শিরোনাম
রাণীনগরে আলোচিত মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার-বরেন্দ্র নিউজ ভোলাহাটে নানা আয়োজনে বাংলা নববর্ষ পালিত-বরেন্দ্র নিউজ ভোলাহাটে মহানন্দা নদীতে গোসল করতে গিয়ে ডুবে ২ শিশুর মৃত্যু-বরেন্দ্র নিউজ ভোলাহাটে ৩টি মোটরসাইকেলসহ অন্তঃজেলা চোর চক্রের ৪জন গ্রেফতার-বরেন্দ্র নিউজ ঢাকাস্থ ভোলাহাট উপজেলা সমিতির ইফতার ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত -বরেন্দ্র নিউজ ভোলাহাটে বিশিষ্টজনদের সম্মানে জামায়াতরে ইফতার-বরেন্দ্র নিউজ ভোলাহাটে ১০ বোতল ফেনসিডিলসহ ২ জন গ্রেফতার-বরেন্দ্র নিউজ ভোলাহাটে সাংবাদিকদের সাথে ইফতার করলেন উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী খালেক-বরেন্দ্র নিউজ ভোলাহাটে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যানের সাংবাদিকদের সাথে ইফতার-বরেন্দ্র নিউজ কুড়িগ্রামে স্বাধীনতার মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকী উদযাপন-বরেন্দ্র নিউজ ভোলাহাট উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান হতে চান হুসেন আলী-বরেন্দ্র নিউজ
রিকশা চালিয়ে পড়াশোনা করা কুড়িগ্রামের ভোগডাঙ্গার সেই শিক্ষার্থী এখন প্রভাষক-বরেন্দ্র নিউজ

রিকশা চালিয়ে পড়াশোনা করা কুড়িগ্রামের ভোগডাঙ্গার সেই শিক্ষার্থী এখন প্রভাষক-বরেন্দ্র নিউজ

সাইফুর রহমান শামীম,,কুড়িগ্রাম ।। রিকশা চালিয়ে নিজের খরচ জুগিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন স্নাতকে। প্রথম বর্ষ থেকে তৃতীয় বর্ষ পর্যন্ত আর্থিক অনটনে পড়ে বারবার রিকশা চালিয়ে পড়াশোনার খরচ জুগিয়েছেন। দরিদ্রতার কারণে দফায় দফায় পড়াশোনা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হলেও দৃঢ় মনোবল আর পরিশ্রম করে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন। আর পড়াশোনা শেষে সংগ্রামী সেই যুবক স্থানীয় একটি মাদ্রাসার প্রভাষক পদে নিয়োগ পেয়েছেন। রিকশাচালক থেকে তিনি এখন ইংরেজি বিষয়ের প্রভাষক।

সংগ্রামী এই যুবকের নাম মো. মমিনুর রহমান। তিনি কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের মধ্যকুমরপুর গ্রামের মো. নুর ইসলাম ও ময়না বেগম দম্পতির ছেলে। ১৬তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার মাধ্যমে তিনি এ বছর কুড়িগ্রাম আলিয়া কামিল মাদ্রাসায় ইংরেজি বিষয়ের প্রভাষক পদে নিয়োগের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন।

মমিনুর জানান, হতদরিদ্র দিনমজুর বাবা পড়াশোনার খরচ দিতে হিমশিম খেতেন। শিক্ষক ও সহপাঠীদের সহায়তায় এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ভর্তি হন উচ্চ মাধ্যমিকে। বারবার থমকে গেছে লেখাপড়ার ভবিষ্যৎ। মা বিভিন্নভাবে টাকা জোগাড় করে দিতেন। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের ইংরেজি বিভাগে স্নাতক পড়ার সুযোগ পান। কিন্তু অর্থাভাবে ভর্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। কিছুতেই টাকা জোগাড় হচ্ছিল না। এ অবস্থায় নিরুপায় হয়ে ঢাকার কেরানীগঞ্জে রিকশা চালাতে যান তিনি। উদ্দেশ্য, টাকা উপার্জন করে স্নাতকে ভর্তি হওয়া।

