মনিরুল ইসলাম, সাপাহার (নওগাঁ) প্রতিনিধি : নওগাঁ জেলার ঐতিহ্যবাহী সীমান্তবর্তী সাপাহার উপজেলায় কালের অতল গহ্বরে হারিয়ে যেতে বসেছে ক্লান্ত পথিকের দেহ জুড়ানো বটবৃক্ষ! খাঁ খাঁ রোদে ক্লান্ত হয়ে পথিকরা বটবৃক্ষের নিচে বসে জুড়িয়ে নিতো তার ঘর্মাক্ত শরীর। হয়তোবা কোন সময় শ্রান্ত পথিক বটগাছের নিচে নিজের অবসন্ন দেহটা এলিয়ে একটু দিবানিদ্রাতে জুড়িয়ে নিতো তার সেই ক্লান্তি। কিন্তু কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে বটবৃক্ষ। শুধু তাই নয় হারানোর পথে বৃক্ষরাজ, বনস্পতি, মহীরূহ সহ নানান প্রজাতির গাছ। এ যেন সত্যিই বটবৃক্ষের দুর্দিন!।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলা সংস্কৃতি ও প্রকৃতি সংস্পর্শে মিশে আছে এই বট, পাইকড়, বনস্পতি, মহীরূহ অর্জুন সহ নানান প্রজাতির বৃক্ষ। এখন থেকে আরো ২০/২৫ বছর আগে এ উপজেলার বিণ্নি অঞ্চলে চোখে পড়তো বটবৃক্ষ সহ নানান প্রজাতির গাছ। কিন্তু বর্তমানে নানান জাতের বিদেশী চারা সহ ফলফালাদির গাছ লাগানোর প্রবণতা বাড়ার ফলে কেটে ফেলা হচ্ছে প্রাচীন ঐতিহ্য বটবৃক্ষগুলো। বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে দেশী-বিদেশী বিভিন্ন গাছ রোপণ করা হলেও বটগাছ রোপণের তেমন কোন উদ্যোগ লক্ষ্য করা যায়না।
একটা সময় ছিল যখন বাড়ির সামনে, জমির ধারে ও বিভিন্ন জায়গায় বটগাছ থেখা যেতো। অনেক ক্ষেত্রে ঠিকানা নির্ধারণের জন্য “বটতলা” বলে অভিহিত করা হতো বিভিন্ন স্থানকে। বিভিন্ন সময় বটগাছের চারিপাশ জুড়ে ছিল মানুষের মিলন মেলার স্থান। চলতি সময়ে একদিকে হারিয়ে যাচ্ছে বটগাছ অপর দিকে হারাচ্ছে বাংলার সংস্কৃতি।
বর্তমান সময়ে প্রাচীন আমলের দু একটি বটগাছ চোখে পড়লেও অনেকাংশে মানুষের চলাফেরার সুবিধার্থে এগুলো কেটে ফেলা হচ্ছে। বটগাছের ফল কোন কাজে না আসলেও তার ঠান্ডা ছায়া অতি লোভনীয়। যাতে করে ক্লান্তি দূর করার জন্য বটগাছের ছায়া একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতো কুষিকাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের জন্য। চলমান সময়ে রাস্তার উন্নয়ন ও দ্রুতগামী যানবাহন হওয়ায় সেটার প্রয়োজনীয়তাও অনেক কমে গেছে। জীবন জীবিকার সংগ্রামে ছুটতে গিয়ে অনেক সময় মানুষ ভুলে যাচ্ছে প্রাচীন ঐতিহ্যগুলো। আধুনিকতার ছোঁয়ায় আজ অনেক প্রাচীন ঐতিহ্য হারিয়ে যাবার দ্বারপ্রান্তে। যার প্রভাব অনেকটা পড়েছে বটগাছের উপর।
প্রাচীন ঐতিহ্যগুলো যাতে হারিয়ে না যায় এগুলো সংরক্ষণ করা স্থানীয় ব্যক্তি বর্গ সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। এমতাবস্তায় নুন্যতম ভাবে হলেও বটগাছ লাগিয়ে এর বংশ অক্ষুন্ন রাখতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের এগিয়ে আসা উচিৎ বলে মনে করছেন এলাকার সচেতন মহল।
Leave a Reply