বরেন্দ্র নিউজ ডেস্ক :
চারদিকে অন্ধকার। মাঝে একটা লম্বা আলোক রেখা। সেই আলোক রেখার মাঝে ছোট্ট একটি সাদা বিন্দু দেখা যায়। আসলে এটি দেখতে বিন্দু মনে হলেও আ-দৌ কিন্তু বিন্দু নয়। এটি আমাদের পৃথিবীর ছবি, যেই গ্রহে আমরা বাস করছি।
এখান থেকে ৪০০ কোটি মাইল দূরে পৃথিবীকে ঠিক এমনই দেখায়। আজ থেকে ৩০ বছর আগে মহাকাশযান ভয়েজার-১ এই ছবিটি পাঠায়।
দিনটি ১৯৯০ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি। যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা থেকে উক্ষেপিত ভয়েজার১ মহাকাশযান সৌরজগতের সীমানা ছাড়িয়ে আন্তঃনাক্ষত্রিক শূন্যতায় প্রবেশ করবে, ঠিক সেই সময় জ্যোতির্বিজ্ঞানী কার্ল সাগান এক মিনতি জানান নাসার বিজ্ঞানীদের কাছে।
তিনি বলেন, ‘ভয়েজারকে একবারের জন্য পৃথিবীর দিকে ফিরে তাকাতে নির্দেশ করুন, প্লিজ।’ নাসা সেই অনুরোধ রেখেছিল, ভয়েজার মাত্র একবার পেছন ফিরে তাকায়। এরপরই সৃষ্টি হয় ইতিহাস। পৃথিবীর একটা মাত্র ছবি তোলে ভয়েজার। আর ওই ছবিটি তোলা হয় ৪০০ কোটি মাইল দূর থেকে।
ঐতিহাসিক এই দিনটির ৩০ বছর পূর্তিতে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি নাসা তাদের ওয়েবসাইটে ছবিটি প্রকাশ করে। ছবিটি বিশাল গাঢ় অন্ধকারের মাঝে কয়েকটা আলোক-রেখা। তার একটি আলোক রেখার মাঝে মলিন একটা বিন্দু।
সাগানের ভাষায়, ‘পেইল ব্লু ডট’। অর্থাৎ ‘বিবর্ণ নীল বিন্দু। এখান থেকে ৪০০ মাইল দূর থেকে আমাদের এই গ্রহকে বলতে হবে ‘বিবর্ণ নীল বিন্দুর’ এক গ্রহ।
ভয়েজার টিমে কার্ল সাগানের সঙ্গে আরও একজন ইমেজিং বিজ্ঞানী ছিলেন। তার নাম কারোলিন পর্কো। সাগান যখন সেখান থেকে ছবিটি তোলার জন্য অনুরোধ করেন, তখন তার সঙ্গে সায় দেন অন্যরাও।
তারা মনে করলেন, মহাবিশ্বের এই বিশাল জগৎ থেকে আমাদের বাসযোগ্য পৃথিবীকে কেমন দেখায়, তা জানা ও দেখার দরকার আছে। আসলে তারা বিশ্ববাসীকে জানাতে চেয়েছিলেন যে, মহাবিশ্বের তুলনায় পৃথিবী নামক গ্রহটি খুবই ক্ষুদ্র।
১৯৭৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর ভয়েজার-১ উিক্ষপ্ত হয়েছিল। ৭২২ কিলোগ্রামের এই রোবটিক স্পেসক্রাফট সৌরজগতের বাইরের অঞ্চল নিয়ে গবেষণার জন্যই অভিযান শুরু করেছিল। ১৯৭৯ সালে বৃহস্পতি গ্রহ এবং ১৯৮০ সালে শনির গ্রহ ব্যবস্থার মুখোমুখি হয়েছিল এই মহাকাশযান।
২০১৫ সালেই ভয়েজার-১ সৌরজগতের শেষ সীমান্তে নতুন এক স্তরের সন্ধান পায়, এটি পৃথিবী থেকে প্রায় ১১০০ কোটি মাইল দূরে। বিজ্ঞানীরা একে ‘চৌম্বকীয় মহাসড়ক’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
২০১৬ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ভয়েজার-১ প্রায় ৩৯ বছর দুই মাস ১৭ দিন ধরে ছুটে চলেছে এবং এখনো গভীর মহাশূন্য থেকে পাঠানো বার্তার মাধ্যমে পৃথিবীর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে।
ভয়েজার-১ থেকে বর্তমানে পৃথিবীতে তথ্য আসতে সময় লাগছে প্রায় ১৮ ঘণ্টা। এটাই হলো পৃথিবী থেকে মানব নির্মিত সবচেয়ে দূরবর্তী যন্ত্র বা মহাকাশযান-প্রায় ১৩৭ জ্যোতির্বিজ্ঞান একক বা ১ হাজার ২৭৪ কোটি ১০ লাখ মাইল।
কার্ল সাগান ‘পেইল ব্লু ডট প্লানেট : আ ভিশন অব দ্য হিউম্যান ফিউচার ইন স্পেস’ নামে ১৯৯৪ সালে একটি বই লেখেন। বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে বইটিতে ৪০০ কোটি কিলোমিটার দূর থেকে তোলা বিন্দুর ছবিটা সম্পর্কে নানা রকম ভাবনা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বিশাল দূরত্বে পৃথিবীকে নিছক একটা বিন্দুর চেয়ে বেশি কিছু মনে হয় না।
গোনিউজ২৪/এন
Leave a Reply