মমিনুর বলেন, ‘আমার বাবা একজন দিনমজুর। তার পক্ষে আমার পড়াশোনার খরচ চালানো সম্ভব হচ্ছিল না। কিন্তু আমি পড়াশোনা করে নিজের ও পরিবারের জন্য কিছু একটা করার দৃঢ় ইচ্ছা ছিল। ঢাকার কেরানীগঞ্জে গিয়ে একটি গ্যারেজ থেকে রিকশা নিয়ে কয়েকদিন রিকশা চালাই। ভর্তির প্রয়োজনীয় টাকা ছাড়াও কিছু উদ্বৃত্ত টাকা আয় করে কুড়িগ্রামে ফিরে সরকারি কলেজে ইংরেজি বিষয়ে অনার্সে ভর্তি হই। এরপর যখনই টাকার সংকটে পড়েছি তখনই কেরানীগঞ্জে গিয়ে রিকশা চালিয়ে উপার্জন করেছি। অনার্স তৃতীয় বর্ষ পর্যন্ত আমি বাড়িতে ঈদ করিনি। প্রতি ঈদে ঢাকায় গিয়ে রিকশা চালিয়ে টাকা জোগাড় করেছি। এভাবে তৃতীয় বর্ষ শেষ করি। পরে চতুর্থ বর্ষে উঠে টিউশনি করে বাকি পড়াশোনা শেষ করি। এখনও টিউশনি করেই নিজের ও পরিবারের খরচ জোগাচ্ছি। আমার বাবাকে এখন আর কাজ করতে দেই না। বর্তমানে টিউশনির আয় দিয়ে পরিবার ও ভাইবোনদের পড়াশোনার খরচ বহন করেছি।’

প্রভাষক হিসেবে নিয়োগের সুপারিশ পাওয়া এই যুবক বলেন, ‘১৬তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ইংরেজি বিষয়ে সারা দেশে তৃতীয় হই। গত ১০ মার্চ এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান কুড়িগ্রাম আলিয়া কামিল মাদ্রাসায় ইংরেজি বিষয়ের প্রভাষক পদে নিয়োগের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছি। বাকি প্রক্রিয়া শেষে সেখানেই যোগদান করবো। আমার এই ক্ষুদ্র সফলতায় যারা আমার পাশে ছিলেন, বিভিন্নভাবে আমাকে সহায়তা করেছেন সবার প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা। বিশেষ করে বিভিন্ন সময় পরামর্শ ও সহায়তা করার জন্য আমার বিভাগের সাবেক শিক্ষক মুকুল স্যারের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।’

মমিনুরের সফলতায় সাধুবাদ জানিয়েছেন তার উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণির বন্ধু ইদ্রিস। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর করা ইদ্রিস বলেন, ‘মমিনুর যখন ঢাকায় রিকশা চালাতো তখন ওর সঙ্গে কয়েকবার দেখা হয়েছিল। অনেক কষ্ট করে সে পড়াশোনা করেছে। তার এই সফলতায় আমি অত্যন্ত খুশি। তাকে অভিনন্দন।’

মমিনুরের চাকরি হওয়ায় খুশি তার বাবা নুর ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমি অনেক খুশি। আল্লাহ রহমত করছে। টাকার অভাবে ছেলে নিজে কাজ করে পড়াশোনা করছে। এখন তার আয় দিয়ে আমার পরিবার চলছে। এর মধ্যে তার চাকরির খবরে আমি ও তার মা অনেক খুশি।’

মমিনুরের সংগ্রাম ও সফলতা নিয়ে তার বিভাগের সাবেক শিক্ষক ও বর্তমানে উলিপুর সরকারি কলেজের উপাধ্যক্ষ আবু জোবায়ের আল মকুল বলেন, ‘শিক্ষার্থী থাকা অবস্থায় মমিনুর মাঝে মাঝে কুড়িগ্রামের বাইরে কাজ করতে যেত। পরিশ্রম ও একাগ্রতার ফসল হিসেবে এনটিআরসিএর মাধ্যমে সে বিনা টাকায় চাকরি পেয়েছে। দরিদ্রতা যে সফলতায় বাধা হতে পারে না সেটা নিজের জীবনের উদাহরণ দিয়ে শিক্ষার্থীদের সামনে তুলে ধরবে। পাশাপাশি সে একজন আদর্শ শিক্ষক হবে এটাই আমার কামনা। তার জন্য শুভ কামনা।’

কুড়িগ্রাম আলিয়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ নূর বখ্ত বলেন, ‘মমিনুরের মতো একজন সংগ্রামী ও পরিশ্রমী শিক্ষক পেয়ে আমরা আনন্দিত। তিনি জীবনে অনেক স্ট্রাগল করেছেন বলে তার শিক্ষকদের কাছে জেনেছি। প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে তার জন্য সব ধরনের সহযোগিতা থাকবে।’

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




<figure class=”wp-block-image size-large”><img src=”http://borendronews.com/wp-content/uploads/2020/07/83801531_943884642673476_894154174608965632_n-1-1024×512.jpg” alt=”” class=”wp-image-17497″/></figure>

© All rights reserved © 2019 borendronews.com
Design BY LATEST IT