শুরু হয়েছে সিয়াম সাধনার মাস রমজানুল মোবারক। রজবের চাঁদ ওঠার সাথে সাথে শুরু হয়ে যায় রমজানের দিনক্ষণ গণনা। আল্লাহর রাসূল সা: রজবের চাঁদ দেখে দোয়া করতেন, ‘হে আল্লাহ! আমাদের জন্য রজব ও শাবান মাসকে বরকতময় করে দাও এবং রমজান পর্যন্ত পৌঁছে দাও।’ শাবান মাস এলে নবীজীর আমলে বিশেষ পরিবর্তন আসত। রমজান যতই ঘনিয়ে আসত তার আমলের মাত্রা ততই বেড়ে যেত। সাহাবায়ে কেরামকে রমজানের প্রস্তুতি গ্রহণের তাগিদ দিতেন।
রমজান মুমিনের জীবন সাজানোর শ্রেষ্ঠ সময়। এই মাসকে কাজে লাগাতে হলে আগে থেকেই প্রস্তুতি গ্রহণ জরুরি। পূর্বপ্রস্তুতি থাকলে রমজানের ফয়েজ ও বরকত ভালোভাবে অর্জন করা সম্ভব হয়। এ জন্য প্রত্যেক মুমিনের উচিত রমজানকে কাজে লাগানোর জন্য আগে থেকে পরিকল্পনা গ্রহণ করা।
প্রথমে প্রয়োজন সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দু আত্মাকে নিষ্কলুষ করা। কারণ রমজানের অন্যতম লক্ষ্য আত্মিক উৎকর্ষ। দীর্ঘ ১১ মাসের পাপাচারের কারণে অন্তরে যে কালিমা লেপন হয়েছে তা দূর করতে হবে। কুপ্রবৃত্তির লাগাম টেনে ধরতে হবে। সামনের দিনগুলোতে উৎপাত যেন নিয়ন্ত্রণে থাকে সে ব্যবস্থা নিতে হবে। সব ধরনের পাপকাজ থেকে বেঁচে থাকার দৃঢ় মানসিকতা আগে থেকেই তৈরি না করলে রমজান এসে গেলে তা আর সম্ভব হয় না। অনেকেই মনে করেন, এখন যত ইচ্ছা পাপ করতে থাকি রমজান এলে সব ঠিক করে নেবো। কিন্তু তা ঠিক নয়। গোনাহ ত্যাগ করার জন্য অনুশীলন প্রয়োজন হয়। পূর্বপ্রস্তুতি ও অনুশীলন ছাড়া কোনো পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয়ে সফলতার আশা করা যায় না। রমজানের আগে কঠোর অনুশীলন শুরু করলে রমজানের যথার্থ দাবি বাস্তবায়ন সম্ভব হয়। পাপাচার ত্যাগ করার মনোবৃত্তিই পাপকার্য থেকে বেঁচে থাকার জন্য সবচেয়ে বড় সহায়ক। গোনাহও করবে, আবার রোজাও রাখবেÑ তা হতে পারে না। রাসূল সা: ইরশাদ করেনÑ ‘যে ব্যক্তি রোজা রেখে মিথ্যা কথা, অগোচরে নিন্দা তথা পাপকার্য থেকে বিরত রইল না, তার রোজা অর্থহীন উপবাস ছাড়া আর কিছুই নয়’ (বুখারি)।
রমজানে সবচেয়ে বেশি দৃষ্টি রাখতে হবে হালাল রিজিকের প্রতি। আর এর জন্য প্রয়োজন হালাল উপার্জন। অন্তত একটি মাসে হালাল রিজিকের প্রতি যতœবান হওয়া উচিত। খাবারের যে লোকমাটাই মুখে যাবে, তা হালাল হওয়া চাই। এমন যেন না হয় যে, রোজা তো রেখেছি আল্লাহর জন্য, কিন্তু ইফতার করছি হারাম বস্তু দিয়ে। অনেক লোক আছেন যাদের আয়ের উৎস মূলত হারাম নয়, কিন্তু যতœবান না হওয়ার কারণে হারামের সংমিশ্রণ হয়ে যায়। তাদেরকে সতর্ক হতে হবে। আবার অনেক লোক আছেন যাদের আয়ের উৎস পুরোটাই হারাম। তাদের জন্য হারাম থেকে বেঁচে থাকাটা খুবই কঠিন। তবে সম্ভব হলে তারা এক মাসের জন্য ছুটি নিয়ে নেবেন এবং অন্য কোনো হালাল পেশা গ্রহণ করবেন। তা না হলে অন্তত কারো কাছ থেকে ঋণ নিয়ে হলেও নিজের এবং পরিবারের লোকদের জন্য রমজান মাসে হালাল রিজিকের ব্যবস্থা করা উচিত।
মানুষের জীবনে ব্যস্ততার কোনো অন্ত নেই। মৃত্যুর পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত তাদের কোনো না কোনো ব্যস্ততা থাকেই। এই ব্যস্ততার কারণে অনেকেই রমজানের পূর্ণাঙ্গ হক আদায় করতে পারেন না। তাদের জন্য উচিত হলো রমজানে সব ঝামেলামুক্ত হওয়া। অন্তত রমজানের এক মাস যেন কাজের চাপ কিছুটা কম থাকে সে ব্যবস্থা করা। মানুষের সাধ্যের বাইরে কিছু নয়। ইচ্ছা করলে সবকিছু বাস্তবায়ন করাই তাদের পক্ষে সম্ভব।
কেউ কেউ রমজানে অধিক খরচের দোহাই দিয়ে উপার্জনের উৎস বাড়িয়ে দেন। সবকিছু বাদ দিয়ে টাকা রোজগারের ধান্দায় লেগে যান। এটা খুবই দুর্ভাগ্যের বিষয়। রমজানের প্রধান শিক্ষা সংযম । সবকিছুতেই এই শিক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে না পারলে রমজান আমাদের জীবনের জন্য কোনো সুফল বয়ে আনবে না।
আমরা কেউই চাই না দুর্ভাগা হিসেবে নিজেকে দেখতে। তাই আসুন, রমজানকে সফল জীবন গঠনের সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করে এটিকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করি।
লেখক : সভাপতি, বাংলাদেশ ইসলামী লেখক ফোরাম
Leave a Reply