শাকিল রেজা:
প্রবাসী ভাইয়েরা মাত্র ১৪টা দিনের ত্যাগ স্বীকার না করার জন্য রেমিটেন্স যোদ্ধা থেকে আজ অনেকাংশে আতঙ্কের কারন! আজ ভাবা হচ্ছে, সামান্য ১৪দিনের ত্যাগে দেশ, গ্রাম,সমাজ, পরিবার সবাই কতইনা নিরাপদে থাকতো!যে মানুষগুলো জাতীয় বীর ছিলেন, আজ অনেকেই ভাবছেন, তাদের সামান্য অধৈর্য্যে গোটা দেশটাই আজ আতঙ্কের হাজতখানায় পরিণত করেছে!
কিন্তু আমরা ইতোপূর্বে দেখেছি, একটা পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে কতইনা শুক্রবার, ছুটির দিন আর ঈদের উৎসব আপনার জীবন থেকে চলে গেছে! ছেড়া কাপড়ে থেকে সন্তানদের ঈদের নতুন পোশাক কিনে দিতে কতবারই না অট্টালিকায় উঠে জীবন বাজি ধরেছেন! পরিবার যখন এসি/ফ্যানের নিচে শান্তির ঘুম ঘুমাচ্ছেন, তখনও আপনি হয়তো কোন মরুর পথ প্রান্তরে এক ফোটা জলের খোঁজে অগণিত কিলোমিটার যাত্রা করেছেন! দেশে থেকে আপনি যখন অভাবের তাড়নায় পড়াশুনা ছেড়েছেন, হয়তো তখনই ভেবেছিলেন, আমার জীবনের কষ্ট যেন আমার সন্তানরা না পাই! সেই ভাবনা যখন আপনাকে আরও তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াই, তখনও আপনি ভাবেননি আপনার সন্তান যে স্কুলে পড়ে সেই স্কুলের নামটাও আপনার কখনও কাজের চাপে মুখস্থ হয়ে উঠেনি! আপনি শুধু রেমিটেন্স যোদ্ধা নন, আপনি যে স্বপ্নযোদ্ধা! নিজের ভাল লাগাকে, ভাল থাকাকে বিসর্জন দিয়ে কাওকে ভাল রাখাটা যে সত্যিকার অর্থেই আপনাদের কাছেই আমাদের এই প্রজন্মকে শিখতে হবে! আপনার ভেতরে সামান্য কিংবা অল্প অক্ষরজ্ঞান থাকলেও আপনি বিদেশে থেকে আমাদের যে শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছেন তা ছকবাঁধা পাঠ্যবইয়ে কোথায়! জীবনের অধিকাংশ সময় চলে যায় আপনার কষ্টে, অযত্নে, অবহেলায় এমনকি নিদারুন অভাব ও যন্ত্রনায়! এও জানি, আমরা আপনাদের পরিবার হলেও যে দেশে আপনি জীবনযুদ্ধ করে যান, আপনি নিছকই তাদের কাছে কর্মের একটা উপকরণ মাত্র! যাদের কাছে আপনার পরিশ্রমই একমাত্র আপনার দক্ষতা পরিমাপের মাফকাঠি! আপনার দেহের কর্মক্ষমতা তাদের দেওয়া পারিশ্রমিক মূল্য সমানুপাতিক। তাদের কাছে আপনার মূল্য কেবল কাজের অগ্রাধিকার সূত্রে গাঁথা, মানবিকতা যেখানে কেবল একটি শব্দ মাত্র! তারপরও আপনি চান পরিবারকে ভাল রাখতে, এ দেশটাকে ভাল রাখতে। এমন কাজ করেও আজ দেশে ফিরে সন্তান কিংবা বাবা-মাকে আকঁড়ে ধরতে পারছেন না! রাগ কিংবা আভিমানতো হবারই কথা। কিন্তু আজ বিশ্ববাসী এক অদৃশ্য আতঙ্কে কম্পমান! আর যার জন্যে আপনাদের মত যোদ্ধাদেরও এ দেশ ঠিকমত বুকে আগলে নিতে পারছেন না! আপনারা রাষ্ট্রকে ভুল বুঝবেন না। রাষ্ট্র ভুলত্রুটির উর্দ্ধে নয়, গাফিলতি রাষ্ট্রযন্ত্রেরও আছে, তাই বলে আপনার অসীম অবদানকে রাষ্ট্র কখনই খাঁটো করে দেখবেনা।
আপনারা একটু ধৈর্য্য দেখিয়ে, একটু কষ্ট করে আপনার পরিবার ও দেশকে আরও একবার সাহায্য করুন। প্রবাসী ভাইদের প্রতি অনুরোধ, আপনি নিজেও হয়তো জানেন না, যে পরিবারের সুখের জন্য হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করেছেন, আজ সেই পরিবারের একমাত্র ক্ষতির কারনও(না জেনে) আপনিই হচ্ছেন! তাই ১৪দিনের আরও একবার পরীক্ষা দিয়ে প্রমান করুন, আপনারাই প্রকৃত দেশপ্রেমিক, আপনারাই প্রকৃত যোদ্ধা।
লেখক ও সাংবাদিক।
Leave a Reply