কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি ঃ
বিধি ভেঙে কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী সরকারি কলেজে সিনিয়র শিক্ষককে বাদ দিয়ে জুনিয়র শিক্ষক সামসুল আলমকে বড় অংকের অর্থের বিনিময়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসাবে দায়িত্ব হস্তান্তরের অভিযোগ উঠেছে বিদায়ী অধ্যক্ষ ছামিউল ইসলামের বিরুদ্ধে। অনিয়ম দুর্নীতি ঢাকতে গভীর রাতে দাঁতভাঙ্গা বাজারের চাঁন মিয়ার ব্যবসায়ী দোকানে বসে এ দায়িত্বভার হস্তান্তর করা হয়। এ নিয়ে শিক্ষক,কর্মচারী,শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে সিনিয়র (ক্রমিক নং ১নম্বর) শিক্ষক হায়দার আলী রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও রৌমারী সরকারি কলেজ সভাপতি’র নিকট একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগে জানা যায়,মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের বিধি ভেঙে গত সোমবার রাত ১২ টা ১ মিনিটে সংশ্লিষ্ট কলেজ থেকে ১২ কিলোমিটার দুরে দাঁতভাঙ্গা বাজারের চাঁন মিয়ার ব্যবসায়ী দোকানে বসে সামসুল আলম কে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব হস্তান্তর করেন বিদায়ী অধ্যক্ষ ছামিউল ইসলাম জীবন। রাতের অন্ধকারে বাজারের দোকানে বসে দায়িত্ব হস্তান্তরের একটি চিত্র শুক্রবার ফঁাস হয়ে গেলে তোলপাড় শুরু হয়। ছবিতে দেখা যায় কলেজের আদেশ বইতে অধ্যক্ষ ছামিউল ইসলাম জীবন ও অধ্যক্ষ ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব বুঝে পাওয়া শিক্ষক সামসুল আলম সবার উপস্থিতিতে স্বাক্ষর করেছেন। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঐ দোকানের মালিক চাঁন মিয়া।
জানাযায়, ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দ রৌমারী ডিগ্রি কলেজটি সরকারি হিসেবে গেজেট প্রকাশ হয়। এখনও শিক্ষক-কর্মচারীদের আত্তীকরণ হয়নি। এদিকে ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের ৪ এপ্রিল অধ্যক্ষ ছামিউল ইসলাম জীবন এর চাকুরির শেষ কর্মদিবস ছিল। তিনি অতি গোপনে ও নিয়ম বহির্ভূত ও বিধি ভেঙ্গে রাত ১২.১ মিনিটে দাঁতভাঙ্গা বাজারের একটি ব্যবসায়ী দোকানে বসে জ্যোষ্ঠতম অনুসরণ না করে ক্রমিক এক নং শিক্ষক হায়দার আলীকে বাদ দিয় ক্রমিক তিন নং শিক্ষক সামসুল আলমকে অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) দায়িত্ব দিয়েছেন।
এদিকে ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ জানুয়ারি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) প্রফেসর মোঃ শাহিদুল খবির চৌধুরী স্বাক্ষরিত ও স্মারক নং- ৩৭.০২.০০০০.১০৪.৯৯.০৫৩.২০১৬-৬৭ এর ‘সদ্য সরকারিকৃত কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) হিসেবে দায়িত্ব অর্পণ/গ্রহণ সংক্রান্ত একটি পত্র জারি করেন। পত্রটি অনুসরণ করে সরকারিকৃত কলেজের শিক্ষক-কর্মচারী আত্তীকরণ বিধিমালা-২০১৮-এর আলোকে সরকারিকৃত কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীগণ আত্তীকৃত না হওয়া পর্যন্ত মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের এবং শিক্ষামম্ত্রণালয় ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ২৭ আগস্ট ৩৭.