নিজস্ব প্রতিবেদক, চাঁপাইনবাবগঞ্জ :
কুরআন দিবস বাংলাদেশে পালিত একটি বিশেষ দিবস। প্রতিবছর ১১ মে এটি পালিত হয়ে থাকে। ১৯৮৫ সালের ১১ মে কুরআনের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করার জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জে আয়োজিত সমাবেশে পুলিশের গুলিতে আটজন মানুষ মৃত্যুবরণ করে। দিনটিকে স্মরণে রাখার জন্য সেই থেকে এই দিবস পালিত হয়ে আসছে।
জানা যায়, ঘটনার সূত্রপাত ভারতে ১৯৮৫ সালের ২৯ মার্চ। ভারতীয় নাগরিক চাঁদমল চেপারা আদালতে কুরআন বাজেয়াপ্ত করার মামলা দায়ের করে। তারা কুরআনের উল্লেখিত সূরা বাকারার ১৯১নং আয়াত ও সূরা তওবার ৩১ নং আয়াতের রেফারেন্স দিয়ে মামলা দায়ের করেছিল।
কোরআন যেহেতু কাফের মুশরিকদের বিরুদ্ধে লড়াই করা, তাদের হত্যা করার কথা বলেছে সেহেতু কুরআন একটি সাম্প্রদায়িক উস্কানী দাতা গ্রন্থ। তাই একে বাজেয়াপ্ত করার দাবি তুলে মামলা দায়ের করে। ভারতীয় সংবিধানের ২২৩ নং ধারা সি আর পিসি ১১৫(ক) ও ২৯৫ (ক) উদ্ধৃতি দিয়ে তারা আল কোরআনকে ভারতীয় সংবিধান বিরোধী বলে উল্লেখ করে।
বিচারপতি পদ্মা খাস্তগীর মামলা গ্রহণ করেন। তিনি ১২ই এপ্রিল এ বিষয়ে তিন সপ্তাহের মধ্যে এফিডেভিট প্রদানের জন্য রাজ্য সরকারের প্রতি নির্দেশ দেন। এ ঘটনায় গোটা ভারতে মুসলমানদের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। বিশ্বের প্রতিটি মুসলিম দেশ এর প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়।
কুরআন দিবসের মূল ঘটনা চাঁপাইনবাবগঞ্জে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ আলীয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ জনাব হোসাইন আহমদ একটি প্রতিবাদ সভার আহবান করেন। সেই সভা থেকে ১১ মে ১৯৮৫ চাঁপাইনবাবগঞ্জ ঈদগাহ ময়দানে বিকেল ৩টায় প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দেয়া হয়। সভার প্রস্তুতির জন্য পুরো জেলাতে লিফলেট ও মাইকিং করা হয়। এর পূর্বের দিন শুক্রবার মসজিদে জুমআর খুৎবায় এবং নামাজ শেষে ইমাম সাহেবেরা পরের দিন সমাবেশে অংশগ্রহণের জন্য আহ্বান জানান।
১১ মে হঠাৎ করে তৎকালীন পুলিশ সুপার আওলাদ হোসেন এবং ম্যাজিষ্ট্রেট মোল্লা ওয়াহিদুজ্জামানের নেতৃত্বে সভাস্থলে ১৪৪ ধারা জারি করে ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পুলিশ জনতাকে ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। মোল্লা ওয়াহিদুজ্জামানের নির্দেশে গুলি চালানো হয়। ঘটনাস্থলেই আট জন মৃত্যুবরণ করেন। মোল্লা ওয়াহিদুজ্জামান বর্তমানে বেসরকারিকরণ কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে কর্মরত আছেন। জাল প্রমাণপত্র দাখিলের দায়ে তার মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিল করা হয়।
সেদিনের শহীদেরা- শহীদ আব্দুল মতিন, ১০ম শ্রেণী (ছাত্র), শহীদ রাশিদুল হক, ১০ম শ্রেনী (ছাত্র), শহীদ শীষ মোহাম্মদ, ৯ম শ্রেণী (ছাত্র), শহীদ সেলিম, ৮ম শ্রেণী (ছাত্র), শহীদ শাহাবুদ্দিন, ৬ষ্ঠ শ্রেণী (ছাত্র), শহীদ আলতাফুর রহমান, কৃষক, শহীদ মোক্তার হোসেন, রিক্সাচালক, শহীদ নজরুল ইসলাম, রেলশ্রমিক।তথ্যসূত্র -ইউকিপিডিয়া।
Leave a Reply