মো: একরামুল হক মুন্না, পঞ্চগড় অফিস থেকে: প্রধানমন্ত্রীর উদ্ধোধনকৃত ২,৫০০ টাকার প্রনোদনায় পঞ্চগড় সদর উপজেলার ৬নং সাতমেরা ইউনিয়নের তালিকায় ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
ওই ইউনিয়নের উপকারভোগী ৩৮ জনের গণস্বাক্ষরিত একটি অভিযোগ, ৬ নং সাতমেরা ইউনিয়নের ত্রাণ সমন্বয়কারী কর্মকর্তা ও উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা বরাবর দায়ের করেছেন। দায়েরকৃত অভিযোগটির অনুলিপি চেয়ারম্যান ৬ নং সাতমেরা ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা নির্বাহী অফিসার পঞ্চগড় সদর এবং জেলা প্রশাসক পঞ্চগড় বরাবর প্রেরণ করেছেন। লেখিত অভিযোগে, অভিযোগকারীরা সংশ্লিষ্ট মেম্বারের বিরুদ্ধে উপকারভোগীদের কাছ থেকে ১ হাজার টাকা করে টাকা, উৎকোচ গ্রহণ করেছে বলে উল্লেখ করেছেন।
আবেদনকারীরা অভিযোগের সাথে অনিয়মের প্রমাণস্বরূপ একটি তালিকা সংযুক্ত করেছেন। যার ছায়াকপি সাংবাদিকদের হাতেও রয়েছে। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো: হকিকুল ইসলামের করা ওই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে ১,১২১ জনের নাম।
তার প্রণিত তালিকায়, ০১৭৩৪৩৪৪৬০০ এই নাম্বারটির মালিক ইউপি সদস্য নিজেই, যা বিভিন্ন নামে ব্যবহার হয়েছে ১৩ বার। ০১৭৩৮৬০৪৬১৭ এই নাম্বারটি আল-আমিন নামের একজন হত দরিদ্র শ্রমিকের, তার নাম্বার ব্যবহার করা হয়েছে দু’বার। এ ব্যাপারে আল-আমিন জানায়, ‘আমার নাম্বার দু’বার কেন ব্যবহার করবে?’; ০১৩১৮০৪৬৩৭৯ এই নাম্বারের মালিক মিন্টু। তার নাম্বার ব্যবহার করা হয়েছে ৪ বার।
এ ব্যাপারে মিন্টরু সাথে যোগাযোগ করা হলে সে বলে, ‘আমার নাম্বার ৪ বার ব্যবহার করা হয়েছে, আমি তা জানি না’। ০১৭৩৮৭৭৮৫৭৭ এই নাম্বারটি ৪৬ বছর বয়স্ক হাসিবুল ইসলামের। এই নাম্বারটি ব্যবহার হয়েছে ৮ বার। এ ব্যাপারে তার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ‘পাশের বাড়ির লোকজনের মোবাইল নাই, তারা আমার নাম্বার ব্যবহার করেছেন।
বিষয়টি তারা আমাকে জানিয়েছে।’ ০১৭৫০১৮৯৩১৯ এই নাম্বারটি ব্যবহার হয়েছে ৪ বার এবং ০১৯১৬০৬০১১০ এই নাম্বারটি ব্যবহার হয়েছে ৮ বার। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান মো: আতাউর রহমান, ইউনিয়নের ত্রাণ সমন্বয় কর্মকর্তা ও উপজেলা যুব উন্নয়ন অফিসার আওলাদ হোসেন বাবু’র সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে, তাদের পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে ইউপি সদস্য মো: হকিকুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘তালিকা করতে কোন টাকা-পয়সা নেওয়া হয়নি, যারা অভিযোগ করেছেন, তারা আমার ওয়ার্ডের নয়। যাদের মোবাইল নেই তাদের অনুরোধে আমার নাম্বারটি ১৩ জনের অনুকুলে ব্যবহার করেছি।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক সাবিনা ইয়াসমিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘অনিয়মের কোন সুযোগ নেই, যাঁচাই-বাছাই চলছে। মাঠ পর্যায় থেকে প্রেরিত তালিকা আমার হাতে আসেনি, আসার পর কোন অনিয়ম, দুর্নীতি পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রীর এই প্রনোদনায় সারা দেশের ৫০ লাখ পরিবার নগদ অর্থ সহায়তা কর্মসূচির আওতায়; উপকারভোগীরা হলেন, পরিবহন শ্রমিক, নির্মান শ্রমিক, হোটেল শ্রমিক, দিনমজুর, রিক্সা-ভ্যান চালক, ব্যবসায়ী শ্রমিক ও নি¤œ আয়ের প্রান্তিক কৃষকরা।
মোবাইল ব্যাংকিং পরিসেবার মাধ্যমে উপকারভোগী ৫০ লাখ পরিবারের মাঝে এই অর্থ, মে থেকে জুন পর্যন্ত বিতরণ হবে।
দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রনালয়ের তথ্য অনুযায়ী প্রাথমিকভাবে দেশের ৮ বিভাগের ৮ টি জেলায় যথাক্রমে চট্টগ্রাম বিভাগের নোয়াখালি, ঢাকা বিভাগের মাদারীপুর, ময়মনসিংহ বিভাগের শেরপুর, রাজশাহী বিভাগের চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রংপুর বিভাগের কুড়িগ্রাম, সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জ এবং খুলনা বিভাগের বরগুনার ৩৮ হাজার পরিবার এই প্রনোদনা পাচ্ছেন।
আজ ১৪ মে সকাল ১০ টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এর উদ্ধোধন করেছেন।
Leave a Reply