০০.০০০০.০৭০.০০২.০০৪.২০১৮-৮৮ সংখ্যক স্মারকপত্রের নির্দশনা অনুযায়ী কলেজের আর্থিক বিষয়ক সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। সেক্ষেত্রে অবসর, মত্যুবরণ অথবা যে কোন কারণে অধ্যক্ষর পদটি শূন্য হলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষর দায়িত্ব অর্পণ/গ্রহণের ক্ষেত্রে জষ্ঠ্যতম শিক্ষক নিবার্চনর লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় তথ্যাদিসহ সংযুক্ত করে মাধ্যমিক শিক্ষা ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরে আবেদন করতে প্রতিষ্ঠান প্রধানকে পত্র দিয় জানানো হয়েছে।
সিনিয়র শিক্ষক মোঃ হায়দার আলী অভিযাগ করে বলেন, জ্যষ্ঠতার ভিত্তিতে আমি ১ নং সিনিয়র শিক্ষক হিসাবে কর্মরত রয়েছি। কে আমাকে বাদ দিয়ে বিধি ভঙ্গ এবং টাকার বিনিময় গভীর রাত এক ব্যবসায়ী দাকানে বসে ৩ নং শিক্ষক সামসুল আলমকে দায়িত্ব দিয়েছেন অধ্যক্ষ ছামিউল ইসলাম। যা বিধি সম্মত নয়। তিনি আরও বলেন, এ পদে দায়িত্ব পাওয়ার অধিকারে বিভিন্ন দফতরে লিখিত অভিযাগ দিয়েছি।
সামসুল আলম কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষর দায়িত্ব পাওয়া প্রসঙ্গে বলেন, যোগ্য হিসেবে আমি দায়িত্ব পায়ছি। রাত ১২.১ মিনিট দায়িত্ব হস্তাÍর সম্পর্ক প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, রাতে দায়িত্ব হস্তান্তর ফরম টিতে স্বাক্ষর করছি তা সত্য। এ প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, ১ নং শিক্ষক হায়দার আলী জামাত পন্থি হওয়ায় তাঁকে কর্তৃপক্ষ ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব দেয়নি। তবে ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব পেতে আমি কাউকে কোন প্রকার টাকা দেইনি। কেউ বললে তা মিথ্যা।
বিদায়ী অধ্যক্ষ মা. ছামিউল ইসলাম জীবন বলেন, যাগ্য হওয়ায় সামসুল আলমকে দায়িত্ব দিয়েছি। বর্তমান আওয়ামীলীগ করেন তিনি। আর হায়দার আলী জামাতের উপজলা সাবেক আমীর ছিলেন। এজন্য তাকে আমরা দায়িত্ব দেইনি। কোন প্রকার অর্থ লেনদেন হয়নি। কলেজ পরিবেশ না থাকায় এবং হাতে সময় না থাকায় দাকানে বসে দায়িত্ব হস্তান্তর করছি।
কুড়িগ্রাম জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ডিইও) মোঃ শামছুল আলম বলেন, সিনিয়র শিক্ষককে বাদ দিয়ে অন্যকোন শিক্ষককে অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) পদে বসানো যাবেনা। বলে মাউশির একটি বিধি পত্র দিয়েছেন প্রতিষ্ঠান প্রধানকে। তারপও বিধি ভঙ্গ কেউ জুনিয়র শিক্ষক দায়িত্ব দিলে এবং এর সঙ্গে জরিত থাকলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
রৌমারী সরকারি কলেজের সভাপতি ও উপজলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবিএম সারোয়ার রাবী জানান, দায়িত্ব হস্তান্তর বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। তবে আমি নিয়ম অনুসার মাউশিতে জ্যষ্ঠাতার তালিকা প্রেরণ করব। এ পদে কে থাকবে তা নির্ধারণ করবে মাউশি। আমি মাউশির বিধি’র বাইরে কাউকে দায়িত্ব দেয়ার এখতিয়ার রাখিনা।
#
(সাইফুর রহমান শামীম,০১৭১৮০৭০৩৮৮)
Leave a Reply