সারোয়ার হোসেন, তানোর: রাজশাহীর তানোরে শিবনদী বা বিল কুমারী বিলের ব্রীজে ব্লক দেওয়ার নামে সাড়ে তিন কোটি টাকার অলোকিক প্রকল্প চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আবার সংযোগ সড়কের নিচে খনন করে জিও ব্যাগে মাটি ভর্তি করে দেওয়া হচ্ছে বস্তুা। এর আগেও প্রটেকশন ওয়াল তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু ভেসে গেছে বন্যায়। আগের ব্লক তুলে ভেকু মেশিন দিয়ে মাটি কেটে দেওয়া হচ্ছে বস্তা।অথচ এমন ব্লক ব্যাগ আগেও দেওয়া হয়েছিল বলেও নিশ্চিত করেন স্হানীয়রা। এবার সড়কের নিচে গভীর ভাবে খনন করে দেওয়া হচ্ছে মাটি ভর্তি জিও ব্যাগ।
সারা বছরই ব্রীজে কোন না কোন প্রকল্প চলতেই থাকে। এজন্য স্হানীয়রা বলছে আজব ব্রীজে আর কতকাল চলবে এমন অলোকিক প্রকল্প । নাকি আরো কয়েক যুগ চলবে এমন প্রশ্নও দেখা দিয়েছে জনমনে। আর প্রকল্প না চললে কর্তা বাবুদের পকেট ভরবে কিভাবে এমনও প্রশ্ন স্হানীয়দের মধ্যে। এমনকি ব্লক দেওয়ার পরিবর্তে মাটি ভর্তি বস্তা দেওয়া হচ্ছে বলেও নিশ্চিত হওয়া গেছে। আবার রাস্তা ও ব্রীজের ধার ঘেষে মাটি কেটে সেই ভিজে মাটি বস্তায় ভরে দিচ্ছেন। এতে করে ব্রীজ ও রাস্তা চরম হুমকিতে পড়েছে। ফলে সাইনবোর্ড লাগিয়ে কাজ করার দাবি জানিয়েছেন স্হানীয়রা। এছাড়াও ওই ঠিকাদার বিগত ২০১৩-১৪ সালের দিকে ব্রীজের পশ্চিম দিকে ব্লকের বিপরীতে বাঁশ দিয়ে ধরা খেয়েছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তিনিই আবার কিভাবে কাজ করেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, ব্রীজের পূর্ব দিকে সংযোগ সড়কের দক্ষিণে রাস্তা সংলগ্ন ধার দিয়ে ভেকু মেশিনে মাটি কাটছে। এছাড়াও ব্রীজের মুখ সংলগ্ন জায়গায় মাটি কাটা হয়েছে। যার কারনে ব্রীজের পূর্ব দিকের মুখসহ সংযোগ সড়ক চরম হুমকিতে পড়েছে। যে কোন মুহুর্তে ঘটে যেতে পারে বড় ধরনের দূর্ঘটনা। অথচ এত ঝুঁকি পূর্ন হলেও সমান তালে চলছে ছোট যানবাহন। দীর্ঘদিন ধরে ব্রীজের পূর্ব দিকে ফেলে রাখা হয়েছে বালি। নজরেও আসেনা কারো। কি কারনে, কিসের জন্য এত ব্যয় বহুল প্রকল্প চলবে কতকাল।
এমনকি কাজ করার সময় কে ঠিকাদার আর কে কর্মকর্তা বোঝাও কষ্ট কর। বেশির ভাগ সময় কেউ না থাকলেও দেদারসে চলে কাজ। অবশ্য মিস্ত্রিদের কাজের অভিজ্ঞতায় চলছে কাজ। সেখানেই ছিলেন মৎসজীবি আজিমুল, বিশু, কলিমসহ অনেকে তারা জানান রাস্তা ও ব্রীজের নিচ থেকে যেভাবে মাটি কাটা হচ্ছে। এজন্য সংযোগ সড়ক ও ব্রীজের পূর্ব দিকের মুখ হুমকিতে পড়েছে। এর আগেও একই ভাবে বস্তা ও ব্লক দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বন্যায় সবকিছু ভেঙ্গে গেছে। আবার পুনরায় একই ভাবে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এভাবে কাজ করলে টিকসই হবেনা। কারন অতীতে ব্লক প্রটেকশন ওয়াল নির্মাণ করা হয়েছিল। যার কোন অস্তিত্ব নেই।