কিভাবে ব্যবহার করবেন মধু? – ছবি : সংগ্রহ
প্রাচীনকাল থেকেই মধু খাবার হিসেবে বেশ জনপ্রিয় এবং কখনো কখনো রোমান্টিকও বটে। প্রাকৃতজনেরা সকালের নাশতায় মধু খেয়ে তারপর কাজ করতে যেতেন। মৌমাছি ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে। এই মধুর রয়েছে হরেক রকমফের। বিভিন্ন গন্ধ ও রঙের মধু পাওয়া যায়। সাদা, কালো, হাল্কা বেগুনি অথবা সবুজ রঙের মধু রয়েছে।
কী কী কাজে লাগে
লোককাহিনীতে মধুকে জাদুকরী এক খাবার হিসেবে বলা হয়েছে। এটাকে সর্বরোগ নিবারক ওষুধও বলা হয়ে থাকে।
কণ্ঠ পরিষ্কার রাখতে, আলসার প্রতিরোধে, ঘুম আনতে, ডায়রিয়া সারাতে এমনি আরো অনেক কাজে মধু ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
গৃহিণীদের ভোজনশালায় প্রাকৃতিক মিষ্টি হিসেবে এটা ব্যবহার করা হয়। বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি খাবার, পায়েস, কেক তৈরিতে এটি ব্যবহার করা যায়। আবার সরাসরি ওষুধ হিসেবে ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে ব্যবহার করা হয়। ক্ষত সারাতে এটি ব্যবহৃত হয়।
পুষ্টিমান কেমন
এতে দু-ধরনের সুগার থাকে, গ্লুকোজ ও ফ্রকটোজ। অবশ্য সুক্রোজ ও মালটোজ খুব অল্প পরিমাণে থাকে। মধু হচ্ছে ফ্যাটবিহীন, কোলেস্টেরোল বিহীন একটি খাদ্য। সত্য কথা বলতে এতে কেমন প্রোটিন থাকে না। অন্যান্য নিউট্রিয়েন্টও খুব বেশি থাকে না। যেটা থাকে সেটা হলো শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট। শরীরের প্রতিদিনের চাহিদার শতকরা পাঁচ শতাংশ ভিটামিন ও মিনারেল এখান থেকে পাওয়া যায়।
প্রতি এক শ’ গ্রাম মধুতে কার্বোহাইড্রেট থাকে ৭৯.৫ গ্রাম (শতকরা), প্রোটিন থাকে ০.৩ গ্রাম, লৌহ থাকে ০.৭ মি: গ্রাম।
ওষুধে মধু ব্যবহার
সাউথ আফ্রিকার মেডিক্যাল গবেষকেরা দেখিয়েছেন, পোড়া ও ক্ষত পরিষ্কার করতে মধু ব্যবহার করা যায়। এতে সংক্রমণের আশঙ্কা কমে এমনকি অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন হয় না।
ব্রিটিশ গবেষকেরা টেস্ট টিউবের মধ্যে বেশ কিছু জীবাণু নিয়ে তাতে মধু রেখে দেখিয়েছেন, সব জীবাণুকে মধু নষ্ট করে দিতে পারে। সাউথ আফ্রিকার গবেষকেরা আরো দেখিয়েছেন, মধু ডায়রিয়ার জীবাণু নষ্ট করতে সাহায্য করে। ইউনিভার্সিটি অব নাটালের এক দল বিশেষজ্ঞ পেটের পীড়ায় আক্রান্ত দুই গ্রুপ শিশুর এক গ্রুপকে মধুমিশ্রিত তরল এবং অন্য গ্রুপকে চিনি ও তরল দিয়ে পরীক্ষা করে দেখেছেন যে, প্রথমোক্ত গ্রুপের সদস্যরা ব্যাকটেরিয়াজনিত (ভাইরাস নয়) ডায়রিয়ার হাত থেকে ৪০ শতাংশ দ্রুত হারে আরোগ্য হয়েছে।
যদিও কিভাবে মধু ব্যাকটেরিয়াকে পরস্ত করে সে সম্পর্কে পুরোপুরি জানা যায়নি। তবুও ধারণা করা হয়, মধুর সুগার অংশটুকু ব্যাকটেরিয়ার শরীর থেকে পানি শুষে নিয়ে তাকে মেরে ফেলে। কিন্তু সুগারহীন মধুও কম শক্তিশালী নয়, অনেকটা স্ট্রেপটোমাইসিন নামক ব্যাকটেরিয়াঘাতী অ্যান্টিবায়োটিকের মতো কাজ করে। তা ছাড়া এতে রেজিস্টেন্স গড়ে ওঠার ভয়ও থাকে না। গলা ব্যথা ও গলায় ক্ষত চিকিৎসায় মধু অত্যন্ত কার্যকর বলে প্রমাণিত। ক্ষয়ে যাওয়া গলার ভেতরের অংশে এটা একটি জেলির মতো আবরণ দিয়ে ঢেকে দেয়।
ওয়াল স্যালাইনে চিনি বা গুড়ের পরিবর্তে মধু ব্যবহার করা যায়। শিশুদের এভাবে মধুপান করানতে ডায়রিয়া প্রতিরোধ করা যায়। প্রতি লিটার পানিতে ৫৪০ মি: লিটার মধু ব্যবহার করা হয়।
খেয়াল রাখবেন
এক বছরের নিচের শিশুদের কাঁচা মধু খেতে দেবেন না। এতে বোটুলিজম নামক গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা হয়ে থাকে। বয়স্ক শিশুদের বেলায় এ ভয় নেই। কেননা তাদের অন্ত্র তখন যথেষ্ট মজবুত থাকে।
সুগারের মতো মধুও দাঁতের ক্ষতি করতে পারে। তাই সুগার বা অন্য কোনো মিষ্ট খেলে যেমন দাঁত পরিষ্কার করতে হয়, মধুর বেলাও তাই। ডায়াবেটিস রোগীদের মধু খাওয়া উচিত নয়।
Leave a Reply