মো. তোফাজ্জল হোসেন, বীরগঞ্জ (দিনাজপুর) প্রতিনিধি:
সমগ্র মুসলিম উম্মাহর সবথেকে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদ উল আযহা। ঈদ উল আযাহার সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো কুরবানী। এই ঈদের সকল আনন্দ কুরবানীর পশু ক্রয়, লালনপালন, এবং সঠিকভাবে কুরবানী সম্পন্ন করে কুরবানীর মাংস সুষ্ঠ বন্টন কেন্দ্রিক। সাধারণত অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বীরা গরু, ছাগল, মহিষ কুরবানী দিয়ে থাকেন।
সামর্থ্য অনুযায়ী অনেকে একটি পশু একাই কুরবানী উৎসর্গ করেন। আবার কেউ কেউ ৩ জন, ৫ জন বা সর্বোচ্চ ৭ জন একসাথে একটি পশু কুরবানী করেন। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এককভাবে আমাদের দেশে ছাগল কুরবানী দাতার সংখ্যা সবথেকে বেশি। শহর অঞ্চলে সবাই স্ব স্ব বাড়িতে কুরবানী দিয়ে থাকেন, গ্রাম অঞ্চলে বেশ আগে দেখা যেত সমাজের বা গ্রামের সবাই সকল পশু একই জায়গায় বা নিদির্ষ্ট মাঠে উৎসব মুখর পরিবেশে কুরবানী করে থাকেন। কালের পরিক্রমায় এই রেওয়াজ প্রায় সবখানেই বিলীন হয়েছে। কিন্তু ব্যতিক্রম লক্ষ্য করা যায় দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার চকবানারশী গ্রামে। এখানে চকবানারশী মাঝাপাড়া কেন্দ্রীয় মসজিদের সকল সদস্যরা/পরিবার এখনও ধরে রেখেছেন একই জায়গায় সমাজের সকলেই কুরবানী প্রদান করার রেওয়াজ।
জানা যায়, চকবানারশী গ্রামের উক্ত সমাজে প্রায় ২০০ পরিবার রয়েছে। এই সমাজে প্রতি বছরই গরু, ছাগল, ভেড়া সহ প্রায় অর্ধশতাধিক পশু কুরবানী করা হয়। সমাজের সকলেই ঈদগাহে পবিত্র ঈদের নামাজ আদায়ের পরে সকল পশুই নির্দিষ্ট একটি জায়গায় উৎসব মুখর পরিবেশে কুরবানী সম্পন্ন করে থাকে। দীর্ঘ প্রায় ১০০ বছর থেকে গ্রামের মাঝাপাড়া এলাকায় একটি বাগানে এই কুরবানী অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। কুরবানীর সুবাদে উক্ত মাঠের নাম কুরবানী মাঠ নামে পরিচিতি লাভ করেছে। উক্ত গ্রামের বাসিন্দা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, স্টুডেন্টস এসোসিয়েশন অব বীরগঞ্জ দিনাজপুরের সাবেক সফল সাধারণ সম্পাদক মোঃ মোর্শেদ হাসান আসিফ বলেন, আমরা দীর্ঘদিন থেকে সকলেই এই একই জায়গায় কুরবানী সম্পন্ন করে আসছি। একত্রিত হয়ে কুরবানী করতে এই এলাকার সকল মানুষ ই সকল কে সহজেই সহযোগিতা করতে পারে এবং একসাথে পুরো সমাজের এতগুলো পশু কুরবানী করা আমাদের কাছে উৎসবে পরিণত হয়। আমরা বেশ আনন্দ নিয়ে সকলেই কুরবানী সম্পন্ন করি এবং উক্ত কুরবানীর মাংস সমাজের মানুষের মধ্যে সুষ্ঠু ভাবে বন্টন করা করি। আমাদের শত বছরের এই ঐতিহ্য আমাদেরকে গৌরবান্বিত করে।
চকবানারশী মাঝাপাড়া কেন্দ্রীয় মসজিদ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আব্দুর রউফ বলেন, আমি জন্মের পর থেকে দেখে আসছি এই সমাজের কুরবানী সকলে একত্রিত হয়ে উক্ত কুরবানীর মাঠে অনুষ্ঠিত করে থাকে। চকবানারশী গ্রামের সুপরিচিত ব্যক্তি ডাক্তার মোঃ আনারুল ইসলাম মাস্টারের বাড়ি সংলগ্ন খোলা মাঠেই তাদের পারিবারিক বাগান নামক জায়গায় উক্ত কুরবানী দীর্ঘদিন থেকে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।
উক্ত এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা আরিফ মাসুম পাভেল জানান, সবার কুরবানীর পশু একই মাঠে কুরবানী করতে পারাটা অবশ্যই আনন্দের বিষয়। এটি এই এলাকার দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য। এটার সাক্ষী হতে পেরে আমরাও গর্বিত।
Leave a Reply