মোঃ জিল্লুর রহমান (চারঘাট) রাজশাহী প্রতিনিধি
চারঘাট উপজেলার পদ্মা নদীর অববাহিকায় ফের বিষধর চন্দ্রবোড়া (রাসেল ভাইপার) সাপের আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। ভারত থেকে আসা সাপের এ প্রজাতির দেখা মিলছে দুই বছর যাবৎ। এ বছর এর আনাগোনা আরও বেড়েছে।
স্থানীয় লোকজনের দাবি, চলতি বছরের গত এক মাসে ১০টির বেশি চন্দ্রবোড়া সাপ মেরেছেন তাঁরা। সবশেষ গত বৃহস্পতিবার চারঘাট পৌর এলাকার গোপালপুরসংলগ্ন পদ্মার চরে তিনটি সাপ মারেন স্থানীয়রা। চর থেকে পদ্মার পানি নেমে যাওয়ায় আখ কাটতে ও বিভিন্ন ফসল আবাদ করতে ব্যস্ত কৃষকেরা। এ অবস্থায় নদীসংলগ্ন চরে সাপের উৎপাত বাড়ায় স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
স্থানীয় চর কৃষক সমিতির সভাপতি তাজমল হক জানান, গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত ১৪টি চন্দ্রবোড়া মেরেছেন তাঁরা। এই সময়ে সাপের ছোবলে অসুস্থ চারজনকে অ্যান্টিভেনম দিয়ে সুস্থ করেছেন চিকিৎসকেরা। সাপের বিষক্রিয়ায় মারা গেছে তিনজন।
সবশেষ গত ১১ নভেম্বর পদ্মা নদীতে মাছ ধরতে গেলে ইউসুফপুর গ্রামের জেলে আব্দুল খালেককে চন্দ্রবোড়া ছোবল দেয়। দ্রুত রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকদের তৎপরতায় প্রাণে বেঁচে যান তিনি।
এর আগে ২০২০ সালের ২৪ আগস্ট উপজেলার মুক্তারপুর গ্রামের কৃষক হাফিজুর রহমান বিষধর সাপের ছোবলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। স্থানীয় লোকজন সাপটি মেরে ছবি তুলে রাখেন। সেই ছবি দেখে বন বিভাগের কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেন, সাপটি চন্দ্রবোড়া ছিল।
চলতি বছরের আগস্ট মাসে চারঘাটের পিরোজপুর এলাকায় জেলেদের জালে আটকা পড়ে একটি সাপ। জেলেরা বস্তায় ভরে ওই সাপ নিয়ে যায় বন বিভাগের কাছে। পরে তৎকালীন বন কর্মকর্তা এ বি এম আবদুল্লাহ সাপটি চন্দ্রবোড়া বলে শনাক্ত করেন।
এদিকে গত মাস থেকে আবারও চন্দ্রবোড়ার আতঙ্ক দেখা দেওয়ায় উদ্বেগ জানিয়েছে স্থানীয়রা।
স্থানীয় কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, পদ্মায় পানি বাড়লে স্রোতে ভারত থেকে বিষধর সাপ ভেসে আসে। এখন চরের জমি থেকে পানি নেমে গেছে। কিন্তু চরের আখখেত ও ঝোপঝাড়ে বেড়েছে সাপের উৎপাত। গত বৃহস্পতিবারও তিনটা সাপ মারা পড়েছে। স্থানীয়রা সাপগুলোকে বিষধর চন্দ্রবোড়া বলে শনাক্ত করেছেন।
স্থানীয় সমাজ সেবক সাইফুল ইসলাম বলেন, চন্দ্রবোড়া সাপ আগে দেখা যেত না। দুই বছর যাবৎ দেখা মিলছে। তবে গত কয়েক দিন কৃষকেরা চরে
কৃষিকাজ করতে গিয়ে প্রায়ই এ সাপের দেখা পাচ্ছেন। বিষয়টা নিয়ে স্থানীয়রা বেশ চিন্তিত।
উপজেলা বন বিভাগের কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘এ অঞ্চলে এর আগেও চন্দ্রবোড়া উদ্ধার করেছে রাজশাহী বন বিভাগ। তবে গত কয়েক দিনে মারা সাপগুলো সম্পর্কে আমাদের জানানো হয়নি। না দেখে আমরা শনাক্ত করতে পারব না।’
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আশিকুর রহমান বলেন, গত কয়েক দিনে সাপে কাটা রোগী আসেনি। তবে এ উপজেলায় বিষধর সাপের উৎপাত আছে। এ কারণে হাসপাতালে সাপের অ্যান্টিভেনম সরবরাহ রাখা হয়েছে।
Leave a Reply