শিরোনাম
রাণীনগরে আলোচিত মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার-বরেন্দ্র নিউজ ভোলাহাটে বিজয় দিবসে জামায়াতের র‍্যালী-বরেন্দ্র নিউজ গোমস্তাপুরে শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত-বরেন্দ্র নিউজ ভোলাহাটে গোহালবাড়ী ইউনিয়ন বিএনপির ত্রি-বার্ষিক কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত-বরেন্দ্র নিউজ ভোলাহাটে বিএনপির ৩১ দফা বাস্তবায়ন ও রাষ্ট্র সংস্কারের দাবিতে আলোচনা সভা-বরেন্দ্র নিউজ ভোলাহাট উপজেলা বিএনপি’র ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত-বরেন্দ্র নিউজ গোদাগাড়ীতে ৫০ গ্রাম হিরোইনসহ দুই মাদক ব্যবসায়ী আটক-বরেন্দ্র নিউজ গোমস্তাপুর ইউনিয়ন বিএনপির ত্রি-বার্ষিক কাউন্সিল অনুষ্ঠিত-বরেন্দ্র নিউজ চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা জামায়াতের উদ্যোগে দিনব্যাপী শিক্ষা শিবির অনুষ্ঠিত-বরেন্দ্র নিউজ ভোলাহাটে শিবিরের কুইজ প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণ-বরেন্দ্র নিউজ ভোলাহাটে ইউনিয়ন লিগ্যাল এইড কমিটির ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠিত-বরেন্দ্র নিউজ
দুশ্চিন্তার ভাঁজ মধ্যবিত্তের কপালে বাজেট ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব

দুশ্চিন্তার ভাঁজ মধ্যবিত্তের কপালে বাজেট ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব

