অনেকেই অস্থির হয়ে উঠছে ঘরে বন্দী থাকতে থাকতে। অথচ আমাদের বেশিরভাগের বাড়িতে টিভি, ল্যাপটপ, হাতে সেলফোন। ল্যাপটপ বা সেলফোনে ইন্টারনেট। তার দৌলতে ফেসবুক, ম্যাসেঞ্জার, হোয়াটসএপ, স্কাইপ ও আরো কিছু ! তাছাড়া এর মাধ্যমে ভিডিও চ্যাটও।
১৯৪২ সালে স্বপ্নেও কেউ ভাবেনি ওসবের কথা। তাহলে সময় কাটানো কীভাবে !
মাত্র ১৫ বছরের আনা ফ্রাঙ্ক নামক মেয়েটি প্রতিদিন লিখে গেছে ডায়েরি।
এত কিছুর পরও আনন্দ, সৌন্দর্য, মানুষের মহত্ত্ব এসবের উপর বিশ্বাস হারায়নি মেয়েটি।
আনা ফ্রাঙ্ক-র জন্ম জার্মানির ফ্র্যাংকফুর্ট এর আম মাইন শহরে, কিন্তু তার জীবনের বেশিরভাগ সময় কেটেছে নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডামে। জাতীয়তায় ১৯৪১ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন একজন জার্মান। নাৎসি জার্মানির সেমিটিক বিদ্বেষী নীতির কারণে তিনি তার জার্মান নাগরিকত্ব হারান।
১৯৩৩ সালে ফ্রাংকের পরিবার আমস্টারডামে চলে যায়। সেই বছরেই নাৎসিরা জার্মানির ক্ষমতায় আসে। ১৯৪০ সালে তারা নাৎসি জার্মানির আমস্টারডাম দখলের কারণে সেখানে অন্তরীন হয়ে পড়েন। ১৯৪২ সালের দিকে ইহুদি জনগণ নিধন বাড়তে থাকায় তারা তার বাবার অটো ফ্রাংকের লুকানো কক্ষে লুকিয়ে অবস্থান করতে থাকেন। দুই বছর পর, ৪ আগস্ট ১৯৪৪ সালের সকালে তারা জার্মান নিরাপত্তা রক্ষীদের হাতে ধরা পড়েন। কে তাদের লুকানো বাসগৃহের কথা জার্মানদের কাছে বখশিসের বিনিময়ে জানিয়ে দিয়েছিলো তা সঠিকভাবে জানা যায় না।তারা ধরা পড়েন ও তাদেরকে কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আন ফ্রাংক ও তার বোন মার্গো ফ্রাংককে বার্গেন-বেলজান কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে ১৯৪৫ সালে টাইফাস নামক রোগে আক্রান্ত হয়ে তারা দুজনেই মৃত্যুবরণ করেন।
যুদ্ধ শেষে তার পরিবারের একমাত্র বেঁচে থাকা ব্যক্তি বাবা অটো ফ্রাংক আমস্টারডামে ফিরে আসেন, এবং অ্যানার দিনলিপিটি (ডায়েরি) খুঁজে বের করেন। তার প্রচেষ্টাতেই দিনলিপিটি কনটাক্ট পাবলিসিং দ্বারা ওলন্দাজ ভাষায় হেট একটেরহাইস শিরোনামে প্রথম বই আকারে বের হয়। প্রকাশ এর পর থেকেই এটি সকলের দৃষ্টি আকর্ষন করে। পরবর্তীতে ১৯৫২ সালে ইংরেজি ভাষায় সংস্করন প্রকাশ হয় অ্যানা ফ্র্যাংক-দ্য ডায়েরি অফ আ ইয়াং গার্ল শিরোনামে। এখন পর্যন্ত বইটি ৬০টির ও বেশি ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে।
বইটি বিংশ শতাব্দীর অন্যতম একটি জনপ্রিয় বইয়ের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। এছাড়া বইটি অবলম্বনে অনেক নাটক ও চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। ডায়েরিটি অ্যানার ১৩তম জন্মদিনে উপহারস্বরূপ দেওয়া হয়েছিলো। যেখানে অ্যানার জীবনের ১২ জুন ১৯৪২ থেকে ১ আগস্ট ১৯৪৪ সাল পর্যন্ত সময়ের ঘটনাগুলো ফুটে উঠেছে।
তিনি আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতি লাভ করেছেন তাঁর দিনলিপির জন্য, যেখানে তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কালীন তার অভিজ্ঞতাগুলোকে লিখে রেখেছিলেন।
যেসব কথা লিখেছিলেন তার থেকে কয়েকটি উদ্ধৃতি এখানে দেওয়া হলো।
“Because paper has more patience than people. ”
“মানুষের ধৈর্য নেই, কাগজের আছে। মানুষ আরেক মানুষের আদর্শ, ধর্মবিশ্বাস এসবের সম্মান দেয় না, কিন্তু কাগজ দেয়”
“How wonderful it is that nobody need wait a single moment before starting to improve the world.”
“ভাবলে ব্যাপারটা কত চমৎকার যে আসলে পৃথিবী বদলে দেবার জন্য কারও এক মুহূর্ত অপেক্ষা করার দরকার নেই”
“Think of all the beauty still left around you and be happy.”
“চারিদিকের যেসব সৌন্দর্য এখনও বাকী আছে তা দেখ আর আনন্দিত হও”
“I can shake off everything as I write; my sorrows disappear, my courage is reborn.”
“আমি লিখতে শুরু করলেই সব ঝেড়ে ফেলতে পারি, আমার দুঃখ দূর হয়ে যায়, আমার সাহস ফিরে আসে”
“I’ve found that there is always some beauty left — in nature, sunshine, freedom, in yourself; these can all help you.”
“আমি দেখেছি সৌন্দর্য কোথাও না কোথাও শেষমেশ থাকেই, প্রকৃতিতে, সূর্যালোকে, স্বাধীনতায়, নিজের ভেতরে, আর এই সৌন্দর্যগুলো তোমাকে সাহায্য করবেই”
“I don’t think of all the misery, but of the beauty that still remains.”
“আমি দুঃখ-কষ্টের কথা ভাবিনা, ভাবি যা সৌন্দর্য এখনও বাকী রয়ে গেছে তার কথা”
“Whoever is happy will make others happy.”
“যে নিজে সুখী সে অন্যকে সুখী করতে পারে”
“In the long run, the sharpest weapon of all is a kind and gentle spirit.”
“শেষমেশ সবচেয়ে উপযুক্ত অস্ত্র হলো দরদী এবং মরমী একটি মন”.
“Where there’s hope, there’s life. It fills us with fresh courage and makes us strong again.”
“যেখানে আশা আছে, সেখানেই জীবন আছে। এই আশা আমাদের নতুন সাহস জোগায় এবং শক্ত হতে সাহায্য করে”
“In spite of everything, I still believe that people are really good at heart.”
“সবকিছুর পরও আমি বিশ্বাস করি মানুষ তার ভেতরে সত্যিই ভালো”
(তথঋণ – গুগল)
Leave a Reply