বরেন্দ্র নিউজ আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
কান ঘেঁষে রক্ষা পেল দু’টি ঘুমন্ত উপগ্রহ। বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার ভোরে মহাকাশে ভয়ঙ্কর এক সংঘর্ষে হতে পারে বলে আশঙ্কা করছিলেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। নাসা ও লিওল্যাবস জানিয়েছিল, দু’টি স্যাটেলাইট ‘আইরাস’ ও ‘জিজিএসই-৪’ শেষ পর্যন্ত মাত্র ২৫ মিটার বা ৮২ ফুট দূরত্ব দিয়ে একে অপরকে অতিক্রম করে কোনও রকমে রক্ষা পেল। সংঘর্ষ হলে তার ফল সুদূরপ্রসারি হত বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
মহাকাশের বর্জ্যের উপর নিয়মিত নজরদারি চালায় স্পেস ডেব্রি ট্র্যাকিং সার্ভিস লিওল্যাব্স। তারা জানিয়েছিল, বৃহস্পতিবার ভোর ৫টা ৯ মিনিট নাগাদ মহাকাশে দু’টি উপগ্রহের মধ্যে ভয়ঙ্কর সংঘর্ষ হতে পারে। নাসার পক্ষ থেকেও এই খবর সমর্থন করা হয়েছিল। বুধবার লিওল্যাবস টুইট করে জানায়, ওই সময় ‘আইরাস’ ও ‘জিজিএসই-৪’ উপগ্রহ দু’টি নূন্যতম দূরত্বে চলে আসবে। তখন তাদের দূরত্ব হবে বড় জোর ১৫ থেকে ৩০ মিটার। অর্থাৎ, ৪৯ থেকে ৯৮ ফুটের মধ্যে। এই সময় উপগ্রহ দু’টি ভূপৃষ্ঠ থেকে ৯০০ কিলোমিটার বা ৫৬০ মাইল উপরে অবস্থান করবে। উৎক্ষেপণের পর সব সময় নজর রাখা হয়, কোনও উপগ্রহ বা কোনও মহাকাশবর্জ্য অথবা কোনও মহাজাগতিক বস্তু যেন মহাকাশযানের ৬০ কিলোমিটারে মধ্যে না এসে পড়ে। তা হলে তা মহাকাশযানের পক্ষে হয়ে উঠবে অত্যন্ত বিপজ্জনক।
ওয়াশিংটনে নাসার সদর দফতরে ‘পাথফাইন্ডার মিশন’-এর অন্যতম সদস্য জ্যোতির্বিজ্ঞানী অমিতাভ ঘোষ জানিয়েছেন, সংঘর্ষ হলে টুকরো টুকরো হয়ে যেত তুলনায় হাল্কা উপগ্রহটি। ফলে মহাকাশে কৃত্তিম উপগ্রহগুলোর কক্ষপথের একাংশে ‘স্পেস ডেব্রি’ বা মহাকাশের ধূলিকণার বিশাল ‘মেঘ’-এর জন্ম নিত। যে মেঘ কোনও মহাকাশযানের পক্ষে হয়ে উঠতে পারত অত্যন্ত বিপজ্জনক। ‘লিওল্যাব্স’-এর একটি সূত্র জানাচ্ছে, কাছাকাছি চলে আসা উপগ্রহ দু’টির মধ্যে ‘আইরাস’ উৎক্ষেপণ হয়েছিল আজ থেকে ৩৭ বছর আগে, ১৯৮৩ সালে। জ্বালানি ফুরিয়ে যাওয়ার ফলে উপগ্রহটি ঘুমিয়ে পড়েছিল (ডিকমিশন্ড) বেশ কয়েক বছর আগেই। ‘জিজিএসই-৪’, ৫৩ বছর আগে ১৯৬৩ সালে উৎক্ষেপণ হয়েছিল। এটি মূলত ছিল একটি সামরিক উপগ্রহ। তবে বিজ্ঞান গবেষণার জন্যও তাতে ছিল একটি ‘পে-লোড’। দু’টি উপগ্রহের ওজন ও গতিবেগ উৎক্ষেপণের সময় ‘আইরাস’-এর ওজন ছিল ১ হাজার ৮৩ কিলোগ্রাম, যা লম্বায় সাড়ে ১১ ফুটেরও বেশি। চওড়ায় সাড়ে ১০ ফুট। আর উচ্চতায় সাড়ে ৬ ফুটের কিছু বেশি। তুলনায় অনেকটাই হাল্কা ‘জিজিএসই-৪’। উৎক্ষেপণের সময় যার ওজন ছিল ৮৫ কিলোগ্রাম। দু’টি উপগ্রহ পৃথিবীর কক্ষপথে প্রদক্ষিণ করছে যথেষ্ট গতিবেগে। তাদের আপেক্ষিক গতিবেগ সেকেন্ডে সাড়ে ১৪ কিলোমিটারেরও বেশি।
সূত্র: আনন্দবাজার
Leave a Reply