ফাইল ছবি
তিনি বটবৃক্ষ, নিদাঘ সূর্যের তলে সন্তানের অমল-শীতল ছায়া। তিনি বাবা। বাবার তুলনা তিনি নিজেই। বাবা শাশ্বত, চির আপন, চিরন্তন। বাবা মানে নির্ভরতার আকাশ আর নিঃসীম নিরাপত্তার চাদর। ‘মরিয়া বাবর অমর হয়েছে, নাহি তার কোন ক্ষয়/ পিতৃস্নেহের কাছে হয়েছে মরণের পরাজয়’— সন্তানের প্রতি বাবার ভালোবাসা এতোটাই স্বার্থহীন যে, সন্তানের জন্য নিজের প্রাণ দিতেও তাঁরা কুণ্ঠাবোধ করেন না। আজ রবিবার ১৬ জুন। বিশ্ব বাবা দিবস। বছরের এই একটি দিনকে প্রিয় সন্তানরা আলাদা করে বেছে নিয়েছেন। জুন মাসের তৃতীয় রবিবার সারা বিশ্বের সন্তানরা পালন করবেন এই দিবস।
রাগ শাসন আর রাশভারী চেহারার আবডালে এই মানুষটির যে কোমল হূদয় তা মাতৃহূদয়ের চেয়ে কম নয়। ‘মা’ এর মতো ‘বাবা’ও ছোট্ট একটি শব্দ, অথচ গভীরতা অতলান্ত-অসীম। পবিত্র কুরআনে সুরা আহকাফের ১৪ নম্বর আয়াতে, বনী ইসরাইলের ২৪ নম্বর আয়াতে, সুরা নিসার ৩৬ নম্বর আয়াতে সুরা লোকমানের ১৪ আয়াতে পিতা-মাতার খেদমত করার নির্দেশ দিয়েছেন আল্লাহ পাক। সন্তানের জন্য পিতার দোয়া আল্লাহর কাছে পৌঁছাতে কোন আড়াল থাকে না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহে ওয়া সাল্লাম বলেছেন,‘পিতা-মাতা জান্নাতের মাঝের দরজা। যদি চাও, দরজাটি নষ্ট করে ফেলতে পারো, নতুবা তা রক্ষা করতে পারো। (তিরমিযী, তুহফাতুল আহওয়াযী, ৬/২৫)। রাসূল (সা) বলেছেন, ‘তার নাক ধূলায় মলিন হোক (৩ বার),সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! সেই হতভাগ্য ব্যক্তিটি কে? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহে ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, সে হলো ঐ ব্যক্তি, যে তার পিতা-মাতা উভয়কে অথবা একজনকে পেল অথচ তাদের সেবা করে জান্নাত হাসিল করতে পারলো না’ (মুসলিম-৪/১৯৭৮, হা-২৫৫১)। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহে ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহর সন্তুষ্টি পিতার সন্তুষ্টিতে এবং আল্লাহর অসন্তুষ্টি পিতার অসন্তুষ্টিতে নিহিত।’ (তিরমিযি-১৮৯৯)।
‘পিতা স্বর্গ, পিতা ধর্ম, পিতাহী পরমং তপঃ, পিতরী প্রিতিমাপন্নে প্রিয়ন্তে সর্বদেবতা’— সনাতন ধর্মাবলম্বীরা এই মন্ত্র জপে বাবাকে স্বর্গজ্ঞান করে শ্রদ্ধা করেন। পিতা সন্তানের মাথার ওপর যার স্নেহচ্ছায়া বটবৃক্ষের মতো, সন্তানের ভালোর জন্য জীবনের প্রায় সবকিছুই নির্দ্বিধায় ত্যাগ করতে হয় তাঁকে। আদর-শাসন আর বিশ্বস্ততার জায়গা হলো বাবা। বাবার মাধ্যমেই সন্তানের জীবনের শুরু। সন্তান বাবার ঋণ কখনো পরিমাপ করতেও পারে না।
এনসাইক্লোপেডিয়া জানাচ্ছে, জুন মাসের তৃতীয় রবিবার বিশ্বের প্রায় ৭৪টি দেশে বাবা দিবস পালিত হয়। তৃতীয় রবিবার হিসাবে এ বছর ১৬ জুন পালিত হচ্ছে বাবা দিবস। ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৯০৮ সালে প্রথম বাবা দিবস উদ্যাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার ফেয়ারমন্টে ৫ জুলাই এই দিবস পালন করা হয়। ১৯৬৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তত্কালীন প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি জনসন জুন মাসের তৃতীয় রবিবারকে আনুষ্ঠানিকভাবে বাবা দিবস হিসেবে নির্ধারণ করেন। ১৯৭২ সালে প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন প্রতিবছর জাতীয়ভাবে বাবা দিবস পালনের রীতি চালু করেন। সামপ্রতিক বছরগুলোতে ইন্টারনেট, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং স্যাট টিভির তুমুল প্রচার দাক্ষিণ্যে বাবা দিবস ঘটা করেই পালিত হচ্ছে। বাবার জন্য একদিন কেন! কেউ কেউ বলে থাকেন, বাবা দিবসটা ঠিক আমাদের জন্য নয়। এটি মূলত পাশ্চাত্যের। বাবার জন্য আমাদের অনুভূতি প্রতিদিনকার। প্রতি মুহূর্তের। তার জন্য আলাদা দিনের দরকার নেই। বাংলাদেশে অনেক সন্তান তাদের পিতাকে ভাবে অভাজন। পিতার বুকফাটা আর্তনাদ না শোনার মতো সন্তানও এই সমাজে আছে। ‘ছেলে আমার মস্ত মানুষ, মস্ত অফিসার/মস্ত ফ্ল্যাটে যায় না দেখা এপার-ওপার। নানান রকম জিনিস আর আসবাব দামি দামি/সবচেয়ে কমদামি ছিলাম একমাত্র আমি/ছেলে আমার, আমার প্রতি অগাধ সম্ভ্রম/আমার ঠিকানা তাই বৃদ্ধাশ্রম।’ নচিকেতার এই গানের বাস্তবতা মিলবে গাজীপুরের বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্রে। বাবা দিবস অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও নানা আয়োজনে পালন করা হবে।
ইত্তেফাক/আরকেজি
Leave a Reply