মোঃ মশিয়ার রহমান,নীলফামারী প্রতিনিধিঃ
৫১ বছর আগে আইয়ুব খান বিরোধী আন্দোলনের প্রচারণায় অংশ নিতে নীলফামারী গিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যাত্রাপথে সদর উপজেলার চড়াইখোলা ইউনিয়নের পশ্চিম কুচিয়ার মোড় ফকির পাড়া গ্রামে একটি কুঁড়েঘরের মসজিদে সফরসঙ্গীদের নিয়ে নামাজ আদায় করেছিলেন তিনি।
“খড়ের ঘর দেখে বঙ্গবন্ধু উমর শেখের হাতে ৫০০ টাকা দিয়ে বলেন, ‘আমার জন্য দোয়া করবেন, আমার দল ক্ষমতায় এলে পাকা মসজিদ বানিয়ে দেবো’তখন ওই মসজিদের কোনো নামও ছিল না। নামাজ শেষ করে তিনি সেখানে একটি পাকা মসজিদ বানিয়ে দেবেন বলে এলাকাবাসীকে কথা দিয়েছিলেন। ১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর কথা রেখেছিলেন বঙ্গবন্ধু। তার নামানুসারে ওই মসজিদের নাম রাখা হয় “শেখ জামে মসজিদ”। ৫১ বছর পর চারচালা কুঁড়েঘরের মসজিদটি এখন মডেল মসজিদে পরিণত হয়েছে। দীর্ঘ পাঁচ দশক ধরে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালীর স্মৃতি বহন করে চলেছে মসজিকদটি।এলাকাবাসী জানান, ১৯৬৯ সালের ২৩ অক্টোবর নীলফামারীর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে দলীয় ব্যানারে জনসভা (প্রচারণা) করার জন্য ঢাকা থেকে মাইক্রোবাসে করে আসার পথে ওই মসজিদে সফরসঙ্গীদের নিয়ে (নতুন মসজিদে) নামাজ আদায় করেন শেখ মুজিবুর রহমান।উপজেলার পশ্চিম কুচিয়ামোড় ফকিরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ও ১৩ নং-চড়াইখোলা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য শহিদুল শেখ (৬৬) বলেন, “তখন আমার বয়স ছিল ১৪-১৫ বছর। গাড়ি থেকে নেমে বঙ্গবন্ধু চারচালা কুঁড়েঘরে নামাজ আদায় করতে আসেন। তখন কাঁচা ঘরটিতে নামাজ আদায় করতেন অনেকে। কোনো নামও ছিল না মসজিদের। খড়ের ঘর দেখে বঙ্গবন্ধু আমার চাচা উমর শেখের হাতে ৫০০ টাকা দিয়ে বলেন, ‘আমার জন্য দোয়া করবেন, আমার দল ক্ষমতায় এলে পাকা মসজিদ বানিয়ে দেবো।’ এরপরই মসজিদটির নতুন নাম রাখা হয় শেখ জামে মসজিদ। পরে তিনি বড় মাঠের জনসভায় লাখো জনতার মাঝে বক্তব্য রাখেন। জনসভা শেষ করে ডোমার হয়ে ঢাকার উদ্দেশে চলে যান।একই গ্রামের বাসিন্দা ও শেখ জামে মসজিদের সহ-সভাপতি ওজমান গনি টুনু (৭২) স্মৃতিচারণ করে বলেন, “নামাজ শেষে তিনি (বঙ্গবন্ধূ) সবার সঙ্গে হ্যান্ডশেক ও মোলাকাত করেন। পরে তিনি একচালা কুঁড়েঘরটিকে মসজিদ হিসেবে ঘোষণা দেন। সেদিনই সর্বসম্মতিক্রমে মসজিদটির নাম রাখা হয় ‘শেখ জামে মসজিদ’।এলাকার চায়ের দোকানদার ও ব্যবসায়ী আব্দুল হামিদ (৬৭) বলেন, “তিনি (বঙ্গবন্ধু) তড়িঘড়ি করে ওজু করে নামাজে শরিক হয়ে যান। নামাজ শেষে সবার উদ্দেশে তিনি পরিচয় দিয়ে বলেন, ‘আমি শেখ মুজিবুর রহমান।’ আমরা মুসল্লিরা সবাই হতবাক হয়ে গেলাম।এলাকাবাসী জানান, সেদিন বঙ্গবন্ধুর সফরসঙ্গী ছিলেন এম মনসুর আলী, তাজ উদ্দিন আহমেদ, এ এইচ এম কামারুজ্জামান ও নীলফামারী সৈয়দপুরের ডা. জিকরুল হক, মো. আলিম উদ্দিন, কিশোরগঞ্জ-জলঢাকা নির্বাচনী এলাকার এম.পি আজাহারুল ইসলাম জেলা শহরের আফসার আলী, ডোমার উপজেলার আব্দুর রব, জলঢাকা উপজেলার আমিন বিএসসি, (আজাহারুল হক) প্রমুখ।পরে ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রপতি হলে মসজিদ কমিটির লোকজন যোগাযোগ করেন। পরে ২৫ হাজার টাকা দেন বঙ্গবন্ধু। সেই টাকা দিয়ে মসজিদ কমিটি প্রথম ধাপে ইট সিমেন্ট দিয়ে ২০ হাত দৈর্ঘ্য ও ১০ হাত প্রস্থের একটি পাকা টিনশেড মসজিদ ঘর নির্মাণ করা হয়। এরপর ধীরে ধীরে বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার অনুদানে এখন মডেল মসজিদে পরিণত হয়েছে।নীলফামারী জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মমতাজুল হক জানান, “২০১৪ সালে জেলা পরিষদের অর্থায়নে ৭১ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি মডেল মসজিদ নির্মাণ করা হয় এখানে। বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া শেখ জামে মসজিদটি এখন এলাকার বাইরেও দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্মপ্রাণ মানুষের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ বড়ভিটা ইউনিয়ন শাখার ইউনিয়ন সভাপতি ও দু-দুইবারের সফল চেয়ারম্যান জনাব বেনজির আহমেদ জানান, এই মসজিদের সাথে আমার বড়ভাই কিশোরগঞ্জ -জলঢাকা আসনের সাবেক এম.পি মরহুম আজহারুল ইসলামের স্মৃতি বিজরিত আছে। মহান রাব্বুল আলামিন এই যাত্রাপথের সকল মৃত ব্যক্তিকে জান্নাতবাসী করুক আমিন।
Leave a Reply