বেসরকারি একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী শরিফুল ইসলাম। সেখানে তার মাসিক বেতন সাকুল্যে ১৮ হাজার টাকা। এক ছেলেসহ স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন রাজধানীর বাসাবো এলাকায়। সেখানে মাস গেলে গুনতে হয় ৮ হাজার টাকা বাসাভাড়া। বাকি ১০ হাজার টাকা দিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় তার। এর মধ্যে গ্রামে অসুস্থ মা-বাবার ওষুধের টাকাও পাঠাতে হয় মাঝে মধ্যে। 
কথা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ঘুম থেকে উঠেই শুনি বাড়িওয়ালা গতরাতে নোটিশ দিয়ে গেছে আগামী মাস থেকে বাড়ি ভাড়া বাড়ানো হবে। আয়-রোজগার না বাড়লেও প্রায় সব জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। যে হারে খরচ বাড়ছে বর্তমানে জীবনযাপন দুর্বিষহ হয়ে উঠছে। স্ত্রী-সন্তানকে সাথে নিয়ে আর ঢাকায় বসবাস করা সম্ভব হবে না। তাই তাদের গ্রামে পাঠিয়ে দেয়ার কথা ভাবছি। 
গতকাল সোমবার থেকে শুরু হয়েছে নতুন অর্থবছর। আর সেই সাথে নিম্ন মধ্যবিত্তের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ। কেমন করে আর কিভাবে চালাবেন সংসার। নিত্যপণ্য থেকে শুরু করে কমবেশি পণ্যের দাম বেড়েই চলছে। অতি প্রয়োজনীয় তেল চিনির দাম বাড়ছে। অন্য দিকে গ্যাসের দাম বাড়াতে রাজধানীর লাখো লাখো মানুষের খরচের তালিকা ক্রমেই দীর্ঘায়িত হচ্ছে। এ ছাড়া নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের কারণে মধ্যবিত্ত আর নিম্ন মধ্যবিত্তের জন্য দুশ্চিন্তার বছর হিসেবে রূপ নিচ্ছে। জানা গেছে, গত রোববার জাতীয় সংসদে পাস হয় ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট। যেটি গতকাল সোমবার থেকেই কার্যকর শুরু হয়েছে। গত কয়েক বছর বাস্তবায়ন করতে না পারা ভ্যাট (মূল্য সংযোজন কর) আইন এবারই বাস্তবায়ন হয়েছে। এ ভ্যাট আইনে বেশ কিছু নিত্যপণ্যে ভ্যাট ছাড় দেয়া হয়েছে। তার পরও এ আইন বাস্তবায়নে অনেক পণ্যে নতুন করে ভ্যাট আরোপ হবে, যা সাধারণ জনগণকেই দিতে হবে। 
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বলেন, ভ্যাট আইন বাস্তবায়নে সবচেয়ে বেশি কষ্ট করতে হবে নিম্ন আয়ের মানুষদের। যাদের ফিক্সড ইনকাম। এ ছাড়া আমাদের মতো পেনশনভোগীদেরও কষ্ট করে চলতে হবে। আর গ্যাসের দাম বাড়ার কারণে বাজারে এর প্রভাব পড়বে। সব মিলিয়ে কষ্টের মাত্রা বাড়বে নিম্ন আয়ের মানুষগুলোর। 
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে, এবারে বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা; যা কোনো না কোনোভাবেই জনগণকেই দিতে হবে। আর শুধু ভ্যালু এডেড ট্যাক্স (ভ্যাট) আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে এক লাখ ১৭ হাজার কোটি টাকা; যা ভোক্তাদের দিতে হবে। একজন ভোক্তা যা কিনবে তাতেই ভ্যাট দিতে হবে। আর ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের কারণে এর প্রভাব পড়বে বাজারে। কমবেশি প্রতিটি পণ্যের দাম বাড়বে।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ভ্যাট আইন বাস্তবায়নে কম বেশি প্রায় সব পণ্যের দাম বাড়বে। আর ব্যবসায়ীরা ভ্যাট দিলেও এই টাকা তো সাধারণ মানুষের কাছ থেকেই নেবে। তবে ভ্যাট আইনে বেশ কিছু অস্পষ্টতা রয়েছে। এ ছাড়া কিভাবে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ভ্যাট আদায় করা হবে তার কোনো গাইড লাইন নেই, যে কারণে হয়রানির মুখে পড়তে পারেন ব্যবসায়ীরা। সবচেয়ে বড় কথা আইনের বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সব বিষয় স্পষ্ট না করাতে ভ্যাট আদায়ে সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে বলে জানান এই অর্থনীতিবিদ। 
অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও ভোক্তারা বলছেন, ভ্যাটের সাথে নতুন করে যোগ হয়েছে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি। যেটিও গতকাল থেকেই কার্যকর হয়েছে। একটি গ্যাসের চুলার জন্য ৭৫০ থেকে বাড়িয়ে ৯২৫ টাকা এবং দুই চুলার জন্য ৮০০ থেকে বাড়িয়ে ৯৭৫ টাকা করা হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত গ্যাসের মূল্যও বেড়েছে। সরকারের এ সিদ্ধান্তে সব শ্রেণীর মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এতে সব নিত্যপণ্যের দাম, বিদ্যুৎ, পরিবহন, বাসা ভাড়া, কৃষিপণ্য ও সেবার খরচ বাড়বে। সাধারণ মানুষের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে। জীবনযাত্রার ব্যয় মেটাতে নাভিশ্বাস উঠবে নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের। অর্থাৎ দেশের প্রতিটি মানুষের জীবনযাপনে খরচের বাড়তি চাপ দিয়েই শুরু হলো নতুন অর্থবছর। 
