বাগেরহাট প্রতিনিধি
বাগেরহাটে একদিনে ইউনিয়ন পর্যায়ে ৪৪ হাজার ৪৬৮ জন টিকা নিয়েছেন।
নির্ধারিত সময় শনিবার (০৭ আগস্ট) সকাল ৯টা থেকে বিকেল তিনটা পর্যন্ত
জেলার ৮১টি টিকাদান কেন্দ্রে নানা বয়সী মানুষ এই টিকা নেন। তবে সকাল
থেকে বৃষ্টি থাকলেও টিকা গ্রহিতাদের ভীড় ছিল চোখে পড়ার মত। দোড় গোড়ায়
টিকা কার্যক্রমে খুশি সাধারণ মানুষ। তবে কোন কোন কেন্দ্রে টিকাদানকর্মী
ও সাধারণ মানুষের ছিল নানা অভিযোগ। স্বাস্হ্য বিভাগ বলছে গণটিকা দেওয়ার
প্রথম দিনে যেসব অভিযোগ উঠেছে সেগুলো খতিয়ে দেখা হবে।
স্বাস্হ্য বিভাগের পৃর্ব ঘোষণা অনুযায়ী সকাল ৯টার মধ্যে বাগেরহাট শহরের
সরকারি পিসি কলেজ কেন্দ্রে নানা বয়সী মানুষ টিকা নিতে ভীড় করেন। লাইনে
দাড়িয়ে টিকা নিতে দেখা যায় সাধারণ মানুষকে। কোন প্রকার বিড়ম্বনা ছাড়া
টিকা নিতে পেরে খুশি স্থানীয়রা।টিকা নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে আফসারা বেগম বলেন, সরকার বাড়ির দোরগোড়ায়
করোনা টিকা কার্যক্রম শুরু করায় আমাদের উপকার হয়েছে। সকালে ঘুমের থেকে
উঠে এসে নিরিবিলি পরিবেশে টিকা নিয়েছি। আগে হাসপাতালে যেয়ে লম্বা
লাইনে দাড়িয়ে টিকা দিতে হচ্ছিল। সরকার ওয়ার্ড পর্যায়ে টিকা দেয়ায়
সাধারণ মানুষের দারুণ সুবিধা হয়েছে। সুষ্ঠু পরিবেশে টিকা নিতে পেরে
খুশি হয়েছি।
এদিকে বেলা সকাল ৯টায় কচুয়া উপজেলার বারুইখালী টিকাদান কেন্দ্রেও
স্থানীয়দের ভীড় থাকলেও নির্দিষ্ট সময়ে টিকাদান কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি তারা।
বেলা সাড়ে ১১টায় এই কেন্দ্রে টিকাদান দেওয়া শুরু হয়। এ কারণে অনেক সাধারণ
মানুষের মধ্যে ক্ষোভ অসন্তোষ সৃষ্টি হয়।
স্থানীয় টিকা গ্রহিতা ফারুক খান ও শোভন কবুলাসি বলেন, সকাল ৯টার দিকে
আমরা টিকাদান কেন্দ্রে এসেছিলাম।কিন্তু সাড়ে ১১টায় টিকা দেওয়া শুরু
হয়েছে। এই কারণে আমাদের অনেকক্ষন দাড়িয়ে থাকতে হয়েছে।
এই কেন্দ্রের তিন নম্বর বুথের টিকাদানকর্মী রাজিয়া সুলতানা বলেন, এই টিকা
দেওয়ার জন্য তাদের কোন আলাদা প্রশিক্ষন দেয়া হয়নি। স্বাস্হ্য বিভাগ থেকে মাস্ক,
হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও তুলা সরবরাহের কথা থাকলেও তারা তা পান নি। কেউ কেউ
ব্যাক্তিগত ভাবে মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও তুলা সংগ্রহ করেছেন। কিভাবে
কতটুকু টিকা দিতে হবে এটা না জানার কারণে আমাদের টিকা দিতে দেরি
হয়েছে। এত বড় জাতীয় কার্যক্রমে আমাদের আগে প্রশিক্ষন দিলে, এ ধরণের
বিড়ম্বনায় পড়তে হতো না। পাশাপাশি টিকা গ্রহিতাদেরও সময় বাঁচত।
রাজিয়া আরও বলেন, সব উপজেলায় স্বাস্হ্য সহকারীদের টিকা প্রদানের প্রশিক্ষন
দেওয়া হলেও, কচুয়ায় দেওয়া হয়নি। এই কারণে আমাদের মত স্বাস্হ্য কর্মীরা বিপাকে
পড়েছেন। শুধু এই কেন্দ্রে নয়, আরও কয়েকটি কেন্দ্রে একই ধরণের অভিযোগ ছিল
বিভিন্ন উপজেলায়।
এ বিষয়ে কচুয়া উপজেলা স্বাস্হ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মঞ্জুরুল
করিমকে ফোন করা হলে “নিয়ম অনুযায়ী সবকিছু সরবরাহ করা হয়েছে” বলে
ফোন কেটে দেন।
বাগেরহাটের সিভিল সার্জন ডা. কেএম হুমায়ুন কবির বলেন, সকাল থেকে
বৃষ্টির কারণে আমরা হতাশায় ছিলাম। যে আমাদের টিকাদান লক্ষমাত্রা অর্জিত হবে
কি না। তারপরও আমরা লক্ষ মাত্রার ৯৫ শতাংশ মানুষকে টিকা দিতে সক্ষম হয়েছি।
কোন কেন্দ্রে টিকার সংকট তৈরি হয়নি।
অভিযোগের বিষয়ে সিভিল সার্জন বলেন, দুএকটি কেন্দ্রে যেসব অভিযোগ
উঠেছে সেগুলো খতিয়ে দেখা হবে। দায়িত্বে অবহেলা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা
গ্রহন করা হবে। এছাড়া এই টিকাদান কার্যক্রম আমরা খুব সতর্কভাবে
পর্যবেক্ষন করেছি। এখানের ছোট খাট ভুল ত্রুটি পরবর্তী কার্যক্রমে সামলে নেওয়া
হবে।বাগেরহাট জেলায় বর্তমানে টিকাদান কার্যক্রমের অবস্থাঃ শুক্রবার ছাড়া
সপ্তাহে ৬দিন বাগেরহাট সদর হাসপাতাল ও জেলার ৯টি উপজেলা স্বাস্হ্য কমপ্লেক্সে
টিকা প্রদান চলছে। এ পর্যন্ত বাগেরহাটে ৪০ হাজার ৫০০ মানুষকে দুই ডোজ
টিকা দেওয়া হয়েছে। এক লক্ষ ৭০০ মানুষকে প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে। নিয়মিত
টিকাদান কার্যক্রমের জন্য ১৮ হাজার টিকার মজুদ রয়েছে।
Leave a Reply