পৃথিবী আজ থমকে গেছে। সুনসান নীরবতা। যে পৃথিবীকে গেøাবাল ভিলেজ বলা হতো, তা আজ বিচ্ছিন্ন। এক দেশ থেকে আরেক দেশের ফ্লাইট বন্ধ। স্কুল, কলেজ, ভার্সিটি বন্ধ। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। বন্ধ মসজিদ, উপাসনালয়। বন্ধ সভা-সমাবেশ, সেমিনার। দেশে দেশে লকডাউন আর কারফিউ জারি হয়ে গেছে। থেমে গেছে আজ তথাকথিত কাছে আসার গল্প। সবাই দূরত্বে অবস্থান করছে। থেমে গেছে জনজীবন। ক্রিকেট খেলার স্কোরের মতো লাশের স্কোর দেখা হচ্ছে। দেশে দেশে লাশের মিছিল। বিশ্বের মোড়ল দেশগুলো আর বড় হর্তাকর্তা নেতারা অসহায়। অসহায় সেসব দেশের জনগণ। সবাই বলছে, ঘরে অবস্থান করুন। বের হবেন না। ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্্র একটি ভাইরাসের কাছে নিরুপায় সব প্রযুক্তি। কারো কোনো ক্ষমতা, দাপট আর নেতৃত্ব কাজে আসছে না। কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ পাক সবার উদ্দেশে বলবেন, ‘আজ রাজত্ব কার? এক প্রবল পরাক্রান্ত আল্লাহর’ (সূরা গাফির-১৬)। কিয়ামত আসার আগেই তার নমুনা আজ বিশ্ববাসী হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। এটা আল্লাহ পাকের পক্ষ থেকে বিশ্ববাসীর জন্য সতর্কসঙ্কেত। বিশ্ববাসীর চোখে আঙল দিয়ে দেখিয়ে দেয়া হচ্ছে, জুলুম বন্ধ করার জন্য, অনাচার আর ব্যভিচার বিদূরিত করার জন্য। অন্যায়ভাবে কারারুদ্ধ না করার জন্য, পাপাচারে লিপ্ত না হওয়ার জন্য। শোষণ না করার জন্য। সব ধরনের অপকর্ম ত্যাগ করার জন্য এটি সঙ্কেত, মহাসঙ্কেত।
তার পরও কি আমরা আল্লাহর দিকে ফিরব না? তাঁকে স্মরণ করব না? তাঁর ইবাদতে লিপ্ত হবো না? তার আদেশ-নিষেধ মানব না? আল্লাহ পাক তাঁর দিকে ফিরে যাওয়ার আহŸান জানিয়ে বলেন, ‘অতএব আল্লাহর দিকে ধাবিত হও’ (সূরা আজ জারিয়াত-৫০)। এ সত্তে¡ও কি আমাদের ঘুম ভাঙবে না? আমাদের জন্য আজ মসজিদের দরজা বন্ধ, বন্ধ তাঁর বাড়ি কাবার পানে ছুটে চলার, বন্ধ তাঁর হাবিবের জিয়ারত। চাইলেই যেতে পারছি না, পারব না। কবে খুলবে তার কোনো সহজ উত্তর আপাতত মিলছে না। সত্যিই কি আমাদের রব আমাদের প্রতি রাগান্বিত হয়ে আছেন? আমরা দিন দিন তাঁর অবাধ্যতার মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছি। আমাদের জন্য আর কোনো পথ খোলা নেই। আল্লাহর রহমতের দরজা ছাড়া। এখনো আল্লাহ তায়ালার রহমতের দরজা খোলা রয়েছে। আমরা যদি তাঁকে ডাকতে পারি। এখনো আমাদের রব ডেকে বলছেন, ‘মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহ তায়ালার কাছে তাওবা করোÑ আন্তরিক তাওবা। আশা করা যায়, তোমাদের পালনকর্তা তোমাদের মন্দ কর্মসমূহ মোচন করে দেবেন’ (সূরা আত তাহরিম-৮)। আমরা কি তাঁর ডাকে সাড়া দেবো না?
আমাদের উচিত আল্লাহর দিকে ফিরে যাওয়া। তাঁকে খুশি করা, সন্তুষ্ট করা। তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তন ছাড়া আর কোনো পথ নেই। ‘আল্লাহ ব্যতীত আর কোনো আশ্রয়স্থল নেই’ (সূরা আত তাওবা-১১৮)। আল্লাহ পাক আমাদের জন্য এখনো পথ খোলা রেখেছেন। মসজিদ বন্ধ করে দিলেও তাঁর রহমতের দরজা একেবারে বন্ধ করে দেননি। আমাদের আল্লাহ পাক আহŸান করছেন, ‘তারা আল্লাহর কাছে তাওবা করে না কেন এবং ক্ষমা প্রার্থনা করে না কেন? আল্লাহ যে ক্ষমাশীল, দয়ালু’ (সূরা আল মায়িদা-৭৪)। এর পরও কি আমরা তাঁর সমীপে বিনয়ী হবো না? গভীর রাতে তাঁর কাছে নির্জনে দুই ফোঁটা অশ্রæ জমা রাখব না? তাওবাহ করব না?
আমরা যতক্ষণ না তাঁর দিকে ফিরে যাবো, ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের জন্য বালা-মুসিবত কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। আসুন আমরা আল্লাহ তায়ালার দিকে প্রত্যাবর্র্তন করি। তাঁর কাছে পাপ কাজের ক্ষমা চাই, তাঁকে সন্তুষ্ট করি, রাজি করি। পবিত্র কুরআনে আমাদের বলা হচ্ছেÑ ‘আর তোমাদের পালনকর্তার কাছে মার্জনা চাও এবং তাঁরই পানে ফিরে এসো। নিশ্চয়ই আমার রব খুবই মেহেরবান, অতি ¯েœহময়’ (সূরা হুদ-৯০)।
আসুন আমরা ক্ষমা প্রার্থনার মাধ্যমে খুবই মেহেরবান, অতি ¯েœহময় আল্লাহর দিকে রুজু করি। ক্ষমা চাওয়ার মাধ্যমে তাঁর আজাব থেকে মুক্তি কামনা করি। তাঁর বাণী, ‘তারা যতক্ষণ ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকবে আল্লাহ কখনো তাদের আজাব দেবেন না’ (সূরা আল আনফাল-৩৩)।
লেখক : প্রাবন্ধিক, কলামিস্ট
mahfujnb@yahoo.com
Leave a Reply