বরেন্দ্র নিউজ ডেস্ক :
সরকারের ব্যবস্থাপনায় ব্যাংক থেকে ৫ শতাংশ সরল সুদে (সুদের ওপর সুদ নয়) সর্বোচ্চ ৭৫ লাখ টাকা পর্যন্ত গৃহনির্মাণ ঋণ পাচ্ছেন সরকারি কর্মচারীরা। তবে প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীরা এ ঋণের আওতায় ছিলেন না। বৃহস্পতিবার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের শিক্ষক-কর্মচারীদের এ ঋণের আওতায় আনার চূড়ান্ত পরিপত্রে স্বাক্ষর করেছেন অর্থসচিব।
তবে এটি এখনও প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করা হয়নি। শিগগিরই এটি প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করা হবে বলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে জানা গেছে। এ পরিপত্রকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে গ্রহণ নির্মাণ ঋণ নীতিমালা, ২০১৯ নামে অভিহিত করা হয়েছে। এদিকে নিয়ম অনুযায়ী সরকারি চাকরিজীবীদের গৃহঋণের সর্বোচ্চ পরিমাণ হচ্ছে ৭৫ লাখ টাকা এবং সর্বনিম্ন ২০ লাখ টাকা। ঋণের বিপরীতে সুদের ওপর সুদ অর্থাৎ চক্রবৃদ্ধি সুদ নেয়া হবে না। কোনো প্রসেসিং ফি বা আগাম ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে কোনো অতিরিক্ত ফি দিতে হবে না। ঋণ পরিশোধের মেয়াদকাল সর্বোচ্চ ২০ বছর। সরকারি তফসিলি ব্যাংক এবং বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করবে।
গৃহনির্মাণ কাজের ওপর ভিত্তি করে মঞ্জুরিকৃত ঋণ সর্বোচ্চ চারটি কিস্তিতে বিতরণ করা হবে। আর রেডি ফ্ল্যাট অথবা জমিসহ তৈরী বাড়ির কেনার ক্ষেত্রে সব ঋণ এক কিস্তিতে দেয়া যাবে বলেও নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে। অনিবার্য কারণবশত মাসিক কিস্তি পরিশোধে দেরি হলে ওই দেরির জন্য আরোপযোগ্য সুদ শেষ কিস্তিুর সাথে যুক্ত হবে। এ ছাড়া গৃহ নির্মাণের ক্ষেত্রে প্রথম কিস্তিুর ঋণের অর্থ প্রাপ্তির সর্বোচ্চ এক বছর পর এবং ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে ঋণের অর্থ প্রাপ্তির সর্বোচ্চ ছয় মাস পর ঋণ গ্রহীতার মাসিক ঋণ আরম্ভ হবে। ঋণ পাওয়ার জন্য প্রণীত নীতিমালা অনুযায়ী প্রাইভেট প্লটের ঋণের জন্য আবেদনপত্রের সাথে বিভিন্ন দলিল জমা দিতে হবে।
এগুলোর মধ্যে রয়েছে জমির মূল মালিকানা দলিল; এসএ/আরএস রেকর্ডীয় মালিক থেকে মালিকানা স্বত্বের প্রয়োজনীয় ধারাবাহিক দলিল; সিএস, এসএ, আরএস, বিএস এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সিটি জরিপ খতিয়ান জাবেদা নকল; জেলা/সাবরেজিস্ট্রি অফিস কর্তৃক ইস্যু করা ১২ বছরের নির্দায় সনদ (এনইসি)। আর ফ্ল্যাট ক্রয়ের ক্ষেত্রে জমা দিতে হবে রেজিস্ট্রি করা বায়নাচুক্তি এবং ফ্ল্যাটের মালিকানা দলিল (বন্ধক দেয়ার আগে)। সরকারি/লিজ প্লটের জন্য ঋণ আবেদনের সাথে যে প্রমাণাদি জমা দিতে হবে সেগুলো হচ্ছে প্লটের বরাদ্দপত্রের ফটোকপি, দখল হস্তান্তরপত্রের ফটোকপি, মূল লিজের দলিল ও বায়না দলিলের ফটোকপি, ফ্ল্যাট ক্রয়ের রেজিস্ট্রি করা বায়নাচুক্তি, ফ্ল্যাটের বরাদ্দপত্র এবং ফ্ল্যাটের মালিকানা দলিল (বন্ধক দেয়ার আগে)।
এ ছাড়াও উভয় ক্ষেত্রে ঋণ আবেদনপত্রের সাথে জমা দিতে হবে নামজারি খতিয়ানের জাবেদা নকল, হাল সনের খাজনা রসিদ, জমির মালিক কর্তৃক ডেভেলপারের দেয়া রেজিস্ট্রি করা আমমোক্তারনামা দলিল, জমির মালিক এবং ডেভেলপারের সাথে রেজিস্ট্রি করা ফ্ল্যাট বণ্টনের চুক্তিপত্র, অনুমোদিত নকশার ফটোকপি, ফ্ল্যাটের মাটি পরীক্ষার রিপোর্টের ফটোকপি, সরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো নির্ধারিত ছকে ইমারতের কাঠামো নকশার ফটোকপি ও ভারবহন সনদ, ডেভেলপার কোম্পানির সঙ্ঘস্মারক, সঙ্ঘবিধি ও রিহ্যাবের নিবন্ধন সনদের সত্যায়িত ফটোকপি, ডিজাইন মোতাবেক কাজ করার ব্যাপারে ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানের দেয়া আন্ডারটেকিং, অন্য কোনো ব্যাংক/ আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ঋণ নাই মর্মে ডেভেলপারের দেয়া স্ট্যাম্প পেপারে ঘোষণাপত্র, আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্রের সত্যায়িত কপি, বেতনের সনদপত্র, সত্যায়িত ছবি ও সই। ঋণ নেয়ার জন্য সরকারের অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান মনোনীত করার আগে অর্থ বিভাগের গৃহঋণ সেলের অনুমতি নিতে হবে। তবে এ কার্যক্রম যখনই বাস্তবায়ন হোক না কেন বয়সসহ সব শর্ত গত ১ জুলাই থেকে বিবেচনা করা হবে।
কোনো সরকারি কর্মচারীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু এবং দুর্নীতি মামলার ক্ষেত্রে চার্জশিট দাখিল হলে মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এ নীতিমালার আওতায় তিনি ঋণ গ্রহণের যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন না। নীতিমালায় আরো বলা হয়েছে, কোনো কর্মচারী ঋণ নেয়ার পর স্বেচ্ছায় চাকরি ছাড়লে বা বাধ্যতামূলক অবসর, বরখাস্ত বা চাকরিচ্যুত হলে আদেশ জারির তারিখ থেকে ঋণের অবশিষ্ট মেয়াদের জন্য সুদ বাবদ সরকার কোনো ভর্তুকি দেবে না। এ ক্ষেত্রে ঋণের অপরিশোধিত অর্থ সংশ্লিষ্ট কর্মচারীর পেনশন সুবিধা বা আনুতোষিক সুবিধা থেকে আদায় করা হবে। ঋণগ্রহীতার মৃত্যু হলে তার পারিবারিক পেনশন ও আনুতোষিক সুবিধা থেকে যতটুকু সম্ভব ঋণ পরিশোধ করা হবে। এরপরও ঋণ পাওনা থাকলে উত্তরাধিকারদের কাছ থেকে তা আদায় করা হবে।
সূত্র: দৈনিক শিক্ষা
Leave a Reply