দেশের অন্যতম নাট্যকার, নির্দেশক ও অভিনেতা অধ্যাপক মমতাজউদদীন আহমদ আর নেই। রবিবার (২ জুন) বেলা ৩টা ৪৮ মিনিটের দিকে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্নালিল্লাহি…রাজিউন)।
এই কিংবদন্তি নাট্যজনের ভাগ্নে শাহরিয়ার মাহমুদ বিষয়টি বাংলা ট্রিবিউনকে নিশ্চিত করেন।
গত ১৬ দিন ধরে মমতাজউদদীন আহমদ রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, মমতাজউদদীন আহমদের প্রথম
জানাজা অনুষ্ঠিত হবে রবিবার (২ জুন) মাগরিবের নামাজের পর গুলশান আজাদ
মসজিদে। এরপর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে মিরপুরের বাসায়। ৩ জুন সকালে দ্বিতীয়
জানাজা হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদে। এরপর দাফনের জন্য নিয়ে যাওয়া হবে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট গ্রামে।
নাট্যজনের ভাগ্নে শাহরিয়ার মাহমুদ বলেন, ‘মামার ইচ্ছাতেই তার দাফন হবে শৈশবগ্রাম ভোলাহাটে।’
এদিকে মমতাজউদদীন আহমদের ছেলে তিতাস মাহমুদ যুক্তরাষ্ট্র থেকে আগেই দেশে এসেছেন বাবার অসুস্থতার খবর পেয়ে।
মমতাজউদদীন
আহমদের ঘনিষ্ঠজন অধ্যাপক রতন সিদ্দিকী জানান, গত ১৬ মে থেকে হাসপাতালে
চিকিৎসাধীন ছিলেন এই নাট্যজন। দুদিন আগে শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে
নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেওয়া হয়েছে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে
শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। তার শরীরও অক্সিজেন পাচ্ছিলো না। শরীরের ভেতর কার্বন
ডাই-অক্সাইড জমা হয়ে যাচ্ছিলো। মস্তিষ্কেও পানি জমেছে।
মমতাজউদদীন আহমদ অবিভক্ত বাংলার মালদহ জেলায় জন্মগ্রহণ করলেও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ভোলাহাট উপজেলায় তার শৈশব অতিবাহিত করেন।
১৯৩৫
সালের ১৮ জানুয়ারি ব্রিটিশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের অন্তর্গত মালদহ
জেলার হাবিবপুর থানার আইহো গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এই নাট্যজন। দেশ বিভাগের
পর তার পরিবার তদানীন্তন পূর্ববঙ্গে চলে আসে। তার পিতার নাম কলিমুদ্দিন
আহমদ ও মাতার নাম সখিনা বেগম।
মমতাজউদদীন মালদহ আইহো জুনিয়র স্কুলে
চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করে ১৯৫১ সালে ভোলাহাট রামেশ্বর পাইলট মডেল
ইনস্টিটিউশন থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরবর্তীতে রাজশাহী
কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় বি.এ
(অনার্স) ও এম.এ ডিগ্রী লাভ করেন।
কর্মজীবন
মমতাজউদদীন আহমদ ৩২ বছরের
বেশি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি কলেজে বাংলা ভাষা, সংস্কৃতি ও ইউরোপীয়
নাট্যকলায় শিক্ষাদান করেছেন। ১৯৬৪ সালে তিনি চট্টগ্রাম কলেজের বাংলা
বিভাগের শিক্ষক হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে শিক্ষকতা শুরু করেন। তিনি জগন্নাথ
বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের
নাট্যকলা ও সংগীত বিভাগের খণ্ডকালীন অধ্যাপক হিসেবে শিক্ষকতা করেছেন। তিনি
১৯৭৬-৭৮ সালে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচি প্রণয়নে একজন বিশেষজ্ঞ হিসেবে
দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি ভারতের দিল্লী, জয়পুর এবং কলকাতায়
নাট্যদলের নেতা হিসাবে ভ্রমণ ও নাট্য মঞ্চায়ন করেন। তার লেখা নাটক ‘কি চাহ
শঙ্খ চিল’ এবং ‘রাজা অনুস্বরের পালা’ রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের
পাঠ্যসূচিতে তালিকাভুক্ত হয়েছে। এছাড়াও তার বেশ কিছু নাটক, বাংলাদেশের
প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
মমতাজউদদীন
শিক্ষক ও লেখক হিসেবে পরিচিতি পেলেও থিয়েটারের মাধ্যমে তার কর্মজীবনকে
অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। তিনি সংস্কৃতি অঙ্গনের একজন কর্মী হিসেবে
সক্রিয়ভাবে বাংলা ভাষা আন্দোলন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সক্রিয়ভাবে
অংশ নেন। এছাড়াও স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার
আন্দোলনেও তিনি সক্রিয় ছিলেন।
মমতাজউদদীন ১৯৭৭-৮০ সালে বাংলাদেশ
শিল্পকলা একাডেমিতে গবেষণা ও প্রকাশনা বিভাগের পরিচালক ছিলেন। ২০১১ সাল
থেকে তিনি জাতিসংঘের বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী
হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন
Leave a Reply