এ আই রবি, ব্যুরো প্রধান রাজশাহী:
রাজশাহীর বাঘা উপজেলার মীরগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের চারতলা নতুন ভবন নির্মাণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগে কাজ বন্ধ করে দিয়েছে স্থানীয়রা।
বুধবার (৬ মে) সকালে নিম্ন মানে ইট ও নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে মীরগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের চতুর্থ তলা নতুন ভবন। সরোজমিনে এসে এলাকার সচেতন ব্যক্তিবর্গ ও স্থানীয়রা বন্ধ করে দিয়েছে বিদ্যালয়ের নির্মাণ কাজ।
খবর পেয়ে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী সুমন রানা ও উপসহকারী প্রকৌশলী উজ্জল রায় ঘটনাস্থলে এসে অনিয়ম অভিযোগের সত্যতা পায়। পরে তারাও নিম্নমানের ইট ও নির্মাণ সামগ্রী সরিয়ে সিডিউল মোতাবেক নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করে কাজ করার জন্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আব্দুল গনি কনষ্ট্রাকসন এর স্বাত্বাধিকারী আব্দুল গনিকে নির্দেশ দেন।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা যায়, শিক্ষা প্রকৌশলী অধিদপ্তর রাজশাহী অফিস থেকে ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে মীরগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের ৪র্থ তলা ভবন নির্মানের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। এরপর লটারীর মাধ্যমে ২০১৮ সালে ৬ নভেম্বরে ৫% কমিশনে ২ কোটি ৮৮ লাখ ৩২ হাজার ২৬৫ টাকায় মীরগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের ৪র্থতলা নতুন ভবন নির্মানের কাজটি পায় বাঘা উপজেলার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আব্দুল গনি কনষ্ট্রাকসন এর স্বাত্বাধিকারী আব্দুল গনি। এরপর ২০১৮ সালের ১০ ডিসেম্বর থেকে কাজ শুরু করে চলতি বছরের ৯ জুনের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা। কিন্তু ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান দেরিতে কাজ শুরু করে অধ্যবধি নিচ তলার ছাদের সাটারিং পর্যন্ত কাজ শেষ করেছেন। এখনো অনেক কাজ বাকী রয়েছে। এরই মধ্যে নিম্নমানের ইট দিয়ে কাজ করার অভিযোগে বুধবার সকালে স্থানীয়রা মীরগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেন। এসময় স্থানীয় সচেতন ব্যক্তিবর্গ ও শিক্ষকদের সঙ্গে ঠিকাদার তর্কে জড়িয়ে পড়েন।
এরপর শিক্ষা প্রকৌশল অধিপ্তরের কর্মকর্তারা চলে গেলে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানে কর্নধার নিম্ন মানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে কাজ করতে না দিলে বিদ্যালয়ের কাজ দুই বছরের জন্য বন্ধ রাখা হবে বলে সাবেক সভাপতি ফজলুল হককে প্রকাশ্যে হুমকি প্রদর্শন করেন।
বিষয়টি সম্পর্কে মীরগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বকুল বলেন, কাজ শুরু থেকেই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কর্নধার আব্দুল গনি ওরফে বাচ্চু নিম্নমানের ইট ও নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করে কাজ শুরু করেন। আমরা তাকে বললে তিনি উল্টো কাজ বন্ধ করার হুমকিধামকি দিতেন। বিদ্যালয়টির নির্মাণকাজ বন্ধ হওয়ার ভয়ে আমি লোক সমাজে এখনো মুখ খুলতে পারিনি।
তিনি আরো বলেন, দুই কর্মকর্তা চলে যাওয়ার পরে ঠিকাদার বাচ্চু এই ইট দিয়ে কাজ করতে না দিয়ে বিদ্যালয়ের কাজ ২ বছরের জন্য বন্ধ রাখা হবে বলে ঘোষনা দেন।
বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি ফজলুল হক বলেন, ঠিকাদারকে সিডিউল মোতাবেক কাজ করার জন্য ইতিপুর্বে একাধিকবার অনুরোধ করা হলেও তিনি কর্ণপাত না করে বহাল তবিয়তেই অনিয়মের মাধ্যমে কাজ চালিয়ে যান। বুধবার সকালে নিম্নমানের ইট এনে খোয়া ভাঙ্গা শুরু করলে স্থানীয় সচেতন ব্যক্তিবর্গদের নিয়ে গিয়ে কাজ বন্ধ করে দিয়েছি।
ঠিকাদার বাচচুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন ইট নিম্নমানের নয় ইটে রেইন স্পট রয়েছে, আমি রডসহ অন্যান্য সামগ্রী সিডিউল মোতাবেক ব্যবহার করেছি। কিন্তু ইট গুলো একটু খারাপ হয়ে গিয়েছে। প্রধান শিক্ষককে হুমকি দেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কথাটি সঠিক নয়।
শিক্ষা প্রকৌশলী অধিদপ্তর রাজশাহীর নির্বাহী প্রকৌশলী রেজাউল ইসলাম বলেন, কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভবন নির্মানে নিম্নমানের কোন সামগ্রী দিয়ে কাজ করতে দেয়া হবে না। এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে না পারলে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
Leave a Reply