বরেন্দ্র নিউজ ডেস্ক:
বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ চলমান দু’র্নীতি বিরোধী অ’ভিযানের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে এমপিদের গাড়ি কেনার জন্য চাইলেন স্বল্প সুদের ব্যাংক ঋণ সুবিধা। সোমবার (১১ নভেম্বর) একাদশ জাতীয় সংসদের পঞ্চ’ম অধিবেশনে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি ধন্যবাদ জানান তিনি।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, আপনি সংসদের গার্ডিয়ান, আমাদের অ’ভিভাবক, সংসদের ম’র্যাদা এবং সংসদ সদস্যদের ম’র্যাদা রক্ষা করা আমাদের সবার দায়িত্ব। আমি সত্যি অ’ত্যন্ত বিব্রত। ১/১১ এর সময় আমা’র নামে একটি মা’মলা হয়েছিল। সেই সময় জরুরি সরকার রাজনীতিবিদদের নামে বহু মা’মলা দিয়ে আ’ট’ক করেছিল।
আমা’র নামে সে ধরনের কোনো দু’র্নীতির মা’মলা না থাকায় শুল্কমুক্ত গাড়ির ব্যাপারে একটি মা’মলা হয়েছে। সেই মা’মলা’টি উচ্চ আ’দালতে স্থগিত ছিল। এখানে সংসদ নেতা উপস্থিত আছেন। আমি ওনার প্রতি আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তিনি একটি অসাধারণ পদক্ষেপ নিয়েছেন। সারাদেশ ব্যাপী যে দু’র্নীতি বিরোধী অ’ভিযান শুরু করেছেন, দেখা যাচ্ছে, আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দের বি’রুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন। ঠিক ওই রকম একটা মুহূর্তেই আমা’র নামে হঠাৎ করে আ’দালত থেকে সাজা হলো।
এটা এত ব্যাপকভাবে প্রচারিত হল সারাদেশের মানুষের মধ্যে যে পার্সেপশন তৈরি হল, বিএনপির এমপি বলেই আজ হারুনকে সাজা দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আমি উচ্চ আ’দালতে আপিল করার সঙ্গে সঙ্গে অ’তি অল্প সময়ের মধ্যে জামিন পাই এবং সুপ্রিম কোর্টের সর্বোচ্চ বিভাগ থেকেও আমা’র জামিন মুঞ্জর রাখা হয়েছে।
এমপিদের শুল্কমুক্ত গাড়ি সুবিধা নিয়ে তিনি বলেন, ১৯৮৮ সাল থেকে শুল্কমুক্ত গাড়ির সুবিধা এমপিদের দেওয়া হচ্ছে। ৫ম সংসদে ৩০১ গাড়ি আম’দানি হয়েছে, ৭ম সংসদে ১৭৬টি, ৮ম সংসদে ৩১১টি এবং নবম সংসদে ৩১৫টি গাড়ি আম’দানি করা হয়েছে। সেই সময়ে আম’রা টাকা দিয়েই গাড়িটা আম’দানি করি। আসলে ১৯৯৬ সালে যখন প্রথম এমপি হই, তার আগে গাড়ি ব্যবহারকারী ছিলাম না।
আমা’র কোনো ব্যক্তিগত গাড়িও ছিল না। কিন্তু এমপিদের দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার করার জন্য সব এমপিদের এ সুযোগ দিয়েছেন। এটি নিয়ে পত্রপত্রিকায় ঢালাওভাবে লেখা হয়। আসলে ইউরোপ-আমেরিকার মতো উন্নত বিশ্বে এক কোটি টাকা, দেড় কোটি টাকা দিয়ে নগদ টাকায় গাড়ি কেনা হয় না। তারা ব্যাংকের সুবিধা পেয়ে ডাউন্ড পেমেন্ট দিয়ে গাড়ি কেনে।
কারাগারে থাকা অবস্থায় আমি দেখলাম, সচিবদের গাড়ি কেনার জন্য সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। তারপরও খবর দেখলাম, সচিবরা গাড়ি অ’পব্যবহার করছেন। সংসদ নেতাকে অনুরোধ করব, সংসদ সদস্যরা (এমপি) তো রিকশায় করে গণভবনে যাবেন না, এমপিরা তো প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে রিকশায় করে যাবেন না, সচিবালয়ে তো রিকশায় যাবেন না। সংসদ নেতাকে বলব, গাড়ির যে সুযোগ দিয়েছেন, অনুরোধ করব, এমপিদের গাড়ি কিনতে স্বল্প সুদ সহায়তা দেন। তাহলে পাঁচ বছর গাড়িটা ব্যবহার করার পর বিক্রি করলে মূলধনটা ফিরে পাওয়া যাবে, যোগ করেন হারুন।
তিনি বলেন, যখন রায়টি হল, আমা’র এলাকায় কিছু ব্যক্তি আনন্দ উৎসব করলেন, মিষ্টি বিতরণ করলেন। রাতে পিকনিক করলেন। কিন্তু সারা দেশের মানুষ আমা’র জন্য দোয়া করল।
জে’ল থেকে বের হওয়ার পর আওয়ামী লীগের সিনিয়র অনেক নেতৃবৃন্দ সহনুভূতি প্রকাশ করেছেন। যখন আমা’র নামে সাজা হয়েছে, সাথে সাথেই বলাবলি হল যে হারুন বিএনপির এমপি, তাই সাজা হয়েছে। আবার যখন জামিনে মুক্তি পেলাম, তখন দেখা গেল আবার একটা শ্রেণির লোক টিভি ট’ক শোতে বলছেন, হারুনকে প্রধানমন্ত্রী খুব ভালোবাসেন, দেখ ১০ দিনের মধ্যে জামিন দিয়ে দিলেন। অর্থাৎ আমি এদিকেও কড়াতে কাটছি, ওদিকেও কড়াতে কাটছি।
গাড়ি প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, আমা’র কাছে গাড়ি আম’দানির পরিপত্র আছে। আমি যদি সত্যিকার অর্থে হস্তান্তর করে থাকি, তাহলে নির্ধারিত শুল্ক পরিশোধ করতে হবে, এখানে জরিমানা বা জে’লের সুযোগ নেই।
আশা করি, উচ্চ আ’দালত বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আসবেন। এমপিদের যে সুযোগ দেওয়া হয়েছে, এমপিরা যেন গাড়ি কিনতে পারেন, গাড়িটা ব্যবহার করতে পারেন, সে বিষয়ে চিন্তা ভাবনা করবেন। এটির যেন অ’পব্যবহার না হয়। সত্যিকার অর্থে আমাকে চার মাস আগে আপনি (স্পিকার) পারমিশন দিয়েছেন, গাড়ি কেনার কিন্তু আমা’র এক কোটি টাকা নাই। আমি অ’বৈধভাবে টাকা নিয়ে কিনতে পারি, কিন্তু আমি সেই জায়গায় যাব না। সহযোগিতা চাই।
Leave a Reply