মূল্যবৃদ্ধির যুক্তি সঠিক নয় : বাংলাদেশে যেই যুক্তিতে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে, তা কতটা সঠিক সে বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষক ও অর্থনীতিবিদ নাজনীন আহমেদ। তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘কোনো দ্রব্যের উৎপাদন খরচ কিংবা বিতরণ খরচের ক্ষেত্রে যুক্তিযুক্ত কোনো প্রয়োজন হলে দ্রব্যের দাম বাড়াটা স্বাভাবিক।’ 
‘দাম বাড়ানোর যুক্তি হিসেবে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন বলছে, আন্তর্জাতিক বাজারে এলএনজির দাম বেড়ে যাওয়ায় এলএনজি আমদানি খরচ বেড়ে গেছে এবং তার ফলে গ্রাহক পর্যায়েও দাম বাড়াতে হচ্ছে।’ কিন্তু বাংলাদেশের গ্যাস উৎপাদনকারী এবং বিতরণকারী সংস্থাগুলো দুর্নীতিমুক্তভাবে স্বচ্ছতার সাথে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করলে দেশে গ্যাস আমদানির চাহিদা অনেক কমে যেত বলে মন্তব্য করেন তিনি। ‘গ্যাস উৎপাদনকারী এবং বিশেষ করে বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্নীতিমুক্ত হলে, নিজেদের সিস্টেম লস কমালে এবং কার্যকরভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করলে বিপুল পরিমাণ এলএনজি আমদানি করা প্রয়োজন হয় না।’ 
নাজনীন আহমেদ মনে করেন, গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্তে সাধারণ মানুষ এতটা অসন্তুষ্ট হতো না যদি উৎপাদন ও বিতরণে সিস্টেম লস বা দুর্নীতির বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা বা জবাবদিহিতার প্রয়াস থাকত কর্তৃপক্ষের। গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বিভিন্ন ক্ষেত্রে গ্রাহকেরা সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। 
আবাসিক খাত : গৃহস্থালির ব্যবহারে এক চুলা ও দুই চুলা উভয় ক্ষেত্রেই মাসিক খরচ বেড়েছে ১৭৫ টাকা করে। এর ফলে উচ্চ আয়ের মানুষের তুলনায় নি¤œ ও মধ্যম আয়ের মানুষের দৈনন্দিন খরচের ওপর বেশি বোঝা তৈরি করবে। 
পরিবহন খাত : সিএনজির দাম ৭.৫ শতাংশ বাড়ায় সরাসরি প্রভাবিত হবে পরিবহন খাত।
সিএনজিচালিত অটোরিকশার মতো গণপরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধির পাশাপাশি গ্যাসচালিত সব গাড়ির ক্ষেত্রে যাতায়াত খরচ বৃদ্ধি পাবে। 
সার উৎপাদন : সার উৎপাদনের ক্ষেত্রে গ্যাসের মূল্য প্রতি ঘনমিটারে ২.৭১ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪.৪৫ টাকা করা হয়েছে, দাম বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ৬৫ ভাগ। 
নাজনীন আহমেদ বলেন, ‘সরকার হয়তো কৃষককে অতিরিক্ত দামে সার কিনতে বাধ্য করবে না, কিন্তু তাহলে সারের জন্য ভর্তুকির পরিমাণ বেড়ে যাবে।’ সে ক্ষেত্রে গ্যাসের দাম বাড়িয়ে রাজস্ব ঘাটতি পূরণ করার যে কৌশল সরকার অবলম্বন করতে চাচ্ছে, আরেক খাতে অতিরিক্ত ভর্তুকি দিয়ে সেই কৌশলও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। 
বিদ্যুৎ উৎপাদন : বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ৩.১৬ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪.৪৫ টাকা করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে দাম বেড়েছে প্রায় ৪১ শতাংশ। 
স্বাভাবিকভাবে চিন্তা করলে, এর ফলে বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ বাড়বে এবং গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দামও বাড়বে। তবে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয় যে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি হবে না। 
শিল্প কারখানার পরিচালনা ব্যয় : শিল্পখাতে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম প্রায় ৩৮ শতাংশ বাড়িয়ে ৭.৭৬ টাকা থেকে ১০.৭০ করা হয়েছে। এর ফলে শিল্প কারখানার পরিচালনা ব্যয় বাড়ায় সেসব কারখানার পণ্যের দাম বৃদ্ধি হতে পারে এবং প্রভাবিত করতে পারে গ্রাহকদের। 
নাজনীন আহমেদ বলেন, ‘গ্যাসের দাম বাড়ার কারণে সাধারণ মানুষের গৃহস্থালির খরচ বা যাতায়াত খরচ তো বাড়বেই, পাশাপাশি শিল্প কারখানায় পণ্য উৎপাদন ব্যয় বাড়ায় সেসব পণ্যের দাম বাড়ার ফলেও চাপ পড়তে পারে তাদের ওপর। ’

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




<figure class=”wp-block-image size-large”><img src=”http://borendronews.com/wp-content/uploads/2020/07/83801531_943884642673476_894154174608965632_n-1-1024×512.jpg” alt=”” class=”wp-image-17497″/></figure>

© All rights reserved © 2019 borendronews.com
Design BY LATEST IT