ধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, দুর্নীতি আমরা করব না, কাউকে দুর্নীতি করতে দেব না। ঘুষ যে গ্রহণ করবে, ঘুষ যে দেবে- তারা উভয়ই অপরাধী। দুজনকেই ধরা হবে। শুধু ঘুষ নিলে তাকে ধরা হবে তা নয়, যে দেবে তাকেও ধরা হবে। কারণ ঘুষ দেওয়াটাও অপরাধ। অপরাধের সঙ্গে যদি আমাদের দলেরও কেউ সম্পৃক্ত থাকে, তাদের ছাড় দিচ্ছি না, ছাড় দেব না। শাসনটা ঘর থেকেই করতে হয়, আমিও তাই করছি। এমনকি আইনশৃঙ্খলা সংস্থারও কেউ অপরাধের সঙ্গে জড়িত হলে আমরা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিচ্ছি এবং এটা অব্যাহত থাকবে। কারণ এটা সমাজের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে গতকাল সংসদের বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয় দিনের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে একাধিক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এ সময় দেশ থেকে দুর্নীতি, অন্যায়, অবিচার দূর করতে সামাজিক সচেতনতা গড়ে তুলতে দলমত নির্বিশেষে দেশবাসীর সহযোগিতা কামনা করেন তিনি। রফিকুল ইসলাম বীরউত্তমের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা বলেন, সবাই ধোয়া তুলসী পাতা নয়। অনেকেই দুর্নীতিতে জড়িত। ছোটখাটো চোর ধরতে পারবে, কিন্তু বড় অর্থশালী-বিত্তশালীরা দুর্নীতি করলে তাদের গায়ে হাত দেওয়া যাবে না, ধরা যাবে না- এটা তো হয় না। আমার চোখে অপরাধী অপরাধীই। তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, কেউ বলতে পারবেন না সবাই একশ ভাগ সৎ হবে। ঈদের আগে যখন দেশের বাইরে ছিলাম, তখন কিছু বড় বড় জায়গায় হাত দেওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলো। এটা আমার কাছে মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। মনে হয়, এমন অনেক বড় জায়গা আছে যেখানে হাত দিলেই হাতটা পুড়ে যাচ্ছে। যারা ধরতে যায় তারাই অপরাধী হয়ে যায়। কিছু পত্র-পত্রিকা লেখালেখি শুরু করে। তবে আমাদের সচেতন থাকতে হবে, কে কী বলল তাতে কান দেওয়ার দরকার নেই। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা আরও বলেন, খুব নামিদামি জায়গা হলেই তাদের যে কোনো খারাপ কিছু হবে না বা তাদের যারা মালিক তারাও তো এ ব্যাপারে গ্যারান্টি দিতে পারবে না। তিনি বলেন, দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক যে অগ্রযাত্রা শুরু হয়েছে, তা অব্যাহত রাখতে হবে। সমাজ থেকে অন্যায়-অবিচার দূর করতে হবে। শুধু বাহিনীর ওপর নির্ভরশীল তা নয়, সামাজিকভাবে সচেতন করতে হবে।
সব সময় নিজেকে জনগণের সেবক মনে করি : জাতীয় পার্টির বেগম রওশন আরা মান্নানের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সব সময় নিজেকে বাংলাদেশের জনগণের একজন সেবক মনে করি। প্রধানমন্ত্রীত্বটা হলো একটা সুযোগ মানুষের জন্য কাজ করার। আমি সেই সুযোগটুকু কাজে লাগিয়ে দেশের মানুষের কতটা উন্নয়ন করা যায় সে চেষ্টাই করি। তিনি বলেন, শুধু আমাদের দেশেই নয়, সব দেশেই দেখা যায়- একটা দেশ যখন অর্থনৈতিক এবং সামাজিক উন্নয়নে অগ্রযাত্রা শুরু করে তখন কিছু কিছু ক্ষেত্রে এ ধরনের টাউট-বাটপার বা বিভিন্ন ধরনের লোক সৃষ্টি হয়। শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে এদের দমন করা সম্ভব নয়। এটা সামাজিকভাবেও করতে হবে। জঙ্গি-সন্ত্রাস-মাদক ও দুর্নীতি দমনে জনসচেতনতা সৃষ্টির বিষয়টি ইতিমধ্যে গুরুত্ব দিয়েছি।আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী গোয়েন্দা সংস্থা সবাইকে কাজে লাগাচ্ছি। পাশাপাশি আমাদের সমাজের বিভিন্ন মানুষ যেমন শিক্ষক, অভিভাবক, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সবাইকে নিয়ে বিশিষ্টজন, জনপ্রতিনিধি যারা আছে তাদের বলব- প্রত্যেকটি এলাকায় একটা কমিটি করুন। যাতে এ ধরনের কোনো অন্যায়কে কেউ যেন প্রশ্রয় না দেয়।
’৭৪ সালের দুর্ভিক্ষটা ছিল পরিকল্পিত : জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ডা. রুস্তম আলী ফরাজীর সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষটা ছিল পরিকল্পিত। এ ঘটনার যিনি মূল হোতা ছিলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী জেনারেল জিয়াউর রহমান তাকে খাদ্যমন্ত্রী করেছিলেন। তার পুত্র বিএনপির এখনো বড় নেতা।
দুর্নীতি শূন্যের কোঠায় আনার পরিকল্পনা : এমপি বেগম রওশন আরা মান্নানের লিখিত প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান সরকার টানা তৃতীয়বার দায়িত্ব গ্রহণের পর দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়ার লক্ষ্যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। তাছাড়া দুর্নীতি প্রতিরোধে দুর্নীতি দমন কমিশনকে শক্তিশালী করা, জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম জোরদারসহ আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে দুর্নীতি শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার বিশেষ পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। এর মাধ্যমে সরকার দুর্নীতির বিষবৃক্ষ সম্পূর্ণ উপড়ে ফেলে দেশের প্রকৃত আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও জনকল্যাণে একটি সুশাসনভিত্তিক প্রশাসনিক কাঠামো ও কল্যাণমূলক রাষ্ট্র গঠন করতে বদ্ধপরিকর।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন আইন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত একটি স্বাধীন ও স্ব-শাসিত সংস্থা। কমিশন নিরপেক্ষভাবে দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান ও তদন্ত করে। বর্তমানে দুর্নীতি দমন কমিশনের কার্যক্রমের ফলে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বা দফতরে দুর্নীতির মাত্রা ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে। শেখ হাসিনা আরও বলেন, কমিশন দুর্নীতি প্রতিরোধে কর্মকৌশল প্রণয়ন করেছে। এ কর্মকৌশলের আওতায় দুর্নীতি প্রতিরোধে জনসচেতনতা গড়ে তোলার লক্ষ্যে গণশুনানি আয়োজন করার পাশাপাশি সমাজের সৎ ও স্বচ্ছ ব্যক্তিদের নিয়ে দেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলায় ‘দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি’; ‘স্কুল-কলেজের সততা সংঘ’ গঠন এবং ‘সততা স্টোর’ স্থাপন করা হয়েছে। এসব ইতিবাচক কার্যক্রমের ফলে সাধারণ জনগণ দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হচ্ছে। স্কুল-কলেজের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মধ্যে দুর্নীতিবিরোধী মনোভাব সৃষ্টি হচ্ছে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের আমলে দুর্নীতি প্রতিরোধে গ্রহণ করা যাবতীয় ব্যবস্থার বিস্তারিত বর্ণনা দেন।
Leave a Reply