আবার একই ভাবে দেওয়া হচ্ছে ব্লক ও মাটির বস্তা। কথায় আছে সরকারি মাল দরিয়া মে ঢাল। এই সংযোগ সড়ক কবে ঠিক হবে, নাকি প্রতি বছর এভাবেই বরাদ্দ দেওয়া হবে কে জানে।দেশের বড়বড় ব্রীজ সেতু নির্মান হয়ে গেলেও এই ব্রীজ ও সড়কে কি এমন যাদু বা রহস্য আছে যে এতদিনেও কাজ শেষ হচ্ছে না।
জানা গেছে তানোর ও মোহনপুর উপজেলার জনসাধারণের প্রানের দাবি ছিল বিলকুমারি বিলে সেতু নির্মাণ। সেই দাবির প্রেক্ষিতে এবং দুই উপজেলায় বন্ধন তৈরি করতে বিগত ২০০৬ সালের দিকে ব্রীজের ভিত্তি প্রস্তর স্হাপন করেন প্রয়াত সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার আমিনুল হক।কিছুদিন কাজ হওয়ার পর নানা জটিলতায় থমকে যায় কাজ।এরপরে ওমর ফারুক চৌধুরী সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার পর শুরু হয় পুরোদমে কাজ। ব্রীজের কাজ শেষ হলেও দীর্ঘ প্রায় এক যুগ পার হলেও শেষ হয়নি সংযোগ সড়কের কাজ। সংযোগ সড়কের এতই বেহাল অবস্থা কোন বড় যান চলাচল করতে পারে না। বিশেষ করে ব্রীজের পূর্ব দিকের সংযোগ সড়ক ও ওই দিকের ব্রীজ মূখের দুপাশ চরম হুমকিতে পড়েছে। দক্ষিণের ব্রীজের মুখ সংলগ্ন সংযোগ সড়ক ভেঙে গেছে। চরম ঝুঁকি নিয়েই ছোট যানবাহনে চলতে হচ্ছে। সামান্য পরিমান মালামাল নিয়েও যেতে পারে না। এবারে সংযোগ সড়কের দক্ষিণে ব্রীজের মুখ থেকে বাঁধ পর্যন্ত প্রচুর গর্ত করে মাটি ভর্তি জিও ব্যাগ দেওয়া হচ্ছে। সেখানেই কথা হয় ঠিকাদার আব্দুর রশিদের সাথে তিনি জানান নিয়ম অনুযায়ী কাজ হচ্ছে। বরাদ্দ কত জানতে চাইলে তিনি জানান সাড়ে তিন কোটি টাকা। সড়কের নিচে খনন করে মাটি ভর্তি জিও ব্যাগ দেওয়া যায় কি না, তিনি একটু ক্ষোভ করেই বলেন অবশ্যই। তবে তখন অফিসের কোন লোকজন ছিলেন না।
এলজিইডির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে জানান, আসলে ঠিকাদার এক সময় ট্রাকের বডি বানানোর কাজ করত। এসব কাজ করেই তিনি লাখপতি। আমরা নিয়ম মত কাজ করছি।এবার সড়ক টিকসই হবে।
এলজিইডি প্রকৌশলী সাইদুর রহমানের কাছে জানতে চাওয়া হয় ব্লক না দিয়ে ভিজে মাটি ভর্তি জিও ব্যাগ দেওয়া ও সড়কের নিচে খনন করলে হুমকিতে পড়বে কিনা তিনি জানান মাটি ভর্তি জিও ব্যাগ দিতে পারবে। মাটি খনন করে গভীর করা হচ্ছে। সেই গভীরে দেওয়া হচ্ছে জিও ব্যাগ।উপরে থাকবে ব্লক। সংযোগ সড়ক যাতে করে টিকসই হয় সে ভাবেই কাজ হচ্ছে।
Leave a Reply