বরেন্দ্র নিউজ ডেস্ক:
লক্ষ্মীপুরে ৩০ বছর ধরে বিছানায় শুয়ে রয়েছেন বড় ভাই খোরশেদ আলম (৩০) এবং ১৪ বছর ধরে মানসিক প্রতিবন্ধী ছোট ভাই মোরশেদ আলম (২১) শিলকবন্দি কষ্টকর জীবনযাপন করছেন। বিভিন্ন উৎসবে সবাই যেখানে আনন্দ করে, তারা তখন ঘরের দরজা বন্ধ করে কান্না করেন।
লক্ষ্মীপুরে সদর উপজেলার চররুহিতা ইউনিয়নের ইছাগো তেমুহনী বাজারে খুচরা পান বিক্রেতা আজাদের ছেলে তারা। বড় ছেলে খোরশেদ আলম শারীরিক ও সাত বছর বয়স থেকে ছোট ছেলে মোরশেদ আলম মানসিক প্রতিবন্ধী।
অসুস্থ ছেলেদের নিয়ে পরিবারটি স্বাভাবিক জীবনযাপন থেকে বঞ্চিত রয়েছে।
তাদের ভবিষ্যৎ জীবন নিয়ে হতাশাগ্রস্ত পরিবার। মা-বাবা ছাড়া তাদের দেখাশোনার জন্য বিকল্প কোনো ব্যবস্থাও নেই বলে জানান স্থানীয়রা।
জানা যায়, প্রায় আট বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় পায়ে আঘাত পেয়ে ওই দুই যুবকের বাবা আজাদ রিকশা চালানোর ক্ষমতা হারান। এখন তিনি তেমুহনী বাজারে খুচরা পান বিক্রেতা।
প্রতিদিনের আয়ে জোড়াতালি দিয়ে কোনোরকম সংসার চলে তার। কিন্তু অসুস্থ ছেলেদের চিকিৎসার খরচ চালানোর সাধ্য তার নেই। এর মধ্যে তার দুই মেয়ে স্কুল-কলেজে অধ্যয়নরত।
সরেজমিন দেখা যায়, মানসিক প্রতিবন্ধী মোরশেদের পায়ে তিন ৪-৫ ফুট শিকল দিয়ে ঘরের চৌকাঠের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়েছে। প্রাকৃতিক ডাকে সাড়া দিলে ছেলেটিকে মা খুরশিদা বেগম একটি প্লাস্টিকের পাত্র এনে দেন। আর বড় ছেলে খোরশেদ বিছানায় শুয়ে চিৎকার করে।
জন্মের পর থেকে তিনি একদিনের জন্যও উঠে বসতে পারেনি। কথাবার্তা স্বাভাবিক থাকলেও বিছানায় দিন কাটছে তার। খরচ বহন করার সাধ্য না থাকায় কোনো চিকিৎসকের কাছেও নেয়া হচ্ছে না তাদের।
জানা গেছে, ছেলেমেয়েদের নিয়ে আজাদ সদর উপজেলার কামানখোলা এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন। তার কোনো সম্পত্তি ছিল না। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় উপজেলার চররুহিতা ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড চরলামচি গ্রামে ৪ শতাংশ জমি কেনেন। সেখানে একটি টিনশেডঘরে তারা বসবাস করছেন।
খোরশেদ ও মোরশেদের মা খুরশিদা বেগম বলেন, বড় ছেলেটি একটিবারের জন্য শোয়া থেকে উঠে বসতে পারেনি। কোলে করে তুলে এনে অনেক কষ্ট করে তাকে গোসল করাতে হয়। ছোট ছেলেটি জন্মের পর সাত বছর পর্যন্ত ভালো ছিল।
জানতে চাইলে তাদের বাবা আজাদ হোসেন বলেন, অসুস্থ ছেলেদের নিয়ে আমাদের অনেক কষ্ট করতে হচ্ছে। ঈদসহ বিভিন্ন উৎসবে আশপাশের মানুষ আনন্দ করে। কিন্তু ছেলেমেয়েদের নিয়ে আমাদের ঘরে বসে কান্না করতে হয়।
ভাইয়েরা আনন্দ করতে পারে না, বলেই আমার মেয়ে দুটিও ঈদে কোথাও যায় না।
হঠাৎ করে প্রায় ১৪ বছর আগে ছেলেটি মানসিক বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়ে। বিভিন্ন স্থানে চলে গিয়ে ফিরে আসতে পারে না। এ কারণে গত পাঁচ বছর তাকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। মোরশেদ যখন মা ডাকে, তখন আনন্দে মনটা ভরে ওঠে। কিন্তু আবার যখন অন্য নামে ডাকে তখন কান্না চলে আসে।
চররুহিতা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির পাটওয়ারী বলেন, পরিবারটির খোঁজ নেয়া হবে। তাদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফেরানোর জন্য উদ্যোগ নেয়া হবে।
এ ব্যাপারে সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা শফিকুর রেদোয়ান আরমান শাকিল বলেন, সরকারিভাবে ওই দুই ভাই প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছেন। তবে তাদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করাসহ ভবিষ্যতে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেয়ার আশ্বাস দেন তিনি।
যুগান্তর
Leave a Reply