যেসব কৃষিপণ্য নিয়ে গর্ব করে পাট তার অন্যতম। ফরিদপুর অঞ্চল পাট চাষের উর্বর ভূমি। এ অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণ পাট জন্মে। বৈদেশিক অর্থ উপার্জনে এখানকার কৃষকরা পাট চাষের মাধ্যমে বড় ভূমিকা রাখে। আবার পাট থেকে উপার্জিত নগদ টাকা তাদের জীবিকা নির্বাহের উপায়।
এখন পাট কাটার ও তোলার ভর মৌসুম চলছে। সদ্য ঘরে ওঠা নতুন পাট গ্রামের বাজারে বিক্রি করে মণপ্রতি ১৪০০ থেকে ১৫০০ টাকা পাচ্ছে একজন কৃষক। এই দরে পাট বিক্রি করে কী করুণ অবস্থার মধ্য দিয়ে দিনানিপাত করছে কৃষক, আমি সেটাই সংক্ষেপে বলতে চাচ্ছি।
সোনালি আঁশখ্যাত অর্থকরী ফসল পাটের সুনাম থাকলেও উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া এবং সুষম বন্যার অভাবে মূল্যবান এই ফসলের চাষ থেকে মুখ ফেরাতে শুরু করেছে ফরিদপুর অঞ্চলের কৃষকরা।
বীজ বোনার পর থেকে অন্তত ১২ থেকে ১৪টি ধাপ অতিক্রম করার পর পাট বিক্রির টাকা কৃষকের পকেটে পৌঁছায়। সবশেষ দুটি ধাপ- পাট কাটায় প্রতি ১০০ আঁটিতে ৪০০ টাকা এবং আঁটিপ্রতি বাছায় (খড়ি থেকে আঁশ ছাড়ানো) ৪০০ টাকা, মোট ১০০ আঁটি পাটে এ দুই ধাপে মজুরি বাবদ ৪০০ টাকা খরচ হয় একজন কৃষকের।
সেই সঙ্গে দিনমজুরকে একবেলা খাবারও দিতে হয়। পাট নাড়া ও শুকানোর কঠিন পরিশ্রম অধিকাংশ সময় ঘরের মানুষরা নিজেরাই করে। এর আগের ১০টি ধাপ- কোপানো, একাধিকবার নিড়ানো, সার-ওষুধ ইত্যাদি মিলিয়ে ১০০ আঁটি পাটে কমপক্ষে ৪০০ টাকা গুনতে হয় কৃষকের। আর সাধারণত বাম্পার ফলন হলেই ১০০ আঁটি পাটে মণ কিংবা মণের কাছাকাছি হয়।
সুতরাং সাধারণ হিসাবে ১ মণ পাটে একজন কৃষকের সর্বমোট খরচ হয় অন্তত ১২০০ টাকা। বাজারে নেয়ার ভাড়া, কৃষকের কায়িক পরিশ্রম ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক বিষয় এখানে হিসাবে আনা হয়নি। এরপরও যদি পাটের রঙে সঠিক মানের ঔজ্জ্বলতা না থাকে, তাহলে তার দাম কয়েকশ’ টাকা হ্রাস পায়। তাই সব মিলিয়ে কৃষকের পকেটে অবশিষ্ট থাকে না কিছুই।
কয়েক বছর আগে যেখানে ১ মণ পাট কাটতে ও বাছতে ৪০০ টাকা খরচ হতো এবং বিক্রি করে তা থেকে প্রায় ৩ হাজার টাকা পেত একজন কৃষক, এখন সেখানে খরচ দ্বিগুণ; কিন্তু উপার্জন অর্ধেক। উত্তরাঞ্চলীয় জেলাগুলোতে একটিমাত্র ফসল- শুধু ধান জন্মে; সেই ধানেরও আশানুরূপ দাম পাচ্ছে না চাষীরা।
এসব কৃষকের কী করুণ অবস্থা তা কয়েক মাস আগে সারা দেশ দেখেছে। খরচের টাকা না জোগাতে পেরে নিজের ক্ষেতে আগুন দেয়ার ঘটনাও ঘটিয়েছে হতভাগা কৃষক।
সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বছরান্তে বাড়ানো হচ্ছে, প্রশাসনকে শক্তিশালী করা হচ্ছে; কিন্তু এ দেশের কৃষকদের নামমাত্র কিছু সুযোগ দেয়া হচ্ছে। তাই বলব, সরকারের উচিত সময় থাকতেই কৃষকদের পাশে দাঁড়ানো এবং তাদেরকে যথাসাধ্য সুযোগ-সুবিধা দিয়ে কৃষিকাজকে বাঁচিয়ে রাখা। নইলে বাংলাদেশ থেকে হারিয়ে যাবে সোনালি আঁশ, পথে বসতে হবে হতভাগা কৃষকদের।
বেলায়েত হুসাইন : প্রাবন্ধিক
Leave a Reply