চারঘাট প্রতিনিধিঃরাজশাহীর চারঘাটে শয়ন কক্ষে তালা দিয়ে গভীর রাতে তাঁতীদলের এক নেতার বাড়িতে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। বিষয়টি টের পেয়ে জানালা দিয়ে আশাপাশের লোকজনকে ডাকতে গেলে বাইরে থেকে পরিবারের সদস্যদের লাঠিপেটা করা হয় বলেও অভিযোগ করেছেন তাঁতীদলের ওই নেতা। পরে চিৎকার শুনে স্থানীয়রা এসে তাদের উদ্ধার করেন। তবে তার আগেই পাশের ঘরে থাকা দুটি ছাগলসহ সব মালপত্র পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
গতকাল শনিবার রাত ৩টার দিকে উপজেলা তাঁতীদলের সাধারণ সম্পাদক জাহিদুর রহমান গণির শলুয়া ইউনিয়নের মাড়িয়া গ্রামের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটেছে।
বিএনপির কর্মসূচিতে সক্রিয় থাকায় হত্যার উদ্দেশে এ ঘটনা ঘটনানো হয়েছে বলে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেছেন। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে আওয়ামী লীগ। পুলিশ বলছে, তদন্ত করে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গণির স্ত্রী সেলিনা বেগম বলেন, শনিবার বিকেলে একমাত্র ছেলে ও স্থানীয় লোকজন নিয়ে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে গিয়েছিলেন আমার স্বামী। সেখান থেকে ফিরে রাতের খাবার খেয়ে শুয়ে পড়েন। গভীর রাতে হঠাৎ পার্শ্ববর্তী ঘর থেকে ছাগলের চিৎকার শুনে ঘুম ভেঙে যায়। এ সময় আলো দেখে এগিয়ে যাওয়া চেষ্টা করি। কিন্তু ঘরের দরজা খুলতে গিয়ে দেখি- বাইরে থেকে তালা লাগানো।
তিনি আরও বলেন, ঘর থেকে বের হতে না পেরে জানালা দিয়ে আশাপাশের লোকজন ডাকাডাকি করতে গেলে বাইরে থেকে আমাদের লাঠি দিয়ে আঘাত করা হয়। এর কিছুক্ষণ পর স্থানীয় লোকজন এসে ঘরের তালা ভেঙে আমাদের উদ্ধার করেন। ততক্ষণে ঘরের সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
স্থানীয়রা জানান, গভীর রাতে চিৎকার শুনে তারা ঘর থেকে বেরিয়ে দেখেন গণির বাড়িতে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছিল। এগিয়ে গিয়ে গণি ও তার স্ত্রী-সন্তানকে ঘরে তালাবদ্ধ অবস্থায় পান। এ সময় দরজা ভেঙে তাদের উদ্ধার এবং আগুন নেভানো হয়। তবে এর আগে একটি ঘরের সব পুড়ে যায়। গণি বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ায় এলাকার কয়েকজন তার ওপর ক্ষিপ্ত ছিল বলেও জানান স্থানীয়রা।
তাঁতীদল নেতা গণি বলেন, আমি বিএনপির রাজনীতি করি। দলের কর্মসূচিতে নিয়মিত অংশ নেই। এজন্য বিভিন্ন সময় ক্ষমতাসীন দলের লোকজন আমাকে নানাভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন ও হুমকিধমকি দিতো। এ ছাড়া আমার কোনো শত্রু নেই। রাজনৈতিক কারণেই আমাদের হত্যার উদ্দেশে কেউ ঘরে আগুন দিয়েছে।
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ বলেন, গণি বিএনপির একনিষ্ঠ কর্মী। উপজেলা তাঁতীদলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তিনি দলের সকল কর্মসূচিতে স্থানীয় সাধারণ জনগণকে নিয়ে আমার সঙ্গে অংশ নেন। এ জন্য তাকে ভয় দেখিয়ে দমিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে পরিকল্পিতভাবে ক্ষমতাসীন দলের লোকজন বাড়িতে আগুন দিয়েছে।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন বলেন, চারঘাট তাঁতীদলের সাধারণ সম্পাদকের বাড়িতে অগ্নিকাণ্ডের বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে ওই এলাকাটি বিএনপি অধ্যুষিত। সেখানে আমাদের কেউ এ ঘটনায় জড়িত থাকার প্রশ্নই আসে না।
চারঘাট মডেল থানার ওসি মাহবুবুল আলম বলেন, ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন আছে। অগ্নিকাণ্ডে তাঁতীদল নেতা গণির দু’টি ছাগলসহ বিভিন্ন মালপত্র পুড়ে বেশ ক্ষতি হয়েছে। এ ঘটনায় তদন্ত চলছে। জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Leave a Reply