ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম পর্বের শেষ ম্যাচে আফগানিস্তানকে ৪ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। সাকিব আল হাসানেসর দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে ১৯ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে আফগানদের দেয়া ১৩৯ রানের লক্ষ্যে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। সাকিরে উইলো থেকে ম্যাচ জেতানো অপরাজিত ৭০ রান।
জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে শুরুতে আফগানদের বিপক্ষে টস জিতে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন সাকিব আল হাসান। উইকেটে ঘাস আছে দেখে পেসারদের দিয়ে শুরুটা আক্রমণাত্মক করতে চেয়েছিলেন।
বল হাতে অধিনায়কের অনুমান মতোই শুরু করেছিলেন সাইফ-শফিউল। দ্বিতীয় ওভারে শফিউল ইসলামের বলে টপ এজ হয়ে ফাইন লেগে ক্যাচ উঠেছিল রহমানউল্লাহ গুরবাজের। কিন্তু মাহমুদউল্লাহ লুফে নিতে পারেননি তা।
বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে প্রথম ৫ ওভার সেভাবে রান পায়নি তারা। তবে ব্যয়বহুল ষষ্ঠ ওভারে এই ক্যাচ মিসেরই মাশুল দিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ। ষষ্ঠ ওভারে ১৬ রান দিয়েছেন। ২ রানে জীবন পাওয়া রহমানউল্লাহ এরপর ঝড়ো গতিতে রান তুলেছেন জাজাইকে সঙ্গী করে।
জাজাই অবশ্য আরও বেশি বিধ্বংসী হয়ে উঠেছিলেন। ৩৫ বলে ২ ছক্কা ও ৬টি চারে করেছিলেন ৪৭ রান। দশম ওভারে তাকে ফিরিয়ে বাংলাদেশ দলে স্বস্তি ফেরান আফিফ হোসেন। একই ওভারে নতুন নামা আসগর আফগানকেও বিদায় দেন আফিফ। ২ রানে জীবন পাওয়া রহমানউল্লাহ স্কোরবোর্ড সমৃদ্ধ করলেও ২৯ রানে তাকে তালুবন্দী করেছেন মোস্তাফিজুর রহমান। দ্রুত তিন উইকেট পড়ে গেলে মোহাম্মদ নবীও থিতু হতে পারেননি বেশিক্ষণ। তাকে ৪ রানে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলে বিদায় দিয়েছেন সাকিব আল হাসান।
দ্রুত উইকেট পতনে দিশেহারা আফগানদের বিপদ আরও বাড়িয়ে দেন মাহমুদউল্লাহ। শুরুতে ক্যাচ মিস করলেও এবার আর রান আউট মিস করেননি। তার দ্রুত গতির থ্রোতে মুশফিক স্টাম্প ভাঙলে ১ রানে ফিরে যান গুলবাদিন নাইব।
এরপর ব্যাটিংয়ে শুরুর দাপট আর ধরে রাখতে পারেনি আফগানরা। দ্রুত উইকেট পতনের মিছিল বড় হতে থাকে ধীরে ধীরে। কিন্তু লম্বা ইনিংস দেখা যায়নি।
নাজিবউল্লাহ জাদরান কিছু শট খেললেও ফুলার লেন্থের অসাধারণ এক ডেলিভারিতে তাকে বোল্ড করেন সাউফউদ্দিন। ১ ছয় মেরে ১৪ রানে ফেরেন তিনি। এরপর করিম জানাতকে মোস্তাফিজের তালুবন্দী করেন শফিউল।
শেষ দিকে রশিদ খান ও শফিকউল্লাহ দ্রুত গতিতে রান তুললে ৭ উইকেটে ১৩৮ রান তুলতে পারে রশিদ খানের দল।
বাংলাদেশের হয়ে ৩ ওভারে ৯ রান দিয়ে দুটি উইকেট নিয়েছেন আফিফ হোসেন। একটি করে নিয়েছেন সাইফউদ্দিন, শফিউল, সাকিব ও মোস্তাফিজুর রহমান।
আফগানিস্তানের দেয়া ১৩৯ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশের শুরুটা হয়েছিল হতাশাজনক। ১২ রানে হারায় দুই ওপেনারকে।
দুই ওভার দেখে শুনে খেললেও তৃতীয় ওভারে মুজিবের ঘূর্ণিতে তালুবন্দী হয়েছেন লিটন দাস। উড়িয়ে মারলেও শক্তি ছিল না তাতে। লিটন বিদায় নেন ৪ রানে। পরের ওভারে নাজমুল শান্তও উড়িয়ে মারতে গিয়ে বিদায় নিয়েছেন অভিষিক্ত নাভিন উল হকের বলে। স্লোয়ারে আগেভাগে ব্যাট চালিয়ে তালুবন্দী হন রশিদের।
দুই ওপেনার উইকেট বিলিয়ে দিলেও সাকিব-মুশফিকের ব্যাটে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে স্বাগতিকরা।
এই লড়াকু জুটিতে শুরুর ধাক্কা সামলে উঠে বাংলাদেশ। ৫৮ রান করে ফেলা এই জুটি ভেঙে দেন করিম জানাত। মুশফিককে বিদায় দেন ২৬ রানে।
নতুন নামা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলে বিদায় দেন রশিদ খান। অথচ হ্যামস্ট্রিংয়ের ইনজুরি নিয়েও খুঁড়িয়ে বল করেছেন তিনি।
সাব্বির রহমান আজ দলে এসেছিলেন আমিনুল বিপ্লবের বদলে। ভূমিকা রাখতে পারেননি কোনও। ১ রানে ফিরে গেছেন অভিষিক্ত নাভিনের বলে। তবে অপরপ্রান্ত আগলে জয়ের লক্ষ্যে খেলছেন সাকিব। তুলে নিয়েছেন ক্যারিয়ারের নবম ফিফটি। ব্যাট করছেন ৫১ রানে। অপর প্রান্ত এরপরেও থেকেছে অরক্ষিত। এমন অবস্থায় আফিফ হোসেন নামলেও প্রত্যাশা মেটাতে পারেননি তিনিও। রশিদের ঘূর্ণিতে বোল্ড হয়ে ফেরেন ২ রানে।
শেষ দিকে মোসাদ্দেরে ১২ বলে ১৯ এবং সাকিব আল হাসানের ৪৫ বলে ৮ চার ও এক ছক্কায় ৭০ রানের হার না মানা ইনিংসের ওপর ভর করে ৪ উইকেট ও ৬ বল হাতে রেখে জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ।
আফগান বোলারদের মধ্যে রশিদ খান ও নাভীন উল হক ২টি, মুজিব ও করিম জানাত একটি করে উইকেট শিকার করেন।
Leave a Reply