তানোর প্রতিনিধি: আগামি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সংসদের ২০৪ জন দলীয় এমপি থেকে প্রাথমিক ভাবে প্রায় শতাধিক প্রভাবশালী, ত্যাগী, আদর্শিক, পরীক্ষিত, কর্মী-জনবান্ধব ও জনপ্রিয় নেতার নাম ফের মনোনয়নের জন্য স্থির করেছে বলে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা রয়েছে। এছাড়াও সমালোচিত, ‘গডফাদার’ ও ‘জনবিচ্ছিন্ন’ সংসদ সদস্যদের এবার মনোনয়ন না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমন গুঞ্জন বইছে সর্বত্র। যেসব এমপির বিরুদ্ধে এলাকায় খুন,
দুর্নীতি, মাদক ব্যবসা, ঋণ খেলাপি, টেন্ডার-চাঁদাবাজিসহ দখলদারিত্বের মতো গুরুতর অভিযোগ উঠেছে তারা কেউ মনোনয়ন পাবেন না বলেও রাজনৈতিক অঙ্গনে গুঞ্জন উঠেছে। এদিকে রাজশাহীতে সরকার দলীয় দু’জন সংসদ সদস্যের সাম্প্রদায়িক গালি ও অশ্লীল ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর রাজতৈনিক অঙ্গনে মিশ্রুপ্রতিক্রিয়ার পাশাপাশি বইছে সমালোচনা ঝড়।
এসব বিবেচনায় এবার তারা মনোনয়ন বঞ্চিত হতে পারে বলে তৃণমুলের নেতাকর্মীদের মাঝে আলোচনা রয়েছে। আবার অনেক নেতাকর্মীর মনে সেই আশঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে। সুত্র জানায়, রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সাংসদ ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক ও রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সাংসদ আয়েন উদ্দিনের হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মকে আঘাত করে গালি দেওয়ার ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। এসব আপত্তিকর ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর রাজশাহী শহরসহ প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলের হাট বাজার রাস্তার মোড়ে মোড়ে চায়ের দোকানে চলছে আলোচনা সমালোচনার ঝড়। এমন কি ভিডিও গুলো ভাইরালের পর দলীয় নেতাকর্মীরা দলীয় ভাবে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দলের নীতিনির্ধারণী মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের সাংসদ আয়েন উদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ কৃষকের জমি দখল নিজেসহ তার লোকজন দিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের নির্যাতন, মোবাইল ফোনে হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মকে আঘাত করে গালি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বিগত ২০২২ সালের ২৩ নভেম্বর বুধবার দুপুরে মোহনপুর উপজেলা চত্বরে এমপি আয়েন উদ্দীনের মদদে (সাবেক) পিএস একরামুল হক বিজয়ের নেতৃত্বে প্রকাশ্যে মহিলা লীগের নেত্রী হাবিবাকে বেধড়ক পেটানো হয়েছে। এর প্রতিবাদে ভুক্তভোগী এই নেত্রী সেখানেই অনশনে বসেন। এরপর তাকে আবারো পেটাতে পেটাতে মোহনপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে নিয়ে আটকে রাখা হয়। পরে পুলিশ ও স্থানীয়দের সহায়তায় তাকে উদ্ধার করা হয়। এর আগে একই ঘটনার জেরে হাবিবাকে দুই দফা পুলিশ দিয়ে গ্রেপ্তার করিয়ে নির্যাতন করার অভিযোগও রয়েছে এমপি আয়েনের বিরুদ্ধে বলে এলাকায় আলোচনা রয়েছে।
ইতি পূর্বে দলীয় নেতাকর্মীরা নির্যাতনের প্রতিবাদ জানিয়ে, এমপি আয়েন উদ্দিন রাজাকার পুত্র অখ্যায়িত করে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃষ্টান ঐক্য পরিষদ নেতা সুরঞ্জিত বলেন, এমপি আয়েন উদ্দিনের নানা অনিয়ম-দুর্নীতি ও অশ্লীল কর্মকাণ্ডের কারণে আমরা দলের আদর্শিক নেতাকর্মীরা লজ্জিত। তিনি বলেন, আগামি নির্বাচনে এমন ঘৃনিত ব্যক্তিকে যেনো নৌকার টিকিট দেয়া না হয় তার দলের নীতিনির্ধারণী মহলের কাছে অনুরোধ করেছি। তিনি বলেন, এমপি আয়েন উদ্দিনের জামায়াত ও বিএনপিপ্রীতির কারণে আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক ভাবে ক্ষতির মুখে পড়েছে। এবিষয়ে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও মুঠোফোনে কল গ্রহণ না করায় এমপি আয়েন উদ্দিনের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়ননি।
