তানোর প্রতিনিধি: রাজশাহীর তানোরের কামারগাঁ ইউনিয়ন (ইউপি) বিএনপির সাবেক সভাপতি জাকির হোসেন জুয়েল কবিরাজ ও তার ছোট ভাই আফাজ উদ্দিন কবিরাজের বিরুদ্ধে কামারগাঁ খেয়াঘাট দখল ও ভরাটের অভিযোগ উঠেছে। এতে করে রাতের আঁধারে কৃষি জমিতে পুকুর খননের মাটি ট্রাকটারে করে সদ্য নির্মিত পাকা রাস্তা নষ্ট করে খেয়া ঘাট ভরাটের ঘটনায় এলাকাবাসীর অভিযোগে রাতেই আটক করা হয় জুয়েলের ছোট ভাই যুবদল নেতা আফাজ উদ্দিন কবিরাজকে। তবে রহস্যজনক কারণে সকালেই আফাজ উদ্দিন কবিরাজকে থানা থেকে ছেড়ে দেন পুলিশ। এতে করে রাতে আটক সকালে ছেড়ে দেয়ার ঘটনায় এলাকাজুড়ে দেখা দিয়েছে চাঞ্চল্য ও বইছে সমালোচনার ঝড়।
স্থানীয়রা জানান, জুয়েলের ছোট ভাই যুবদল নেতা আফাজ উদ্দিন কবিরাজের প্রায় ১০ বিঘা আয়তনের আম বাগান ও কৃষি জমি কেটে অবৈধ পুকুর খনন ও সেই মাটি দিয়ে খেয়াঘাট ভরাট করা হচ্ছে। কিন্তু রহস্যজনক কারনে উপজেলা প্রশাসনের নিরব ভূমিকায় জনমনে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
অন্যদিকে রাতের আঁধারে খেয়াঘাট ভরাটের ঘটনায় স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মী ফারুক ঘটনার ভিডিও ধারণ করায় তারা তাকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গ্রামবাসীর বাধা উপেক্ষা করে আমবাগান ধ্বংস, কৃষি জমিতে পুকুর খনন, পানি চলাচলের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি ও জীববৈচিত্র্য হুমকিতে ফেলে আলোচিত সেই পুকুর ফের খনন করা হচ্ছেে।
স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে ইতিমধ্যে উপজেলা প্রশাসন একবার অবৈধ পুকুর খনন বন্ধ ও ভেঁকু মেশিনের চাবি জব্দ করেছিল। কিন্তু গত (১২ এপ্রিল) বুধবার দিবাগত রাত থেকে ফের পুকুর খনন ও পুকুরের মাটি দিয়ে নদীর খেয়াঘাট ভরাট করা হচ্ছে। এতে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে অবৈধ পুকুর খননের অভিযোগে যেখানে ভেকু মেশিনের চাবি জব্দ করা হয়েছে, সেখানে সেই ভেঁকু মেশিন দিয়েই ফের কিভাবে সেই পুকুর খনন করা হচ্ছে। তাহলে এটা কি প্রশাসনের লোক দেখানো অভিযান না জুয়েল-আফাজ প্রশাসনের থেকেও শক্তিশালী ?
এদিকে সরেজমিনে গত (১২ এপ্রিল)বুধবার রাত সাড়ে ১১ টার সময় দেখা গেছে, ভেঁকু মেশিন দিয়ে পুকুর খনন ও সেই মাটি ট্রাক্টরে নিয়ে গিয়ে খেয়াঘাট ভরাট করা হচ্ছে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন জুয়েল ও আফাজ। এ সময় আফাজ গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, ভাল করে ছবি তুলে পেপার-টিভিতে দেখান, দেখি আমার পুকুর খনন ও ভরাট কে বন্ধ করছে।
মহাদেবপুর ও কামারগাঁ কলেজপাড়া গ্রামের সুমন কুমার, আলতাব আলী, ইউসুফ আলী ও মোবারক বলেন, এই অবৈধ পুকুর খনন সম্পন্ন হলে জলাবদ্ধতার কারণে মাঠের প্রায় কয়েক শ’ বিঘা ফসলী জমির ফসলহানী হবে। ভেঁকু চালক বলেন,
উপজেলা ও থানার সঙ্গে সিষ্টেম করেই পুকুর খনন করা হচ্ছে। এবিষয়ে জাকির হোসেন জুয়েল কবিরাজ বলেন, তাদের নিজস্ব জায়গায় পুকুর খনন ও ভরাট করছেন। এখানে প্রশাসন বা গণমাধ্যম কর্মীদের সমস্যা কোথায় ? আর সেখানে কোনো খেয়াঘাট ছিলনা। সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসী আফাজের অবৈধ পুকুর খনন ও জুয়েলের খেয়াঘাট ভরাট প্রতিরোধে স্থানীয় সাংসদ,রাজশাহী জেলা প্রশাসক (ডিসি), তানোর উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা
নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দেশের সরকার প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন এক ছটাক কৃষি জমি নষ্ট বা শ্রেণী পরিবর্তন করে কোনো অবস্থাতেই কোনো স্থাপনা-কলখারখানা নির্মাণ বা অকৃষি কাজে ব্যবহার করা যাবে না। অথচ সরকার প্রধানের সেই নির্দেশনা উপেক্ষা করেই কৃষি জমিতে চলছে অবৈধ পুকুর খনন। স্থানীয়রা বলছে, তবে কি সরকার প্রধানের ঘোষণার কোনো মূল্য নাই, না কি ? এরা সরকার প্রধানের থেকেও শক্তিশালী,
নইলে কি ভাবে এই অবৈধ পুকুর খনন ও
খেয়াঘাট ভরাট করা হচ্ছে। এবিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পঙ্কজ চন্দ্র দেবনাথ বলেন, একবার ওই পুকুর খনন বন্ধ করে ভেঁকু মেশিনের চাবি জব্দ করা হয়েছে। তিনি বলেন, সকালে ওই পুকুরে অভিযান দেয়া হবে। তানোর থানা পুলিশ জানান,রাতে পুকুর খনন ও ট্রাকটারে করে মাটি বহন করে জনসাধারণের খেয়াঘাট ভরাট করা হচ্ছে বলে এসপি স্যারকে ফোনে অভিযোগ দেন,সেই জন্য রাতে আফাজ উদ্দিন কে আটক করে থানায় আনা হয়েছিল। সকালে তানোর-গোদাগাড়ী সার্কেল এসপি সরজমিনে এসে ঘটনাস্থলে গিয়ে জানতে পারেন পুকুর খননে ও খেয়াঘাট ভরাটে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অনুমতি আছে, সেই জন্য আফাজ উদ্দিন কে ছেড়ে দেয়া হয়।
Leave a Reply