একরামুল হক মুন্না, পঞ্চগড় প্রতিনিধিঃ বরেন্দ্র নিউজ
পঞ্চগড় সদর উপজেলায় কৃষকের হাতে আর দেখা যায় না কাঁধে লাঙ্গল জোয়াল, হাতে জোড়া গরুর দড়ি। এই ছিল এক সময় গ্রাম বাংলার চিত্র। ভোর হলেই বেরিয়ে পড়তেন গ্রামের কৃষক লাঙ্গল জোয়াল, হালের গরু নিয়ে জমি চাষের জন্য।
এক সময় এখানকার বিল ও গ্রামীণ পলিবাহিত উর্বর এই জনপদের মানুষদের কাক ডাকা ভোরে ঘুম ভাঙত লাঙল জোয়াল আর হালের গরুর মুখ দেখে। এখন যন্ত্রের আধিপত্যে সেই জনপদের মানুষদের ঘুম ভাঙে ট্রাক্টরের শব্দে। জমিতে বীজ বপন অথবা চারা রোপণের জন্য জমির মাটি চাষের ক্ষেত্রে হাল ব্যবহার করে আর ওই মাটি মাড়িয়ে সমান করার জন্য মই ব্যবহার করা হতো। কৃষিকাজের জন্য ব্যবহৃত অন্যতম পুরনো যন্ত্র। এই কৃষি জমি আবাদের উপযোগী করার জন্য ষাঁড় গরু, মহিষ প্রয়োজন হতো। লাঙল দিয়ে হাল চাষ করতে কমপক্ষে একজন লোক ও এক জোড়া গরু অথবা মহিষ প্রয়োজন ছিল। বাংলাদেশের হাজার বছরের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে লাঙল জোয়াল, মই, গরু ও মহিষ।
স্থানীয় প্রকৃত প্রবীণ কৃষকরা জানান, এক সময় পঞ্চগড়ে প্রায় প্রতিটি বাড়ির প্রতিটি ঘরেই ছিল গরুর লালন-পালন। গরুগুলো যেন পরিবারের এক একটা সদস্যের মতো। তাদের দিয়ে একরের পর এক জমি চাষ করার কাজে ব্যবহার করা হতো। তাজা ঘাস আর ভাতের মাড়, খৈলের ভুসি ইত্যাদি খাইয়ে হৃষ্টপুষ্ট করে তোলা হালের জোড়া বলদ দিয়ে জমি চষে বেড়াতেন কৃষক। পঞ্চগড়ে গ্রামে থাকা জমিগুলোতে এই চাষাবাদ করা হতো। হালচাষের জন্য ‘প্রশিক্ষিত’ জোড়া বলদের মালিককে সিরিয়াল দিতে হতো জমি চষে দেয়ার জন্য। চাষের মৌসুমে তাদের কদর ছিল অনেক।
পঞ্চগড় সদর উপজেলার ৬নং সাতমেড়া ইউনিয়নের মাঝিপাড়া এলাকার কৃষক মো.আকবর আলী বলেন, অনেকের জীবনের সিংহভাগ সময় কেটেছে চাষের লাঙল জোয়াল আর গরুর পালের সঙ্গে। গরু দিয়ে হালচাষ করলে জমিতে ঘাস কম হতো, হালচাষ করার সময় গরুর গোবর সেই জমিতেই পড়ত। এতে করে জমিতে অনেক জৈব সার হতো, এ জন্য ফসলও ভালো হতো। বর্তমানে আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতির ব্যবহার কৃষিক্ষেত্রে অনেক সাফল্য নিয়ে এসেছে স্বীকার করে।
পঞ্চগড় সদর উপজেলা
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারি কৃষি ইউনিয়ন কর্মকর্তা মোঃ গোলাম কিবরিয়া ও মোছাঃ মার্জিয়া এবং মোঃ রাজোয়ার বলেন, কম সময়ে জমি চাষ করতে গিয়ে পাওয়ার টিলার ব্যবহার হচ্ছে। পাওয়ার টিলার ও ট্রাক্টর মাটির গভীরে যেতে পারে। এটি দিয়ে জমি চাষ করা ভালো এবং আগের তুলনায় এখন ফসলের ভালো ফলন হচ্ছে। কৃষকরাও তাই এদিকে ঝুঁকছে বেশি।
Leave a Reply