গী। মার্কিন হামলায় সোলেমানি নিহত হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রকে হুমকি দিয়ে খামেনি বলেছিলেন, সোলেমানির হত্যাকারী ইরানের শত্রুদের জন্য কঠিন প্রতিশোধ অপেক্ষা করছে।
যুক্তরাষ্ট্র সেনা না সরালে হামলা করা হবে : বৃহস্পতিবার এক সাক্ষাৎকারে পপুলার মোবিলাইজেশন ইউনিটের রাজনৈতিক শাখার সদস্য রুবাই বলেন, ইরাক থেকে যুক্তরাষ্ট্র তাদের সামরিক বাহিনী সরিয়ে না নিলে তাদের ভয়াবহ পরাজয়ের মুখে পড়তে হবে। তিনি বলেন, মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করে নেয়ার ব্যাপারে ইরাকের জাতীয় সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে প্রস্তাব পাস হওয়ার পরও আমেরিকা যদি তাতে সহযোগিতা না করে তাহলে হাশদ আশ-শাবি মার্কিন সেনাদের ওপর হামলা চালাবে।
রুবাই আরও বলেন, আমার মনে হয় মার্কিন সেনারা প্রতিরোধ আন্দোলনের মুখোমুখি হতে ভয় পাচ্ছে। কারণ এ ব্যাপারে তাদের তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে। ২০১১ সালের চেয়ে ইরাকের প্রতিরোধ সংগঠনগুলো এখন অনেক বেশি সুসংগঠিত ও শক্তিশালী। তারা আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি প্রস্তুত। ইরাকের প্রভাবশালী শিয়া আলেম মুক্তাদা আল সদর মার্কিন সেনা বহিষ্কারের দাবিতে মিলিয়ন-ম্যান মার্চ করার ঘোষণা দেয়ার ২ দিন পর হাশদ আশ-শাবির পক্ষ থেকে রুবাই এসব কথা বলেন।
৩ জানুয়ারি মার্কিন সেনারা ইরানের ইসলামী বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল কাসেম সোলেমানিকে হত্যা করে। এরপর ৫ জানুয়ারি ইরাকের সংসদ সে দেশ থেকে মার্কিন সেনা বহিষ্কারের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে সর্বসম্মতিক্রমে একটি প্রস্তাব পাস করে। কিন্তু মার্কিন সরকার এ ব্যাপারে অনীহা প্রকাশ করে আসছে। এ নিয়ে ইরাক ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
আহত মার্কিন সেনারা মস্তিষ্কের সমস্যায় ভুগছেন : ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় মস্তিষ্কের সমস্যায় ভুগছেন যুক্তরাষ্ট্রের ১১ সেনা। যদিও ইরাকে অবস্থিত মার্কিন ঘাঁটিতে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলে দাবি করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। তবে এবার সুর পাল্টেছে পেন্টাগন। মার্কিন সেনাবাহিনী জানায়, গত সপ্তাহে চালানো ইরানের হামলায় ১১ মার্কিন সেনা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
ইরাকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইরত মার্কিন জোটের কর্মকর্তারা এক বিবৃতিতে বলেন, হামলার পর সেনাদের মস্তিষ্কে সমস্যা (কনকাশন সম্পর্কিত লক্ষণ) দেখা দিয়েছে। তাদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তবে হামলায় কোনো মার্কিন সেনা নিহত হয়নি। সেনাদের জার্মানিতে চিকিৎসা চলছে। সুস্থ হওয়ার পর তারা আবার ইরাকের মার্কিন ঘাঁটিতে ফিরে যাবেন।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, হামলার পর ট্রমায় আক্রান্ত মার্কিন সেনাকে ইরাকের আল-আসাদ বিমানঘাঁটি থেকে জার্মানিতে অবস্থিত ল্যান্ডথুহল রিজিওয়ানাল মেডিকেল সেন্টারে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।
এক মার্কিন সামরিক কর্মকর্তা জানান, ইরানের হামলার কয়েক দিন পরে সেনাদের মধ্যে উপসর্গ দেখা দেয়। সতর্কতার অংশ হিসেবে তাদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
ইরানের হাতে অনেক বেশি ইউরেনিয়াম : ২০১৫ সালে ছয় বিশ্বশক্তির সঙ্গে পরমাণু চুক্তি সই করার আগে যতটা ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করত ইরান, বর্তমানে তার চেয়েও বেশি করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ইরানি প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি। বৃহস্পতিবার এক ভাষণে এমন তথ্য জানিয়ে তিনি হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন। তিনি বলেন, চুক্তিতে পৌঁছানোর আগে যতটা ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতাম, বর্তমানে তার চেয়েও বেশি করা হচ্ছে। এ বিষয়ে ইরানের বিরুদ্ধে চাপ বাড়লেও নিজেদের এগিয়ে যাওয়ার পথ অব্যাহত রাখার কথা ঘোষণা করেছেন রুহানি।
তিনি বলেন, গত বছর এ চুক্তি থেকে একতরফাভাবে সরে যাওয়ার ঘোষণা দেয় ট্রাম্প প্রশাসন। এরপর থেকে ইরানের ওপর সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগের নীতি থেকে একের পর এক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যাচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তেহরানের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়, ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তিতে যেসব নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল, তার কোনোটিই আর মানা হবে না। ইরানের মন্ত্রিসভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
Leave a Reply