অন্যদিকে রাজশাহী-৪ (বাগমারা) সাংসদ ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হকের এক তরুণীর সঙ্গে কথোপকথন এবং অশ্লীল দৃশ্যের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর রাজশাহীতে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। ভিডিওটিতে সাংসদ ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হককে লক্ষ করা যাচ্ছে। কারণ ভিডিওতে যে ব্যক্তিকে কথা বলতে দেখা গেছে তার সঙ্গে এমপির চেহারার মিল রয়েছে। কথোপকথন শুনেও সেটা এমপিই বলে ধারণা পাওয়া গেছে।
একটি ফেসবুক পেজ থেকে ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে। তবে ভিডিওটি নিয়ে সরকারদলীয় এমপি এনামুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, তাকে না পাওয়ায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। ভিডিওতে এক তরুণীর সঙ্গে ‘এমপি এনামুলকে কথা বলতে দেখা গেছে। নিজের দামি দামি গাড়ি, হাজার কোটি টাকা ঋণ, কয়েক হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি নিয়েও তাকে কথা বলতে শোনা যায়।
তিনি বলেন, ‘আমি যে টাকা লোন নিয়েছি তার দশগুণ টাকার তো গাড়িই আছে। সম্পত্তিও আছে কয়েক হাজার কোটি টাকার। আর আমার সম্পত্তি দিয়ে তোমাহের (তোমাদের) লাভ কী ? আর ওই বেটি সইলের লাভ কী আর দেখার দরকার কী ? আমি যে গাড়িতে চড়ি সেই গাড়ির দাম ৬ কোটি টাকা। এ রকম ৪ গাড়ি আছে, ৪টা গাড়ি আছে ৬ কোটি টাকা দামের। আমার বউ যে গাড়িতে চড়ে সেটাও সাড়ে ৪-৫ কোটি টাকা দাম। আমার ছেলে চড়ে সেটাও অনেক দামি গাড়ি। আমার ঢাকায় একটা এবং রাজশাহীতে একটা গাড়ির সেটআপ আছে। আমার পাজেরো গাড়িই আছে সাতটা। তোমাকে কে বলেছে এ রকম ফালতু কথাবার্তা ? শুনে আমার মেজাজ খারাপ হয়ে গেছে। আমার হাজার কোটি টাকা লোন থাকলে তার সমস্যা কী ?এসব কথার শেষ দিকে তিনি তরুণীর সঙ্গে অশ্লীল ভাষায় কথা বলতে শুরু করেন। এ বিষয়ে বাগমারার তাহেরপুর পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমি খুবই লজ্জিত এবং হতাশ। একজন আইনপ্রণেতার (এমপি) এমন দৃশ্য বারবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যাবে, আমরা লজ্জিত হব এই তো খুবই খারাপ লাগছে; বিষয়টি দুঃখজনক। আমরা বিভিন্ন জায়গায় ওঠাবসা করি। এমন দৃশ্য দেখার পর আমাদের বন্ধুবান্ধব, বড় ভাই এমনকি নেতারা হাসিঠাট্টা করে, আমাদের লজ্জা দেয়। আমরা এ থেকে পরিত্রাণ চাই।’
বিভিন্ন সময় নানা অপকর্মে জড়িয়ে সমালোচিত এবং বিতর্কিত হয়েছেন এনা গ্রুপের চেয়ারম্যান রাজশাহীর প্রভাবশালী এমপি এনামুল হক।
এর আগে রাজশাহী-৪ আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হকের বিরুদ্ধে গোপনে বিয়ে করে প্রতারণা ও ভ্রূণ হত্যার অভিযোগ করেছেন আয়েশা আক্তার লিজা নামের এক নারী। এসব অভিযোগ লিখে তিনি ফেসবুকে স্ট্যাটাসও দিয়েছেন। তবে এমপি এনামুল হকের দাবি ছিল, তিনি লিজার চাঁদাবাজি ও ব্ল্যাকমেইলের শিকার হয়ে বিয়ে করেছিলেন। পরে আইন অনুযায়ী তালাক (ডিভোর্স) দেন। আয়েশা আক্তার লিজার অভিযোগ ছিলো, ২০১২ সালে এমপি এনামুল হকের সঙ্গে তার পরিচয় ও প্রেমের সূত্রপাত হয়। ২০১৩ সালের ৩০ এপ্রিল তারা ধর্মীয় বিধিমতে পারিবারিকভাবে বিয়ে করেন। কিন্তু বিয়ের কারণে সামনের নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেতে সমস্যা হতে পারে- এমন আশঙ্কায় তখন বিয়ে রেজিস্ট্রি করেছিলেন না এনামুল হক। এরপর আট বছর তারা সংসার করেছিলেন। লিজা বাগমারার এনামুল হকের বাড়িতে এবং রাজশাহী ও ঢাকার বাড়িতে থেকে সংসার করেছিলেন। তবে কোনো দিন বাইরের কারও সামনে তাকে স্ত্রী হিসেবে স্বীকৃতি দেননি এমপি এনামুল। বিষয়টি জানতেন এনামুল হকের প্রথম স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যরাও। ২০১৫ সালে লিজা অন্তঃসত্ত্বা হলে এনামুল হক তার বাচ্চা নষ্ট করান। তখন এনামুল হক তাকে আশ্বাস দেন, আবারও এমপি হতে পারলে তাকে বাচ্চা ও স্বীকৃতি দেবেন। সে জন্য লিজা অপেক্ষা করছিলেন। কথামতো ২০১৮ সালের ১১ মে তারা রেজিস্ট্রি করে আবারও বিয়ে করেন। কিন্তু এর পরও এনামুল স্বীকৃতি দেননি ওই নারীকে।
সাংসদ ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হকের অশ্লীল ভিডিও ভাইরাল হওয়ায় আওয়ামী লীগের তৃণমূলে চরম অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে।
Leave a Reply